পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি, কিন্তু মাছ ছাড়াও বাঙালির আরও অনেক জনপ্রিয় খাবার রয়েছে। বাঙালি মানেই রসনা আর রন্ধন প্রণালীতে ভরপুর। শুধু যে খুব ভালো উৎকৃষ্ট মানের খাবার সবসময় তা নয়, বাঙালি এমন অনেক খাবার রান্না করে যা কিনা খুব সাধারণ কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি। মাঠ-ঘাট থেকে কুড়িয়ে আনা শাকপাতা হোক বা জঙ্গলের কচু-ঘেচু। সব পদই বাঙালির হাতে জুরি মেলা ভার। যদিও একটা বিতর্ক থেকেই যায় ওপাড় বাংলার বাঙালি মানে যাদের ‘বাঙাল’ বলে চিহ্নিত করা হয় তারা এই সব খাবার নাকি বেশি খায়। কিন্তু তারাও তো বাঙালি।
শাক’ বাংলার একসময়কার গরীব জীবনের এক প্রয়োজনীয় খাবার। আগেরদিনের খুব গরীব লোক কথাতেই বলত ‘শাক-ভাত খেয়ে থেকে যাব।‘ বা কারোর ওপর রাগ হলেই বলত ‘শাক-ভাত ও জুটবে না।’ অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে শাকের জনপ্রিয়তার থেকেও বেশি ছিল প্রয়োজনীয়তা।
বাংলার বহু প্রবাদে শাকের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন – ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’, ‘শাকচোরকে শুলে’, ‘সজনে শাকে নুন জোটে না মুসুর ডালে ঘি’, ‘শাককে শাক পাছায় মুলো’ প্রভৃতি প্রবাদ থেকেই বোঝা যায় বাঙালির রসনা ও রন্ধনের সাথে কতটা অঙ্গাগি ভাবে জড়িয়ে আছে শাক পাতা।
এখন শাক খায় কজন? বাজারেই বা শাক পাওয়া কতটা? বিজ্ঞানীরা বলে শাকের উপকারিতা অনেক। প্রতিটা শাকের কিছুনাকিছু গুণাগুণ রয়েছে। শাক খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘারতি কমে, হাড় সক্ত হয়, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এত কিছু সত্ত্বেও মানুষ এখন এসব খায় না। বাজারে গেলে বড়জোর পুই শাক বা পালং শাক দেখা যায়। কিন্তু এর বাইরে যে উপকারী শাকপাতার একটা জগত রয়েছে তা আজকের মানুষ জানে না। না বাজারে শাকের খোঁজ পড়ে বছরে একদিন। নিয়মে ঘেরা বাঙালি কালীপুজোর আগের দিন চোদ্দ শাক খায়। সেদিন বাজারে শাক বিক্রি হয় কেনেও অনেক মানুষ।
শুধু সেই পুরনো যুগ কেন গ্রামের দিকে আজও অনেক গরীব মহিলাকে দেখতে পাওয়া যায় শাক কুড়িয়ে এনে বাজারে বিক্রির আশায় বসে থাকতে। মানুষ যদি এসব খাওয়া বন্ধ করে দেয় সেই সমস্ত গরীব মানুষগুলোর যে ভাত খাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়।
শহুরে মানুষ হয়তো গ্রামের বাজারে গিয়ে সেই মাহিলার থেকে শাক কিনবেন না ঠিকই, কিন্তু খুজে দেখলে সব জায়গায়তে সবরকম মানুষ চোখে পড়ে। আজকের এই ভেজালে ভরা দুনিয়াতে একটু শাকপাতা খেলে মানুষ নিজেও অনেকটা সুস্থ থাকে এবং সেই রকম অনেক গরীব মানুষদের একটু উপকার হয়।