এই গল্প টা শুরু করার আগে ফিরে জেতে হবে বেশ অনেক টা পিছনের দিকে, ১৯৮৯ সালে দুবাই এ ভারতীয় এমব্যাসি তে একজন আই পি এস অফিসার জানতে পারলেন দুবাই থেকে একটি সিন্ডিকেট ভারতে সোনা আর ড্রাগস চোরা চালান করার চেষ্টা করছে। কিন্ত অনেক চেষ্টা করেও সেই সিন্ডিকেটের কোন অপরাধ মূলক প্রমান জোগাড় করে উঠতে পারেননি। অথচ সেই বছরেই এক ব্যাক্তি ১৮০ টন সোনা কিনে বেছে দিয়েছিলেন চোরা পথে।
দাউদ ইব্রাহিম ও তার গুরু খালিদ পালোয়ান।
এরপর বেশ কিছু বছর পরে, তখনও ১৯৯৩ এর মুম্বাই তে সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরণ হয়নি। দাউদ তার দুবাই অফিসে বসে তার কর্মচারী দের নিয়ে একটি বিশেস মিটিং করছেন। যেখানে বাইরের লোকের প্রবেশ একেবারেই নিশিদ্ধ। কিন্তু সেখানেই সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার এক ব্যাক্তির প্রবেশ আর প্রবেশ করেই দাউদ আর তার কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে শুরু করলেন উদ্দাম গালিগালাজ। মিটিং সেখানেই থমকে গেল। দাউদ নিজের আসন থেকে উঠে সেই ব্যাক্তির পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলেন , তারপর অফিসের সকলেই তার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করলেন। তারপরেই সেই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তি দাউদ কে বেশ ধমকের সাথে পরের দিন দুপুরে একসাথে খাবারের নিম্নত্রন জানালেন। দাউদ সুবোধ বালকের মত ঘাড় নেরে সম্মতি জানালেন। এবং সাথে সাথেই পরের দিনের যাবতীয় মিটিং অন্য দিনে পরিবর্তন করলেন। কে এই ব্যাক্তি ? যাকে দাউদের মত একজন ভয়ঙ্কর ডন এত সমীহ করে ?
দাউদ ইব্রাহিম এর বর্তমান চেহারা ( ইনসেটে)
ইনিই ছিলেন হাজি মোহম্মদ আসরাফি। যদিও এনার নাম হাজি মোহম্মদ কিন্তু এনারা বংশ পরম্পরায় মোহর যাকে উর্দু তে বলা হয় আসরাফি, নিয়ে কাজ করার ফলে নামের শেষে আসরাফি যোগ হয়েছিল। আর ইনিই সেই ব্যাক্তি যিনি ১৯৮৯ সালে ১৮০ টন সোনা চোরা পথে কিনে বেচে দিয়েছিলেন। সেই সময় আন্ডারওয়াল্ডে সব থেকে খাঁটি সোনার বিস্কুটের সরবরাহ ইনিই করতেন। এই বেলা বলে রাখি সোনার বিস্কুট কত রকমের হয়। এক রকমের হয় গ্লুকোজ বিস্কুটের মত।তার থেকে বেশি ওজনের হত মেরি বিস্কুটের মত আর তার থেকেও বেশি পরিমান বা ওজনের হত ডেয়ারি মিল্ক চকলেটের মত।যদিও ইদানিং কালে আরও নানা ধরনের হতে শুরু করেছে শুল্ক দফতর কে ফাকি দেবার জন্য। এবং আজও বেশির ভাগ সোনার তস্করি হয় মুম্বাইয়ের ডক আর সমুদ্র পথে। হাজি মোহম্মদ আসরাফি পাকিস্থানি নাগরিক হলেও তিনি নিজেকে সম্পুন ভাবে ভারতীয় নাগরিক মনে করতেন এবং তিনি মনে করতেই দেশ এখনো অবিভক্ত আছে। ওনার অফিসের দেওয়ালেও অবিভক্ত ভারতের একটি বড় ম্যাপ লাগাণো থাকতো। ওনার মতে পৃথিবীতে সব থেকে বেশি সোনা আছে আমেরিকা তে সরকারি সিন্ধুকে যার বেশির ভাগ টাই ভারত থেকে লুঠ করে নিয়ে যাওয়া। আর তার পরেই সব থেকে বেশি সোনা আছে ভারতে কারন ভারতের গরিব থেকে গরিব পরিবারে গেলেও এক ফোঁটা সোনার অলঙ্কার পাওয়া যাবে। এক সময় সব থেকে বেশি সোনা ভারতে ছিল বলেই ভারত কে সোনে কি চিড়িয়া বলা হত। আর এই কারনেই হাজি মোহম্মদ আসরাফি শুধু মাত্র ভারত, নেপাল আর বাংলাদেশেই সোনা তস্করি করতেন। কিন্তু দাউদ কে গালাগালি করার কারন কি জানতে চাইলে তিনি জানিয়ে ছিলেন, তার থেকে বেশি ভাল খাতি সোনা কেউ দিতে পারত না। পৃথিবীতে সব থেকে বেশি সোনা তিনিই তস্করি করাতেন, অন্যদিকে স্মাগ্লার দের সকলের খাঁটি সোনা চেনার খমতা থাকতো না। ওনার থেকেই সবাই চোখ কান বুজে বিশ্বাস করে সোনা কিনতেন কিন্তু নিজে দের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আর শত্রুতা করতে গিয়ে একে অপরের সোনা চোরা চালানের খবর পুলিশ আর শুল্ক দফতর কে জানিয়ে নিজেদেরই এক প্রকার ক্ষতি করত তাই তিনি দাউদ ও অনান্য সকল চোরা কারবারি দের গালিগালাজ করে বলতেন নয় স্মাগলার হউ নাহলে ক্রিমিনাল হউ।
ছোটা শাকিল, দাউদ ইব্রাহিমের ডান হাত
যদিও পরবতি কালে হাজি মোহম্মদ আসরাফির আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। এমনকি কোন দেশের পুলিশ বা এন্টারপলের খাতায় ও তার কোন নাম বা ছবি পাওয়া যায়নি। তবে একজন সোনা তস্করের দেশের প্রতি শ্রদ্ধা দেখে সত্যই অবাক হতে হয়।