বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছে তিলত্তমা। গত পরশু থেকেই শুরু হয়েগেছে নাচে, গানে বসন্ত কে বরন করে নেবার প্রস্তুতি। কিন্তু ঠিক কি এই বসন্ত উৎসব? কবেথেকে এর শুরু? আজ বলবো এই বসন্ত উৎসবের ইতিহাস যা জানলে আপনিও অবাক হতে পারেন।
কিছুদিন আগেই গেল ভ্যালেন্টাইন ডে আর সরস্বতী পুজো। 14th February দিনটিকে পৃথিবী জুড়ে একটি বিশেষ প্রেমের দিন উদযাপন করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে ঠিক তেমনভাবে বাঙালিদের কাছে বসন্ত পঞ্চমীতে সরস্বতী পুজোর দিনটিকেও প্রেম উদযাপনের বিশেষ দান বলেই ধরা হয়। আর এই বসন্ত পঞ্চমী থেকেই বসন্ত উৎসবের শুরু। মথুরা, বৃন্দাবনে এই বসন্ত পঞ্চমীথেকেই শুরু হয়েযায় নাম সংকীর্তন। এই বসন্ত পঞ্চমী থেকেই নারী ও পুরুষের কাছে আসার এই উৎসবের শুরুকরে এবং সম্পুর্ন হয় দোল পুর্নিমায় বা হোলি তে। তাহলে দোল বা হোলি কি? দুটো কি আলাদা কিছু?
বসন্তের আগমনের সাথে সাথেই উত্তরের হাওয়া বন্ধ হয়ে শুরুহয় মিষ্টি দক্ষিনা বাতাস বওয়া আর তার সাথে সাথেই আমাদের প্রকৃতির মধ্যেও একটা যেন নেশার দোলা লাগে। আর প্রকৃতি মানেই তো সেখানে স্বয়ং ঈশ্বরের বাস। তিনি সেই দক্ষিনা বাতাসের নেশায় চুর হয়ে প্রক্যতির সাথে সাথে পা দোলাতে লাগেন। এখান থেকেই আমাদের হিন্দুদের রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ কে তার সিংহাসন থেকে, খোলা আকাশের নিচে দোলায় রাখার একটা প্রচলনও আছে বলেই আমরা জানি। তবে রাধা-কৃষ্ণের থেকেই কিন্তু এই দোলযাত্রার শুরুনয়।
এই বসন্ত উৎসব প্রাচীনকালে গুপ্ত রাজাদের সময় থেকেই হয়ে আসছে। সে সময় রাজারা প্রত্যেকে বসন্ত উৎসব ঘোষনা করেই পালন করতেন এবং সেই সময় বসন্ত উৎসব ছিল রাজা ও প্রজাদের কাছে চরম আনন্দ ও মজা করার দিন। রাজা ও রানিরা বসন্তের আগমনে তাদের প্রেম কে একটি নির্দিষ্ট দিনে উপভোগ করার জন্য প্রস্তুতি নিতেন এবং একটি উদ্যান বাটিতে সাজসজ্জা সহকারে দোলা বা দোলনার ব্যবস্থা করা হত যেখানে রাজা ও রানি তাদের সখা ও সখিদের নিয়ে নাচ গানের সাথে আমোদে মেতে উঠতেন। সুতরাং এখানে এই দোলনার মঞ্চ থেকেই আমাদের কাছে আসে দোলমঞ্চ। আর এই উদ্যান বাটিকা একটু দুরবর্তী, নিরিবিলি স্থানে আয়োজন করা হত, রাজা ও রানি তাদের বাসভবন থেকে পালকি বা অন্য যানবহনে যেতে যেতেও আমোদ প্রমোদে আনন্দে মেতে থাকতেন। এই দোলনা উদ্যানের দিকে যাত্রাও ছিল বেশ আড়ম্বড়ের। এখান থেকেই উৎপত্তি দোলযাত্রার।
অন্যদিকে হোলি শব্দটির উৎপত্তি হোলিকা থেকে। অসুররাজ হিরন্যকশিপুর অমর হতে চাইলেন। এই কারনে তিনি কঠিন তপস্যা করে ব্রম্ভা কে সন্তুষ্ট করেন কিন্তু অমরত্বের অধিকার তো শুধুমাত্র দেবতাদের। অসুররাজকে অমরত্ব দিতে অস্বীকার করলেন দেবতারা। অসুররাজ হিরন্যকশিপুর দেবতাদের কাছে চেয়ে বসেন এক অদ্ভুত বরদান। তিনি চাইলেন – তাকে মানুষ হত্যা করতে পারবেনা, অন্যদিকে কোন প্রানীও হত্যা করতে পারবে না। তাকে ঘরেও হত্যা করা যাবেনা আবার বাইরেও হত্যা করা যাবেনা। তাকে দিনেও হত্যা করা যাবে না আবার রাতেও হত্যা করা যাবে না। তাকে অস্ত্রের দ্বারার হত্যা করা যাবেনা আবার সস্ত্রের দ্বারাও হত্যা করা যাবেনা। তাকে জলে, স্থলে বা বায়ুমন্ডলে হত্যা করা যাবেনা। এই বরদানে হিরন্যকশিপুর হয়ে ওঠেন উদ্ধত ও অহংকারী। তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি অমর তাই তাকেই সকলে দেবতা রুপে পুজো করতে হবে অন্যথায় তিনি শাস্তি স্বরুপ মৃত্যুদন্ড দেবেন বা হত্যা করবেন। কিন্তু হিরন্যকশিপুরের নিজের পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন একজন বিষ্ণুভক্ত। প্রহ্লাদ তার পিতার আদেশ অমান্য করে ভগবান বিষ্ণুর আরাধধা করতে থাকে তাই হিরন্যশিপুর তার বোন “হোলিকা”র সাহায্য চান প্রহ্লাদ কে হত্যা করার জন্য। যদিও এই ষড়যন্ত্র ছিল প্রহ্লাদ কে হত্যা করার, হিরন্যকশিপুরের অন্যতম একটি বিফল ষড়যন্ত্র।
হোলিকার একটি অগ্নিনিরোধোক শাল ছিল যা তাকে আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতো। হিরন্যকশিপুর, প্রহ্লাদ কে তার পিসি হোলিকার কোলে বসতে আদেশ দেন। প্রহ্লাদ হোলিকার কোলে বসার সাথে সাথেই তার গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন হিরন্যকশিপুর। হিরন্যকশিপুর ভেবে ছিলেন বিশেষ ওই শাল থাকার জন্য হোলিকার আগুনে কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে মারা যাবে। কিন্তু আগুন জ্বলার সাথে সাথেই প্রহ্লাদ বিষ্ণুর নাম স্মরন করতে থাকেন এবং হোলিকার গায়ের সেই অগ্নিনির্বাপক শাল হোলিকার শরীর থেকে খুলে প্রহ্লাদের শরীরে জরিয়ে যায়। আগুনে পুড়ে মারা যায় হোলিকা, বেঁচে যায় প্রহ্লাদ।
ওই আগুন ছিল অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক। এখান থেকেই শুরু হয় হোলিকা দহন আর পরের দিন পালিত হয় হোলি।