পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ সগৌরবে পালিত হচ্ছে প্রাইড মান্থ। ভারতে এখন সমকামিতা অপরাধ নয়, যদিও সমকামী বিবাহ আইনবিরুদ্ধ। সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতি দিতে এখনও ভাবতে হচ্ছে সরকারকে কিন্তু কেন? আজও অনেক শিক্ষিত মানুষ মনে করেন সমকামিতা মানসিক রোগ বা শহরের কিছু উড়তি ছেলেমেয়েদের খেয়াল মাত্র। কিন্তু তাই কি সমকামিতা কি শুধুই আজকের যুগের একটা ব্যাপার? তা কিন্তু নয় সৃষ্টির আদি থেকেই রয়েছে সমকামিতার বিজ। কখনও প্রকাশ্যে তো কখনও গোপনে কিন্তু সমকামিতা ছিলই।
কামসুত্রে সমকামিতা নিয়ে একটা বড় অংশ রয়েছে। সেখানে বলাই আছে সমকামিতা রোগ নয় এটা শারীরবৃত্তীয় প্রবৃত্তি। সমকামী (গে, লেসবিয়ান), উভকামী, তৃতীয় লিঙ্গ এই সবকিছুর কথাই রয়েছে কামসুত্রে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বিয়ের কথাও উল্লেখ আছে প্রাচীন এই পুঁথিতে। এছাড়াও প্রাচীন ভারতের শিল্প কর্ম গুলি দেখলে তাতে এমন অনেক চিত্রই পাওয়া যাবে যা তৎকালীন যুগে সমকামিতার অস্তিত্ব প্রমান করে। কোনারকের সূর্য মন্দিরে এমন অনেক চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
মহাভারতে শিখণ্ডী এবং বৃহন্নলা রূপী অর্জুনের কথা আমরা সকলেই জানি। মহাভারতের মত মহাকাব্যে যদি এই ঘটনার উল্লেখ থাকতে পারে তাহলে আজ তা দোষের কেন? পদ্মপুরাণে উল্লেখ আছে অর্জুন শারীরিক ভাবে নারী হয়ে শ্রীকৃষ্ণের সাথে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। আবার মহাভারতের তামিল সংস্করণে বলা আছে শ্রীকৃষ্ণ মোহিনী রূপে অর্জুন পুত্র ইরাবনকে বিবাহ করেন। এখানে কৃষ্ণ শারীরিক ভাবে পুরুষ কিন্তু অন্তরে নারী। ইরাবনের মৃত্যুর পরও দীর্ঘ দিন কৃষ্ণ মোহিনী রুপেই শোক পালন করেন। ভালোবাসার জন্য শোকপালন তার জন্য কোন লিঙ্গের দরকার হয়না।
পুরাণ ছাড়াও বাস্তবে ইতিহাসের অনেক চরিত্ররাও এই শাখার মধ্যে পড়তেন। ইতিহাসে আলাউদ্দিন খলজি এবং মালিক কাফুরের কথা প্রমানিত সত্য। আলাউদ্দিন খলজি উভকামী ছিলেন, তার অনেক রানী থাকা সত্ত্বেও তিনি মালিক কাফুরের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। মালিক কাফুর কিন্তু নিজে পুরুষ হয়ে শুধুমাত্র পুরুষকেই কামনা করতেন।
কে নারী বা কে পুরুষ তা শুধুমাত্র তাদের শারীরিক লিঙ্গ ঠিক করে দিতে পারেনা। মন থেকে মানুষ কি সেটাই তার বোধহয় তার পরিচয় হওয়া উচিত। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন আসে। সমকামী বা তৃতীয় লিঙ্গের বিবাহ ও স্বীকৃতি পাবে এই আশা রাখাই যায়। যেদিন সব মানুষ মন থেকে এটাকে সমস্যা না ভেবে স্বাভাবিক ভাববে সেদিন থেকে বোধহয় আর প্রাইড মান্থের দরকার পড়বে না।