Home » কাল্পনিক কাহিনি, সত‍্য ঘটনা অবলম্বনে Mrs Chatterjee Vs Norway | এত মিথ‍্যা কেন?

কাল্পনিক কাহিনি, সত‍্য ঘটনা অবলম্বনে Mrs Chatterjee Vs Norway | এত মিথ‍্যা কেন?

অনেকদিন পরে রানি মুখার্জী ফিরলেন সোনালী পর্দায় তার অভিনয়ের জাদু দেখাতে। ইচ্ছা ছিল, তার অভিনীত মর্দানী-র মত ভারতীয় লড়াকু একটি নারী চরিত্রে অভিনয় করে বাঙালি তথা আপামোর দেশবাসীর মন জয় করা কিন্তু ডাহা ফেল করলেন পরিচালকের দায়ে।

২০১২ সালে, নরওয়েতে এক বাঙালি দম্পতি ( Anurup Bhattaharya and Sagarika Chakroborty ) -র থেকে নরওয়ে সরকারের শিশু সুরক্ষা দফতর অযত্ন ও বেঠিক পরিচর্চার অভিযোগে ( নরওয়ে আইন অনুযায়ী ) শিশুদুটিকে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়। সেই সময় শিশুদুটিকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে অগ্রনীয় ভুমিকা নিয়েছিলেন সমাজ কর্মী রাজীব সরকার। শিশুদুটি কে দেশে ফেরাবার জন‍্য পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলে, নরওয়ে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক কুটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন রাজীব সরকার যা নিয়ে আমরা আগেই আইনি তথ‍্য সহ প্রতিবেদন করেছি। আজও নরওয়ে শহরে এই একই নির্মমতার দায়ে বহু প্রবাসী ও স্থানীয় নরওয়েজিয়ান পরিবারের থেকে তাদের শিশু সন্তানদের কেড়ে নেওয়ার রেওয়াজ চালু আছে। এমনকি তারা শিশুদের হস্তান্তর করার স্থানীয় কোর্টের আদেশকেও গুরুত্বদেন না। এতটাই কঠিন পরিস্থিতি থেকে শিশুদুটিকে ভারতে আনার যে কুটনৈতিক বিশ্বযুদ্ধ করেছিলেন রাজীব সরকার সহ অনেকেই তা সম্পূর্নভাবে এড়িয়ে গিয়ে কাহিনীকার সাগরিকা চক্রবর্তী, প্রখ‍্যাত অভিনেত্রী রানি মুখার্জীর অভিনয়ের মাধ‍্যমে নিজেকে ” Mother India” গড়ে তোলার চেষ্টা করলেন তা কতটা সফল?

যদিও ধ্বজাধারী প্রথম সারির সংবাদ মাধ‍্যম গুলি এবং তার উপযুক্ত সাংবাদিকরা ইতিমধ্যেই এই চলচ্চিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমূখ হয়েছেন কোন এক অদৃশ‍্য কারনে ঠিক যেভাবে বর্তমানে বাংলার লিডিং নায়ক বনি সেনগুপ্তকে ইডির জেরার পর আবারও তুলে ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু আমরা গতকাল সিনেমাতেই পেলাম অজস্র ভূল যা মানুষ ফুচকা বানিয়ে গপাগপ গিলে খাচ্ছেন কোন কিছু না ভেবেই।

দেখে এলাম মিসেস চ‍্যাটার্জী ভার্সেস নরওয়ে। ২০১১-১২ সালে ঘটে যাওয়া “এই সত‍্য” ঘটনা কে চলচ্চিত্রের মাধ‍্যমে দেখানো হল মিথ‍্যার মোড়কে। এই সিনেমার ট্রেলার লঞ্চের দিন থেকেই একমাত্র আমরাই তথ‍্য সহ সত‍্য নিয়ে মানুষের সামনে রাখি।
ইতিহাসের বহু ঘটনা নিয়ে বহুবার সিনেমা হয়েছে কারন মানুষ সিনেমা দেখে মনোরঞ্জনের জন‍্য এবং তা বিশ্বাস করেন হৃদয় থেকে। তাদের প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী যা অভিনয় করে দেখাচ্ছেন যেন সেটাই সত‍্যি যা অনেক সময়েই আদৌ সত‍্য নয়। আজ মিসেস চ‍্যাটার্জী ভার্সেস নরওয়ে সিনেমার সমালোচনায় দ‍্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস।

