ঐতিহাসিক যুদ্ধের ধ্বনি, আদালতের নিঃশব্দ বিচার, আর দেশপ্রেমে মিশে থাকা তীব্র আবেগ—এইসব নিয়ে বলিউডে মুক্তি পেতে চলেছে ‘Kesari Chapter 2’। অক্ষয় কুমার ও অনন্যা পান্ডে অভিনীত এই ছবিটি একদিকে যেমন ইতিহাসকে বড়পর্দায় পুনরুজ্জীবিত করেছে, তেমনি আরেকদিকে জন্ম দিয়েছে একের পর এক বিতর্কের। যেন ইতিহাসের রক্তমাখা পৃষ্ঠাগুলি আবারও কলমের কালি ছুঁয়ে কথা বলছে।
🖋️ কবিতার চুরির অভিযোগ—‘ফুসফুসানা’র কান্না
মুক্তির আগেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ছবির একটি সংলাপ। অনন্যা পান্ডে আদালতের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, “তুম না ফুসফুসানা হো”। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংলাপ শুনেই চমকে ওঠেন অনেকে। ইউটিউবার ও কবি Yahya Bootwala দাবি করেন—এই বাক্য তাঁর পাঁচ বছর আগের কবিতা “Jallianwala Bagh”-এর একেবারে হুবহু অনুলিপি।

কবির কণ্ঠে কষ্ট, সিনেমার কণ্ঠে সংলাপ—দু’টি মিলিয়ে গিয়েছিল বলে দর্শক মনে করেন। যদিও পরে জানা যায়, এই বিষয়ে নির্মাতা ও কবির মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং তাঁরা বিষয়টি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মিটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—সৃজনশীলতা কি কেবল চমকের উপর নির্ভর করে?
🕰️ ইতিহাসের নাম করে সিনেমা—কিন্তু কতটা সত্য?
যে গল্পের ভিত্তি স্বাধীনতা আন্দোলনের হিংসাত্মক কালো অধ্যায়—জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ড—সেই গল্পের সত্যতাকে নিয়েই তৈরি হয়েছে আরও একটি বিতর্ক। বাস্তবে C. Shankaran Nair মামলাটি করেছিলেন Lt. Governor Michael O’Dwyer-এর বিরুদ্ধে। কিন্তু ছবিতে দেখা যায় অভিযুক্ত Colonel Dyer। Reddit থেকে টুইটার, নেটিজেনরা বলছেন—“সিনেমা তো গল্পই, তবে ইতিহাসের নামে বিকৃতি কেন?”
কেউ বলছেন, “কাল্পনিক বলেই তো সিনেমা,” কেউ আবার সরাসরি আঙুল তুলছেন ইতিহাসের অপমানের দিকে।
🤬 সংলাপে সাহস, না অশালীনতা?
যেখানে আদালতের দৃশ্য নাটকীয় চূড়ায় পৌঁছেছে, সেখানে অক্ষয় কুমারের মুখে শোনা যায় বিতর্কিত সংলাপ: “Fuck You”। এই দুটি শব্দ হঠাৎ করে ঝড় তোলে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

অনেকে বলছেন, “ভারতীয় মূল্যবোধে এই শব্দ মানায় না।” অন্যদিকে অক্ষয় কুমারের জবাবও তেমনই দৃঢ়—“যখন ওরা আমাদের ‘slave’ বলে, তখন আমি ‘fuck you’ বললে সমস্যা কোথায়?”
কিন্তু এই সাহস কি রুচির সীমা পেরিয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন উঠছেই।
🌟 অনন্যা পান্ডে—এক নতুন চেহারায়

এ ছবিতে অনন্যা পান্ডে এক সাহসিনী, এক সচেতন নারী, আর একজন আইনজীবীর ভূমিকায়। ট্রেলারেই চোখে পড়ে তাঁর বদল। কেউ কেউ বলছেন, অভিনয় ঠিক জমল না। কিন্তু পরিচালক Karan Singh Tyagi-র বক্তব্য স্পষ্ট—“হায়দরাবাদ প্রিমিয়ারে মানুষ দাঁড়িয়ে প্রশংসা করেছেন তাঁকে।”
ক্যামেরার সামনে এক নতুন অনন্যা, যিনি কেবল গ্ল্যামার নয়, সংলাপের ওজনেও নিজেকে প্রমাণ করতে চাইছেন।
একদিকে কবির অভিযোগ, অন্যদিকে ইতিহাস নিয়ে মতভেদ, আবার সংলাপ নিয়ে সামাজিক প্রশ্ন—‘Kesari Chapter 2’ যেন নিজের গল্প ছেড়ে, সমাজের বাস্তবতায় ঢুকে পড়েছে।
এই বিতর্ক কি ছবির জনপ্রিয়তায় বাধা দেবে? নাকি এরাই হয়ে উঠবে ছবির প্রচারের জ্বালানি?
একটি সত্য আছে—যে সিনেমা বিতর্ক তৈরি করে, সে সিনেমা কিছু একটা বলতে চায়। আর ইতিহাসের পাতায় লেখা রক্তের গল্প, যখন পর্দায় কথা বলে, তখন সে শুধু বিনোদন নয়—স্মরণ, সচেতনতা এবং সংবেদন হয়ে ওঠে।