Home » দিঘা হাসপাতালে বালকের মৃত্যুতে উত্তেজনা, হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো রোগী আত্মীয়-স্বজন, তদন্তে পুলিশ

দিঘা হাসপাতালে বালকের মৃত্যুতে উত্তেজনা, হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো রোগী আত্মীয়-স্বজন, তদন্তে পুলিশ

পূর্ব মেদিনীপুর দীঘা:– দিঘা বেড়াতে এসে ১৫ বছরের বালকের মৃত্যুকে ঘিরে রণক্ষেত্র চেহারা নিল দীঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। শুক্রবার বিকালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে তুলে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মীদের হেনস্থা ও হাসপাতালের ভিতরে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠে মৃতের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। ঘটনার জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দিঘা স্টেট হাসপাতালে। খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় দিঘা মোহনা কোস্টাল থানার পুলিশ। হাসপাতালের ভাঙচুরের ঘটনার রোগীর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ লিখিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে মৃত বালক মহাদেব রানা (১৫)। তার বাড়ী পটাশপুর থানার বাড়ি পটাশপুর থানার রামচকে। টেপরপাড়া শশীভূষণ জুনিয়ার হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। তদন্ত শুরু করেছে দীঘা মোহনা থানার পুলিশ। সূএের খবর, শুক্রবার সকালে বাবা-মা, প্রতিবেশী ও আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে নিজস্ব গাড়িতে করেই এদিন দিঘা বেড়াতে আসে মহাদেব। সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ দিঘা এসে পৌঁছায় ৩৫ জনের দলটি। দিঘা পৌঁছেই বমি করতে শুরু করে মহাদেব। অম্বলের ওষুধ খাওয়ানোর পরও বমি না থামায় বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ে আসেন দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। বিকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বালকের মৃত্যু হয়। ঘটনা স্থলে পৌঁছায় দীঘা মোহনা থানার ওসি দীপক চক্রবর্তী বিশাল পুলিশ বাহিনী। তার পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। মৃত মহাদেবের বাবা বিষ্ণুপদ রানা বলেন ” আমার উপস্থিতিতেই যাবতীয় টেস্ট করানো হয়েছিল। সব রিপোর্টই ঠিক ছিল। পরপর ৪ টা সেলাইন দেওয়া হয়। তারপর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তখন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তারপর ১০ মিনিটের মধ্যে আবার দুটো সেলাইন দেওয়া হয়। এর পর পুরো শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন আর একটা ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই ছেলের মৃত্যু হয়।’রোগী মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজন হাসপাতালে ভিড় করেন। এর পরেই উত্তেজিত হয়ে তাঁরা হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে ভাঙচুর চালান এবং চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের হেনস্থা করেন “।

মৃতের জেঠু অনন্ত কুমার রানা বলেন ” সকালে বাড়ি থেকে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়েছিল ছেলেটা। দিঘা পৌঁছেই বমি করতে শুরু করে। অম্বলের ওষুধ খাওয়ানোর পরও বমি না থামায় আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসি। যদি হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিত, তা হলেও বেসর কারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার বব্যস্থা করতে পারতাম। সমস্যা গুরুতর কিনা আমরা বারবার জিজ্ঞাসা করেছি। কিন্তু ডাক্তার বাবু আমাদের বলে ছিলেন, কোথাও নিয়ে যেতে হবে না। সামান্য গ্যাস, অম্বলের সমস্যা। আমরা ঠিক করে দেব। ডাক্তার বাবুর কথায় ভরসা করে আমরা এখানে রোগীকে রেখে দিই “।

দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সুপার সন্দীপ বাগ বলেন ” শুক্রবার সকাল ৯ টা ৫০ নাগাদ ১৫ বছরের একজন বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন জনাদশেক। বাচ্চাটির বমির সমস্যা ছিল। ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার বাবু বাচ্চাটিকে দেখেন এবং যা যা চিকিৎসা করার করেন। হঠাৎ করে বাচ্চাটার খিঁচুনি শুরু হয় এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ডাক্তার বাবু তাঁর মতো করে চেষ্টা করেন। তা সত্বেও আমরা বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারিনি। বিকেল ৩ টা ৫ নাগাদ তার মৃত্যু হয়। তারপরই তার বাড়ির লোকজন হাসপাতালে ভাঙচুর করেছে। ৩ টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন আছড়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং পুরুষ বিভাগের নার্সিং স্টেশনের সমস্ত কিছু ভাঙচুর করা হয়েছে। ডাক্তার বাবু, নার্স দিদি মণিদের অকথ্য গালি গালাজ এবং মারধর করেছে। এ ব্যাপারে ডাক্তার বাবুরা আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। বাড়ির লোকেরা অবশ্য কোনও অভিযোগ জানায়নি। তবুও আমরা কেন বাচ্চাটা মারা গেছে জানার জন্য মৃতদেহের ময়না তদন্ত করাবো। মৃত্যুর প্রকৃত কারণটা আমাদেরও জানা দরকার, যে গাফিলতিটা কার ছিল “।

দিঘা মোহনা থানার ওসি দীপক চক্রবর্তী বলেন” পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোন পক্ষই এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ জানাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি “।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!