গুগল অনুযায়ী মিসেস চ‍্যাটার্জী ভার্সেস নরওয়ে চলচিত্রের বাজেট ২৫ কোটি টাকা। বলিউড ফিল্ম অনুযায়ী এটা খুব স্বাভাবিক একটা বাজেট কারন সেই অর্থে অ‍্যাকশন বা ভি এফ এক্সের ব‍্যাবহার নেই। সঙ্গীতের তেমন কোন প্রভাব এই চলচিত্রে দেখা যায়নি। ২৫ কোটি টাকার এই চলচ্চিত্র টি দেখে মনে হল, এক তরফা ভাবে একটি বাঙালি পরিবার কে ( বাস্তবের অনুরুপ ভট্টাচার্যের পরিবার কে) পৃথিবীর বুকে সব থেকে নিচু করে দেখানো আর “একার” কৃতিত্ত্ব দেখানোর জন‍্যই এই সিনেমা তৈরী করা হয়েছে। সিনেমা টির Disclaimer এ বলা হল সিনেমার বেশ কিছু অংশ কাল্পনিক আবার সিনেমার টাইটেল কার্ডে বলা হল সত‍্য ঘটনা অবলম্বনে। দর্শকদের এবং ভারতীয় ন‍্যায় বিভাগ কে এই ভাবে বিভ্রান্ত করার কারন কি বুঝলাম না।

অভিনেত্রী রানি মূখার্জীর অভিনয় ছিল একেবারেই অনবদ‍্য। প্রতিটা ফ্রেম জুড়ে নিজেকে রাখতে হয় কিভাবে তা তিনি অনেক আগেই রপ্ত করেছেন বলেই বলিউড ফিল্ম দুনিয়া ও বিশ্ব-জুড়ে তার খ‍্যাতি। রানি মুখার্জীর পাশে অনির্বানের অভিনয় বেশ দূর্বল বলেই মনে হয়েছে, অন্তত রানির মত ফ্রেম জুড়ে থাকতে পারেননি। রানি মুখার্জীর পাশে তার স্বামীর চরিত্র হিসাবে অনির্বান কে বয়সে ছোট মনে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে  চিত্র পরিচালক কেন প্রসেনজিৎ চট্টপাধ‍্যায় বা নিদেনপক্ষে জীশু সেনগুপ্ত কে সুযোগ দিলেন না তা বুঝলাম না। প্রসেনজিৎ ও জীশু দুজনেই বলিউড চলচ্চিত্রে বর্তমানে কাজ করছেন। বয়সের ফারাক টা বোঝা যেতনা। চলচ্চিত্র জগতে, অভিনয়ে অনির্বান এদের থেকেও কি অনেকটা এগিয়ে? নাকি অনির্বান কে ইদানিং গরীব বাঙালীর সস্তার আলপাচিনো, যাকে দিয়ে অভিনয় করালে বাঙালী গল্পটা চোখবুজে বিশ্বাস করবে তাই? নাকি অনির্বান পারিশ্রমিক কম নেন?

রানি মুখার্জী বাঙালী এবং বাংলা ভাষায় সাবলীল, বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন।  পরিচালক অসীমা ছিব্বার কেন যে রানি মুখার্জী কে দিয়ে কখনও পরিস্কার বাংলা বলালেন আবার কখনও অবাঙালী দের মতো ভাঙা ভাঙা বাংলা বলালেন তা পরিস্কার হলোনা?

বাস্তবিক ঘটনায় নরওয়ে তে আটকে পড়া শিশু দুটির মধ‍্যে বড়টি অর্টিজম রোগে আক্রান্ত। এই চলচ্চিত্রে তাকে বেশ কয়েক বা সেকথা উল্লেখ করলেও তাকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখানো হল, কেন?

একটি অংশে দেখানো হল, রানি মুখার্জী বাচ্ছা দুটিকে ফোসটার পরিবারের থেকে চুরি করে সুইডেন পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। বাস্তবে এরকম কোন ঘটনা ঘটেইনি। এই “সত‍্য ঘটনা অবলম্বনে” সিনেমার কাহিনীকার বা পরিচালক এর কোন আইনি তথ‍্য বা প্রমান দিতে পারবেন?

