Home » শিল্পের নামে বাংলা বিনোদনে বাড়ছে ”নগ্নতা”

শিল্পের নামে বাংলা বিনোদনে বাড়ছে ”নগ্নতা”

চলচ্চিত্রের ইতিহাস ঠিক কবে থেকে শুরু তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর তারিখে প্যারিস শহরে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় তাদের তৈরী দশটি ছোট ছোট চলচ্চিত্র প্রথমবারের জন্য বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শন করেন। চলমান ছবিকে প্রজেকশন বা অভিক্ষেপনের মাধ্যমে প্রথম সফলভাবে প্রদর্শনের নিদর্শন হিসাবে এই তারিখটিকেই গণ্য করা হয়। চলমান ছবিকে ক্যামেরার সাহায্যে গ্রহণ এবং প্রদর্শনের পূর্ববর্তী কিছু নজির থাকলেও হয় তার গুণমান ছিল নিম্ন নয়ত সেগুলোর কোনোটাই ‘লুমিয়ের সিনেমাটোগ্রাফ’-এর মত বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এই ঘটনার পরে পরেই সারা বিশ্ব জুড়ে প্রচুর ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি তৈরী হয়ে যায় আর মাত্র এক দশকের মধ্যেই চলচ্চিত্র তার অভিনবত্ত্ব কাটিয়ে উঠে এক বিশাল সর্বজনীন বিনোদনশিল্পে পরিণত হয়।

গোড়ার দিকের চলচ্চিত্র ছিল সাদা-কালোয় তোলা, দৈর্ঘ্য ছিল এক মিনিটেরও কম, আর ছিল নির্বাক। ১৮৯০ সাল থেকেই একাধিক শট সংবলিত, বেশ কয়েক মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরী হতে থাকে। ১৮৯৮ সালে তৈরী হয় প্রথম ঘূর্ণায়মান ক্যামেরা যা দিয়ে প্যানিং শট নেওয়া সম্ভব ছিল। ১৮৯৭ সালেই প্রথম ফিল্ম ষ্টুডিও তৈরী হয়ে যায়। স্পেশাল এফেক্ট, এক ঘটনাক্রম থেকে অন্য ঘটনাক্রমে ছবির কন্টিন্যুইটি বা অবিচ্ছেদ্যতা বজায় রাখা, ইত্যাদি নানারকম প্রয়োগকৌশলের ব্যবহার শুরু হয়ে যায়।

সাবেক ধারণা অনুযায়ী ১৯০৯ সালে লন্ডনের প্যালেস থিয়েটারে প্রথম রঙিন ছবি প্রদর্শিত হয়। জর্জ স্মিথের তৈরী এই সিনেমাকালার প্রযুক্তিতে রঙ ব্যবহার হত দুটি, সবুজ এবং লাল। কিন্তু পরে জানা গিয়েছে ১৯০১ সালে প্রথম রঙিন ছবি তৈরী হয়। এই অনাম্নী ছবিটির পরিচালক ছিলেন পেশায় চিত্রগ্রাহক এডওয়ার্ড রেমন্ড টার্নার এবং তার পৃষ্ঠপোষক ক্রীড়াবিদ ফ্রেডরিক মার্শাল লী। তারা সাদাকালো ফিল্মে ছবি তুলে বিশেষ অভিক্ষেপন যন্ত্রে সবুজ, লাল ও নীল রঙের ফিল্টার লাগিয়ে প্রদর্শন করেছিলেন। তবে কিছু অসংশ্লিষ্ট কারণে এই চিন্তাভাবনা তখন আর বেশিদূর এগোয়নি।

আগেরকার সাদা-কালো ছায়াছবি ছিল রোমান্টিকতায় ভরা, তাতে থাকতো হাস্যকর কিছু মুহূর্ত। দেওর বৌদির খুনসুটি, তরুণ যুবক যুবতীর প্রেমের সম্পর্ক। সেই সব সাদা কালো ছায়াছবিতে কোনো প্রকার অশ্লীলতা ছিল না, ছিল না কোনো যৌনতার ছোয়া।

এখন হয়ে উঠেছে সবই রঙিন। এখনকার তরুণ সমাজ মেতে উঠেছে বিদেশি কালচারে, তারা হয়ে পড়ছে পশ্চিমগামী।কলিযুগের বেশির ভাগ ছায়াছবিতে তাই তুলে ধরা হচ্ছে নগ্নতাকে, সেখানে ক্রমশই প্রকাশ পাচ্ছে যৌনতা। তরুণ প্রজন্মকে সিনেমায় আকৃষ্ট করার জন্য তাতে বিদেশি ছোয়া দিয়ে ও যৌনতা প্রকাশ করা হয় বাংলা চলচ্চিত্রে।

করোনা কালের আগে ভারতীয় চলচ্চিত্রে নগ্নতা ফেস্টিভ্যাল মুভি গুলিতেই দেখা যেত। যা পরবর্তীকালে হলে মুক্তি পেলেই বেশ কিছু রাজ‍্যের মানুষ কে দেখা গেছে সহিংস প্রতিবাদ করতে। যেমন হয়েছিল মীরা নায়ার পরিচালিত “কামসুত্র” রিলিজ করার সময়। কিন্তু সেখানে শরীরতত্বের মূল বিষয় হলেও তা পরিমাপ যোগ‍্য কিন্তু করোনা কালের পর স্মার্টফোনের জন‍্য শুরু হল OTT যেখানে ওয়েব সিরিজের নামে যৌনতা কেই প্রচার করা হয়েছে। বাংলাও সেখানে পিছিয়ে নেই।

একটা সময় ছিল যখন স্বপরিবারে সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাওয়া হতো সকলের কিন্তু এখনকার সিনেমা আর স্বপরিবারে কেউ দেখতে যেতে পারে না। “চিত্রনাট্যের খাতিরে দেশি বিদেশি বহু সিনেমায় যৌনতা দেখানো হয়েছে যা ছিল যথাযথ, কিন্তু বর্তমানে কিছু ফিল্ম এবং ওয়েব সিরিজে কেবলমাত্র দর্শকদের আকৃষ্ট করবার জন্য নগ্নতা আর যৌণ দৃশ্যের অবতারনা করা হচ্ছে যা অত্যন্ত কুরুচিকর আর নিম্নরুচির পরিচায়ক”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!