Home » কলকাতা বিনোদন জগতে এখন ”কম্প্রোমাইস” এর প্রস্তাব বেশী !!! জানালেন – অভিনেত্রী “রাই দেবলীনা”

কলকাতা বিনোদন জগতে এখন ”কম্প্রোমাইস” এর প্রস্তাব বেশী !!! জানালেন – অভিনেত্রী “রাই দেবলীনা”

এই মুহুর্তে কলকাতা বিনোদন জগতে বেশ পরিচিত মুখ “রাই দেবলীনা”। বর্তমানে তাকে আমরা দেখতে পাই ষ্টার জলসার ” বিক্রম বেতাল” ধারাবাহিক ও Platform 8 OTT-র “আনন্দ আশ্রম” ওয়েব সিরিজে। এছাড়াও “রাই দেবলীনা” এখন পরিচিত মুখ Dhoom Music চ‍্যানেলের VJ হিসাবে।

কলকাতা বিনোদন জগতে কাজ করার শুরুর দিন থেকে করোনা কালের পর ঠিক কেমন ছিল রাই দেবলীনার কেরিয়ারের লড়াই ? সেই নিয়েই কথা হল রাই দেবলীনার সাথে। কলকাতার ঝকমকে, রঙিন বিনোদন জগতের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা কদাকার বাস্তব রুপটা তুলে ধরলেন রাই দেবলীনা।

বর্ধমান, কালনার এক বর্ধিষ্ণু পরিবারের মেয়ে “রাই দেবলীনা”। বাড়ীর প্রত‍্যেকেই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এবং পাশাপাশি অন‍ান‍্য কলা জগতেও যথেষ্ট আগ্রহী। তাই আর পাঁচ টা মেয়ের মত অষ্টম ও নবম শ্রেনীতে শিখেছিলেন হারমোনিয়ামের বাজিয়ে সঙ্গীত চর্চা। বিনোদন জগতে আসার জন‍্য নয়। বিনোদন জগতে এসে পড়াটাই বরং কাকতলীয়।

২০১৩ সালে, ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন রাই দেবলীনা। কিন্তু কলেজ থেকে ক‍্যাম্পাসিং না করানোর জন‍্য শুরু হয়েযায় আর এক ছাত্র আন্দোলন। নিজেকে ঝামেলায় না জড়িয়ে আবার কেরিয়ারের দিকে মন দেন রাই দেবলীনা। তখনই এক বান্ধবীর কাছে জানতে পারেন একটি থিয়েটার দল একজন নায়িকা খুজছে যে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতে পারে। মাসে ১০০০০ টাকা পারিশ্রমিক। সেই সময়ে এই টাকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অর্থাঙ্ক।

সাময়িক ভাবেই যোগদান করেছিলেন। পথ নাটিকা করতেন, করতেন ষ্টেজ শো। এখানেই দর্শকদের ভালোবাসা আর মঞ্চে অভিনয় করার নেশা টা অভ‍্যাসে পরিনত হয় অজান্তেই যা তিনি অনুভব করেন, যখন কলকাতা বিনোদন জগতের অন‍্যতম খ‍্যাতনামা প্রডাশন SVF অর্থাৎ শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস থেকে ডাক পান। ধারাবাহিক “মন নিয়ে কাছাকাছি ” তে অভিনয় করেন বেশ কিছুদিন। এছাড়াও মডেলিং বা ফটোশুটের কাজ তো ছিলই।

কিন্তু এর পরেই শুরুহল “নোটবন্দি” । হঠাৎ করেই বাজার থেকে 500 ও 1000 টাকা তুলে নেওয়া হল দেশজুড়ে। এই নোটবন্দি বহু মানুষের জীবিকায় আঘাত শানিয়েছে। কলকাতা বিনোদন জগত তার বাইরে যায়নি। নতুন দু হাজার টাকার নোটে “মাইক্রোচিপ” লাগানোর স্বার্থপর রাজনৈতিক গুজবে আতঙ্কিত হয়ে প্রযোজকরা প্রযোজনা থেকে সরে দাড়াতে শুরু করলেন। এক এক করে কাজের সংখ্যার সাথে কমতে থাকলো পারিশ্রমিকের অঙ্ক। সাময়িক ভাবে অন‍্য চাকরীতে যোগদান করলেও সেখানেও একই সমস‍্যার সম্মুখীন হয়ে সে চাকরী বেশিদিন করতে পারেননি রাই দেবলীনা। কিন্তু এর পরেই আবার এলো করোনা মহামারী। “নোটবন্দি”-র রেশ কাটতে না কাটতেই এসে গেল মানুষকে “গৃহবন্দি” করার মহামারী। এবার স্তব্ধ হল পৃথিবী। প্রানহানীর সাথে সাথে মানুষ তাদের সামান‍্য সঞ্চয় টুকুও হারালেন। বন্ধ হয়েছে বহুজাতিক সংস্থা গুলি। বিনোদন জগতেও হাহাকার কারন এখানে কাজ করলেই পারিশ্রমিক না করলে নয়। করোনা প্রকোপ শেষ হতেই সামনে আসতে থাকলো বিভিন্ন OTT মোবাইল অ‍্যাপ। শুরু হতে থাকলো ওয়েব সিরিজ গুলি যা মানুষের পছন্দের তালিকায় যোগহল কিন্তু বদলে গেল কাজের পরিবেশ।