বাচ্ছা দুটি ভারতে ফিরে আসার পর, বাচ্ছার বাবার পরিবার লেঠেল বা গুন্ডা দিয়ে শিশুদুটির মা ও তার পরিবারকে দেখা করতে গেলে বাড়ির গেট থেকে তাড়িয়ে দেবার কোন আইনি প্রমান দেখাতে পারেন পরিচালক?

নরওয়ে থেকে ভারতে বাচ্চা দুটি ফেরানোর শর্ত ছিল শিশুদুটি তাদের কাকার সাথে বাবার পরিবারে প্রতিপালিত হবে, মা তাদের সাথে থাকতে পারবেন না সেরকম তো কোন উল্লেখ ছিলনা। তাহলে ভারতে ফিরে রানি মুখার্জী তার বাপের বাড়ি থাকছেন কেন দেখানো হল?

নরওয়ে সরকার বাচ্চাদের কাকা কে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছে তা কি আদৌ সত‍্য? বাস্তবে কোন প্রমান কি দেখাতে পারবেন পরিচালক?

সিনেমাতে নরওয়েতে আইনি বিতর্কের পর ভারতে বাচ্চারা ফেরার সময় কেন বাচ্চাদের বাবা অনির্বান ভারতে ফিরলেন না? রানি মুখার্জীর সাথে অনির্বান ভট্টাচার্যের এই নিয়ে কোন বিশেষ সংলাপ কেন দেখানো হলনা?
( অথচ বাস্তবে আইনি অনুমতি ছাড়াই, বাচ্চাদুটির মা বাস্তবের সাগরিকা দেবী ও তার পরিবার কোন এক অদৃশ্য শক্তির সাহায্য নিয়ে তিন ভ‍্যান পুলিশ নিয়ে গিয়ে জোর করে বাচ্চাদের কেড়ে নিয়ে ছিলেন কাকা ও বাবার পরিবার থেকে এবং তার বাস্তবিক প্রমান দেখা যায় এই মামলায় দেওয়া জাষ্টিস দীপঙ্কর দত্তের রায়ে। সেখানে জাষ্টিস দীপঙ্কর দত্ত সাগরিকা দেবীর এই ভাবে পুলিশি অত‍্যাচার করে বাচ্চা কেড়ে নেওয়া নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করেছিলেন এবং সেই সময় পুলিশকেও যথেষ্ট ভৎসনা করেছিলেন। )

একটি দৃশ্যে শিশুদুটির বাবার সাক্ষ‍্য ইন্টারনেট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ‍্যমে নেওয়া হচ্ছে যখন, তখন নরওয়ে থেকে সেই দেশের আইনজীবী কেন টাকা খরচ করে কলকাতায় এসে মামলা লড়তে গেলেন? তিনিও ভিডিও কনফারেন্সেই মামলা লড়তে পারতেন। তিনি কি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখতে এসে ছিলেন?

শিশুদের অধিকার দখলের মামলা চলাকালীন কি আদৌ নরওয়ে থেকে নরওয়ে সরকারের হয়ে কোন আইনজীবী কলকাতায় মামলা লড়তে এসেছিলেন? (কারণ বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের কোন অর্ডারে এমন কোন কথা লেখা নেই। )

সিনেমা টিতে দেখানো ও বোঝানো হল, শিশুদুটির বাবা সব সময় নিজের স্বার্থে টাকা বোঝেন এবং সর্বদাই নরওয়ে শহরে নিজের চাকরি ও সিটিজেনশিপ বাঁচিয়ে রাখতে আগ্রহী। সেটাই সত‍্য হলে তো একজন বাঙালী নারী কে না বিয়ে করে নরওয়েজিয়ান কোন মহিলাকেই তিনি বিবাহ করতেন।

আরো কয়েকবার দেখলে আরো ভুল বেরোবে। পরিচালক হয়তো না বুঝেই বা হয়তো কোন “বাসুধা কামাদ” এর পরামর্শে এই চলচ্চিত্রের মাধ‍্যমে একটি পরিবার কে দেশ ও সমাজের চোখে নিচু করার জঘন্যতম ষড়যন্ত্র করে ফেলেছেন। আর যারা বলেন এই সিনেমাটি বোঝার জন‍্য মা হওয়া প্রয়োজন তাদের জন‍্য আমরা বলবো এই বিষয় টি বোঝার জন‍্য “নির্যাতিত পুরুষ” হওয়া প্রয়োজন। দেশে লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইন প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!