Home » মৃত্যুর পরের জীবন – গরুর পুরান কি বলে ?

মৃত্যুর পরের জীবন – গরুর পুরান কি বলে ?

গরুড় পুরাণ অনুযায়ী মানুষের কর্মফল ঠিক করে যে তার আত্মা স্বর্গে যাবে না নরকে যাবে। মৃত্যু এক পরম সত্য তাই কোন আত্মা স্বর্গে যাবে বা নরকে যাবে সেটি গরুড় পূরাণ-এ বিস্তারিত আলোচলা করা আছে।

পক্ষীরাজ গরুড় শ্রী হরির কাছে জিজ্ঞেস করছে মৃত্যুর কত দিন পর আত্মা যমলকে যায়। শ্রী হরি তখন পক্ষীরাজ গরুড়কে বলেন মৃত্যুর ৩৬ দিন পরে সেটি ঠিক হয়ে থাকে। মৃত্যুর সময় ব্যক্তির কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে যায়, তার শ্বাস রোধ হয়ে আসে। তখন সে এক দিব্য দৃষ্টিতে সমগ্র সৃষ্টিকে এক সমান দেখতে পায়।

পুরাণ অনুযায়ী সে আত্মা দেহ থেকে চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে আসে। সেই আত্মাকে নিয়ে যেতে এক নয় দুজন যমদূত আসে। তারপর সেই আত্মা এর গলায় ফাঁস বেঁধে দেওয়া হয়।

এই পুরাণ বলছে যদি কোনো আত্মা পবিত্র হয়ে থাকে তখন তাকে স্বয়ং পরম আত্মার বাহন নিয়ে যেতে আসে। এবং যদি আত্মা পাপী হয় তখন তাকে অন্ধকার রাস্তার মধ্যে দিয়ে গরম বালির ওপর দিয়ে যেতে হয়, তাকে সেদিন তার ঘরে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে তার অন্তিম কাজ দেখে। এবং ১২ দিন সে তার পরিবার এর মধ্যেই থাকে, ১৩ দিনে যখন তার পিন্ড দান হয়ে যায় তখন যমদূত তাকে আবার নিয়ে যেতে আসে।

গরুড় পুরাণ অনুযায়ী আত্মা যদি স্বর্গ প্রাপ্তি করে তখন তার পক্ষে তার পরের রাস্তা সহজতর হয়ে থাকে কিন্তু যদি নরক প্রাপ্তি করে তখন সেই আত্মাকে বৈতরণী নদী হয়ে যেতে হয়। সেটি গঙ্গারই এক ভয়ংকর রূপ। এই নদীর জল লাল রঙের এবং আগুনের লাভা সংমিশ্রিত। আত্মা যদি খুবই পাপী হয় তখন সেই আত্মাকে আগুনের ওপর দিয়ে টেনেটেনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই আত্মা তখন তার শরীর আগুনে পুড়ে যাচ্ছে কেউ তার শরীরকে কামড়াচ্ছে, খামচাছে, ক্ষত-বিক্ষত  করছে এমন অনুভব সে করে থাকে। কিন্তু সেই আত্মা যদি একটুও পুণ্য করে থাকে তখন তাকে বাহনের ওপর নিয়ে যাওয়া হয়।

বৈতরণী নদী খুবই ভয়ংকর, সেখানে যখন কোনো পাপী আত্মা এর ওপর দিয়ে পার হয় সে তখন খুবই ভয়ভীত হয়। এই নদী রক্তরূপী জলের দ্বারা এবং মাংস, ময়লা আবর্জনা দ্বারা পরিপূর্ণ। এর ওপর দিয়ে যখন কোনো পাপী আত্মা যায় তখন সেই নদী ভয়ঙ্কর স্বরূপ ধারণ করে। এই নদীতে ঘরিয়াল, বজ্রদন্ত এবং নানা রকম মাংস ভক্ষণকারী হিংস্র জলচরের দ্বারা পরিপূর্ণ। যখন কোনো পাপী ব্যক্তির আত্মা এর ওপড় দিয়ে যায় তখন তার ১২ গুন বেশি ভুগর্বস্থ তাপমাত্রায় জ্বলতে থাকে। তখন সেই তাপের ফলে সেই পাপী আত্মা নিজের লোকেদের চিৎকার করে ডাকতে থাকে, এবং এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। যখন সে আর তাপ সহ্য করতে পারে না তখন সে বৈতরণী নদীর জলে ডুব দিয়ে মুক্তি লাভ করে।

শ্রী হরি বলেন কিছু আত্মাকে চিরকাল সেই বৈতরণী নদীর জলেই থাকতে হয়। জীবন দশায় যে ব্যক্তি মাতা পিতাকে সন্মান করেনি, যে ব্যক্তি জীবন দশায় তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী, মিত্র, স্বামী অথবা ভ্রূণ হত্যা করে তাদের চিরকাল এই নদীতেই থাকতে হয়। এছাড়া মদ্যপান করা, যোগ্য নষ্ট করা, অন্যের স্ত্রী এর সাথে সম্পর্কে জড়ানো, মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়া, বিষ খাইয়ে দেওয়া, আগুন ধরিয়ে দেওয়া, কন্যার সাথে ব্যভিচার করা, গরুকে আঘাত করা, মাংস ভোজী ব্রাহ্মণ, ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া এই কর্ম গুলো করে থাকে সেক্ষেত্রেও তাকে এই নদীর জলে চিরকাল বাস করতে হয়। যে সব আত্মা জীবন দশায় মকর সংক্রান্তি, সূর্য গ্রহণ, চন্দ্র গ্রহণ, অমাবস্যার সময় দান করেছে তাদের একসময় যমদূত দ্বারা বের করা হয়।

গরুড় পুরাণ অনুযায়ী কোনো মানুষের অকাল মৃত্যু হলে অর্থাৎ যদি কোনো মানুষ কোনো হিংস্র প্রাণীর
দ্বারা মারা যায়, সাপের কামড়ে, ক্ষিদের যন্ত্রনায়, আগুনে পুড়ে, জলে ডুবে, কোনো দুর্ঘটনা, কোনো রোগের ফলে মারা গেলে তাদের না স্বর্গে স্থান পায় না নরকে স্থান পায়। এই পূরাণ-এ অকাল মৃত্যুকে খুবই ঘির্ণনীয় চোখে দেখা হয়। বিষ্ণু দেবতা আত্মহত্যাকে খুবই খারাপ চোখে দেখতেন। এই পুরাণ অনুযায়ী আত্মহত্যা করলে মানুষের আত্মা প্রাণীলোকেই ঘুরে বেড়ায়, ততো দিন যত দিন না তাদের জীবন চক্রকে সম্পূর্ণ করছে। তার আত্মা না স্বর্গ প্রাপ্তি হয় না নরক। আর আত্মার এই অবস্থাকে অগতি বলা হয়ে থাকে। এই রকম আত্মাকে তার ক্রোধ, লোভ, বাসনা, ক্ষিদে, তৃষ্ণা, সম্ভোগ, সুখ, দুঃখ এসবের জন্য অন্ধকারে ঘুরে বেড়ায়, যতদিন না তাদের পরম আত্মার দ্বারা নির্ধারিত জীবন চক্র সম্পূর্ণ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!