এবার নতুন প্রযোজক পরিচালকের সংখ্যাটা বেড়েগেলেও দেখা দিল নানান সমস‍্যা। প্রথমেই সার্বিক ভাবে দেখা দিল “বাজেট কম” অর্থাৎ কম পারিশ্রমিকে অভিনয় বা মডেলিং করতে হবে। কলকাতায় একটি বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং শুটের পারিশ্রমিক ধার্য করা হচ্ছে ১৫০০ টাকা যা অন‍্য রাজ‍্যে কমপক্ষে ৬০-৭০ হাজার। অন‍্যদিকে অভিনয় জগতে বেড়ে গেল “কম্প্রোমাইস” এর অফার। অর্থাৎ প্রযোজক বা পরিচালক কে “বিশেষ ভাবে” খুশি করতে তাদের সাথে হোটেলে বা কোথাও নিরিবিলিতে শয‍্যা সঙ্গীনী হতে হবে তাহলেই যে প্রযোজনার বাজেট ছিলনা তার বাজেট তৎক্ষনাত ৫০-৬০ হাজার টাকা বেড়ে যাবে বা যায়।
রাই দেবলীনা জানালেন এই সমস‍্যার সম্মুখীন শুধু নারী অভিনেত্রীরাই নন। বর্তমানে বাংলায় বহু “গে” পরিচালক / প্রযোজক বা কাস্টিং ডিরেক্টর আছেন যারা পুরুষ অভিনেতা বা মডেল দের এই অফার করে থাকেন আর তা অনেকেই মেনে নিতে বাধ‍্য হন কাজ আর টাকার জন‍্যই।

এছাড়াও রাই দেবলীনা জানালেন বিনোদন জগতে ভাইরাল হয়ে যাবার তিক্ত অভিজ্ঞতা। যখন বিখ্যাত ইউটিউবার স‍্যান্ডি সাহা সঠিক ভাবে না জেনেই সামাজিক মাধ‍্যমে প্রচার করেন রাই দেবলীনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। কি আসলে কি হয়েছিল জানতে চাওয়ায় রাই দেবলীনা বলেন, “সেদিন আমি একটু অসুস্থ ছিলাম সাথে পায়ে ব‍্যাথার একটা সমস‍্যা ছিল। তার চিকিৎসক তাকে একটি জোরালো ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন যেটি তিনি খাবার পরে তিনি গভীর নিদ্রায় ঢলে পড়েন। ঘটনাচক্রে তার মোবাইল ফোনটি অফ থেকে যাওয়ার ফলে অনেকেই তাকে যোগাযোগ করতেও পারছিলেন না। এরপরেই ভূল রটনা রটে যায়। বর্ধমান থেকে তার বয়স্ক বাবা মা সহ পরিবারের অন‍্য সদস‍্যদের পুলিশ ডেকে পাঠিয়ে বেশ হ‍্যানস্থা করে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও যেহেতু তার আত্মহত্যার খবর রটেছিল তাই তিনি তার মেডিক্লেমের টাকাও পাননি। প্রায় নগদ দেড় লক্ষ টাকা হাসপাতাল কে গুনে দিতে হয়েছিল।

যারা নতুন বিনোদন জগত বা মডেলিং কে পেশা হিসাবে নিতে চাইছেন তাদের কে কি উৎসাহ বার্তা দেবেন?

রাই দেবলীনা বলেন, আমি নিজেও একদিন নতুন ছিলাম, আমার পরিবারের কেউই কোনদিন এই জগতের কেউ ছিলেন না। আমিই প্রথম। ইদানিং কালে প্রায় ৮০% মহিলা বা পুরুষ এই জগতে পেশাগত ভাবে আসতে চাইছেন সেটা আসুক তবে প্রফেশনাল মানসিকতা নিয়ে। অনেকেই কাজ পাবার সুবিধার্থে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন বা ভবিষ্যতে বড় বা ভালো কাজের অফার পাবে শুনেই শয‍্যা সঙ্গীনী হয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়েই ভাবতে হবে কারন বিনোদন জগতে জালিয়াতির অভাব নেই। আমি বারন করলেও যে কম্প্রোমাইস বন্ধ হবে তাও নয়। এ এক আদিম বদ অভ‍্যাস যা আগে প্রস্তাব দিতে গেলে বা প্রস্তাবে সম্মতি দিতে মানুষ বহুবার ভাবতো। এখন টাকা আর বিনোদন জগতের মেকি উজ্জ্বলতার আলোয় অন্ধ হয়ে এসব নিয়ে আর কেউ তেমন ভাবে না।
যদি সঠিক মানুষ হন যিনি সত‍্যিই কাজ দেবেন বা দিতে পারেন তবেই তার সাথে সক্ষতা করা উচিত। তবে কম্প্রোমাইজ আজ এতটাই বেড়ে গেছে যে আমাদের এই জগত টাকে বহু মানুষ খুব খারাপ চোখে দেখেন যা আমার শুনতে বেশ কষ্ট হয় মেনে নিতে পারিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!