১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই—বাংলার ইতিহাসে এক রক্তাক্ত দিন। সেই দিনটিতে, যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযান চলছিল। পথরোধ করে দাঁড়িয়ে ছিল কলকাতা পুলিশ। সেই পুলিশের মধ্যেই ছিলেন এক তরুণ কনস্টেবল—সিরাজুল ইসলাম। আর তিনিই আজ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ঘুরছেন একটিমাত্র ন্যায্য চাকরির আশায়।

প্রাণ বাঁচিয়ে বরখাস্ত!
লাঠিচার্জের নির্দেশ এসেছিল তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ীর কাছ থেকে। কিন্তু সিরাজুল নিজের বিবেকের কাছে মাথা নত করতে পারেননি। বন্দুক হাতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন—“স্যার! এই অত্যাচার বন্ধ করুন, না হলে আমি বাধ্য হব গুলি চালাতে!” সেই মুহূর্তেই ঘটে যায় ইতিহাস। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বেঁচে যান, এবং সময়ের পরিক্রমায় হয়ে ওঠেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

তবু শাস্তি সিরাজুলেরই!
বাম সরকারের আমলে ‘অবাধ্যতা’র দায়ে বরখাস্ত করা হয় সিরাজুলকে। এরপর কেটেছে তিনটি দশক। বহুবার কালীঘাটে গিয়েছেন, দেখা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চিঠি দিয়ে তাঁর চাকরি ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনকে। তবু আজও সেই চাকরি অধরাই!

মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, কিন্তু বাস্তবতায় শূন্যতা!
চাকরি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি, নবান্ন থেকে উপহার, বারবার দেখা সাক্ষাৎ—সবই হয়েছে। কিন্তু কোনও কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি আজও। কেন? প্রশ্ন শুধু সিরাজুলের নয়, প্রশ্ন এখন বাংলার মানুষেরও।
আজও শহিদের মতো দিন কাটান সিরাজুল
আজও গাইঘাটার বাড়িতে সাদামাটা জীবনযাপন করেন তিনি। আশায়, কোনও একদিন ফিরে পাবেন ন্যায্য অধিকার। ২১ জুলাই শহিদ দিবসে যখন রাজ্যজুড়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন হয়, তখন দূরে বসে নিরবে চোখের জলে ভাসেন সেই মানুষটি—যিনি একদিন মমতার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।