পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ‘’আকাশবাণী কলকাতা – খবর পড়ছি …’’ কি কার নাম মাথায় আসছে? জানি আপনার আমার মাথায় কারোর নাম হয়তো আসছে না, আমরা রেডিও যুগের মানুষ নই। কিন্তু একসময় এই কথাটা শুনলেই বাঙালির একটা নাম মাথায় দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জনপ্রিয়তা মানুষের মনে এতটাই ছিল যে অন্য একজন রেডিও সংবাদ পাঠক নিজে খবর পড়ার সময় ‘’আকাশবাণী কলকাতা – খবর পড়ছি দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়’’ বলেছিল, নিজের নামটা বলতেই ভুলে গেছিল। হ্যাঁ এই মানুষটার কণ্ঠের জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল ১৯৬০ সালের পর থেকে।
নদীয়ার শান্তিপুরের মানুষ দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৬০ সালে আকাশবাণীতে সংবাদ পাঠক হিসেবে নিজের জীবন শুরু করেন। ১৮৬৪ সালে দিল্লীতে বাংলা সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দেন। ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের শেষ দিকে আবার ফিরে আসেন কলকাতায়। দীর্ঘ ৩২ বছর কাজ করেছেন আকাশবাণীতে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আকাশবাণীর ‘সংবাদ পরিক্রমা’র পাঠক ছিলেন। শুধু মাত্র তার কণ্ঠে সংবাদ পাঠ শুনবেন বলে অপেক্ষা করে থাকতেন দুই বাংলার মানুষ। তার কণ্ঠের নিজস্ব আবেগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিবরণী শুনে কেঁদে ভাসাতেন বাঙালি, কখনও বা ভাবতেন আমার কথা কি করে বলছেন উনি। এতটাই আবেগ দিয়ে সংবাদ পাঠ করতেন তিনি।
সংবাদ পাঠের জন্যই তিনি ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। ২০১১ সালে তার মৃত্যুর ৫ বছর পর গড়ে ওঠে, ‘দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি সংসদ’। আবৃত্তির জন্যও খুব জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সংবাদ পাঠকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করা এহেন মানুষটার প্রয়াণ দিবস আজকে। রেডিওর জনপ্রিয়তা আজ পড়তির দিকে, তবুও যতদিন রেডিও থাকবে তার ইতিহাস জুড়ে থেকে যাবেন দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।