Home » নামটা অমৃতপাল সিং বলেই কি বিজেপির আইটি সেল চুপ? রহিম হলে গল্পটা অন্য হতেও পারত!

নামটা অমৃতপাল সিং বলেই কি বিজেপির আইটি সেল চুপ? রহিম হলে গল্পটা অন্য হতেও পারত!

মনুসংহিতাকে হৃদয়ে ধারণ করা RSS-র লক্ষ্যপূরণের পথে একটা কোন‌ও কল্পিত প্রতিপক্ষ সবসময়ই দরকার। তাই ইসলাম বিপক্ষে না থেকেও, এদেশে বসবাস করা মুসলমানদের অটোমেটিক চয়েজ হিসেবে তাঁদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতেই হয়। সেই একই নিয়মে শত অন্যায় অপরাধ করলেও লিঙ্গায়েত ধর্মগুরু বা খলিস্তান পন্থী শিখ নেতার জন্য তাঁদের ধর্মকে কাঠগড়ায় উঠতে হয় না। অমৃতপাল সিংদের তখন ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন করে একক সত্ত্বায় দেখানোর চেষ্টা হয়।

এক্ষেত্রে ভুল কিছু হয় না। কারণ কোন‌ও একজন বা গুটিকয়েক লোকের একটি গোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদী কাজ করলে গোটা সম্প্রদায় অপরাধী হয়ে যায় না। কিন্তু কাশ্মীরের বুরহান ওয়ানি বা মুম্বই থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া দাউদ ইব্রাহিমের জন্য গোটা মুসলমান সমাজকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। দিন আনি দিন খাওয়া ধর্মভীরু কোটি কোটি মুসলমান জানেনও না ডি-কোম্পানির নেটওয়ার্ক কীভাবে বিস্তৃত, সেখানে কী কাজ হয়। তবুও তাদেরকেও একই দৃষ্টিতে কাঠগড়ায় তুলে দেয় আরএসএস-বিজেপি নিয়ন্ত্রিত মৌলবাদী পক্ষ। যা ভাইরাসের মত কোটি কোটি সাধারণ মানুষের মগজকে গিলে খেয়ে বুঝতে শিখিয়েছে- মুসলমান মানেই সমস্যা!

অমৃতপাল সিং কি বিজেপির বন্ধু? মোটেও নয়। খলিস্তান আন্দোলনের প্রতি কি আরএসএসের সহানুভূতি আছে? কস্মিনকালে ছিল না, আজ‌ও নেই। বরং ভারতীয় উপমহাদেশকে এক করে গেরুয়া শিবির যে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ মার্কা অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখে তা ভণ্ডুল করে দেওয়ার ছক কষেন এই জার্নাল সিং ভিন্দ্রাওয়ালে, অমৃতপাল সিং-রা। ফলে নিজেদের জাতীয়তাবাদের ধ্বজাধারী বলে দাবি করা বিজেপি ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা মোটেও অমৃতপালদের প্রতি সহানুভূতি প্রবণ নন।

তবু অমৃতপালরা, যতই বিচ্ছিন্নতাবাদের দ্বেষ ছড়ান না কেন তাঁদের জন্য ভুগতে হয় না এদেশের শিখ সম্প্রদায়কে। কারণ আরএসএস ও বিজেপির উগ্র জাতীয়তাবাদের নামধারী ‘ফ্যাসিস্ট’ আদর্শকে সফল করতে হলে কোন‌ও এক কাল্পনিক প্রতিদ্বন্দ্বীর খুব প্রয়োজন। সেটা হতে পারত দেশের কমিউনিস্ট শক্তি। কিন্তু তাদের ক্ষমতা বা প্রভাব এতটাই সীমাবদ্ধ যে লাল ঝান্ডাকে ঠিক উল্টোদিকে খাড়া করে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত বা মধ্যপ্রদেশের মত রাজ্যে জাতীয়তাবাদের ঢেউ তোলা খুব কঠিন। সেখানে ধর্মীয় মৌলবাদকে হাতিয়ার করে বাকি সম্প্রদায়গুলির মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষের বিষ বুনে দিলে ব্যাপারটা খুব সহজ হয়ে যায়। আর হাতের চাঁদের মত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাম যেহেতু পাকিস্তান, তাই গোটা ব্যাপারটাই রূপায়ন করতে সোনায় সোহাগা অবস্থা!

গেরুয়া শিবির এই লক্ষ্য পূরণের পথে অপ্রিয় তেতো গেলার মত করে কৌশলগত কারণে শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের প্রথম পর্যায়ে হজম করে নিচ্ছে। এখন সেই পর্বটা চলছে। তাছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশে যে কটি ধর্মমতের উদ্ভব ঘটেছে তাদের সবাইকে মোহন ভগবতরা বৃহৎ হিন্দু পরিবারের অংশ বলেই তুলে ধরেন। সে যতই লিঙ্গায়েত, সারনা ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের পৃথক ধর্মমতের স্বীকৃতির দাবিতে লড়াই করুন না কেন, নাগপুরের অবস্থানই হল, সবাই হিন্দু পরিবারেরই অংশ। শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, আদিবাসী, লিঙ্গায়েত এদেরকে আলাদা হতে দেওয়া যাবে না। তাতে ‘হিন্দু’ পক্ষের দাপট কমবে। এটাও আসলে রণকৌশল। তাছাড়া এত বিভাজন মেনে নেওয়া মানেই প্রতিপক্ষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ভিশন এলোমেলো হয়ে যাওয়া। অথচ প্রতিপক্ষ যত একমুখী হবে, অর্থাৎ ইসলামকেই কেবল নিশানায় রাখা গেলে লক্ষ্য পূরণে জনসমর্থন আদায় সহজ হবে।

তাছাড়া শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সঙ্গে তথাকথিত হিন্দু ধর্মের রীতিনীতির অনেক মিল থাকায় এদের প্রতিদ্বন্দ্বিক খাড়া করলে, তা গড়পড়তা সাধারণ মানুষকে গেলানোটা কঠিন‌ও হবে আরএসএস-এর পক্ষে।

যদিও বিজেপির এই ছক ওই বাকিরাই মানেন না। তাঁরা স্বকীয়তায় প্রবলভাবে বিশ্বাসী। কিন্তু নিজের ফায়দার জন্য প্রাথমিক দু’ঘা খেয়ে নিতেও রাজি গেরুয়া শিবির! আর তাই আধুনিক, অতি শক্তিশালী ভারতে অমৃতপাল সিং তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে কার্যত সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করলেও প্রবল প্রতাপান্বিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বেলায় কোন‌ও সম্প্রদায়কে নিশানা করেন না!

অমৃতপাল সিং-র বেলায় অমিত শাহ যে ঠিকটা করেন সেই ঠিকটা খান, রহমতুল্লাহ, আলিদের বেলাতেও করলে দেশে অসহিষ্ণুতার মাত্রা এত বেড়ে যেত না। বিপন্ন হত না ভারতীয় সংবিধানের মূল আদর্শ। অবশ্য সেই আদর্শেই যে বিশ্বাস রাখেন না মোদি-শাহ-ভগবত’রা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!