বর্তমানে আমরা সবাই স্মার্ট টেকনোলজির সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত। প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে আজ আমরা আমাদের সাধারন জীবনে বহু জিনিস দৈনন্দিন জীবনে ব্যাবহার করে থাকি যা স্মার্ট টেকনোলজি যুক্ত। যেমন স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ থেকে শুরু করে স্মার্ট ওয়াটার বটল, স্মার্ট টুপি, লাইটার, গাড়ি…. সংক্ষেপে বলতে গেলে দুএকটা জিনিস বাদ দিলে প্রায় সব কিছুই এখন স্মার্ট টেকনোলজির দখলে যা মানুষের জীবন কে অনেক সহজতর বা বলা ভালো, স্মার্ট করে তুলেছে।
এই স্মার্ট টেকনোলজি থেকে ব্রাত্যছিল আগ্নেয়াস্ত্র। যদিও গুজব একটা ছিল আগ্নেয়াস্ত্রের আধুনিকিকরনের যা নিয়ে সব থেকে বেশী ব্যাস্ত থাকে আমেরিকা রাশিয়ার মতো দেশ গুলি। কারন গোটা পৃথিবীতে এই দেশ গুলিই আধুনিক সামরিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাবসায়ে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে। এবার আমেরিকা বাজারে আনলো প্রথম স্মার্টগান। যা ব্যাক্তিগত ব্যাবহারের জন্য উপলব্ধ হল। ভারতে ব্যাক্তিগত ভাবে আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রাখার প্রচলন প্রায় নেই বলাই ভালো। শুধুমাত্র বিশেষ ব্যাক্তি বা বলা ভালো রাজনৈতিক নেতা, বিখ্যাত ব্যাবসায়ী ও খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রীদের আত্মরক্ষার জন্য ব্যাক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি বা লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু বিদেশে আত্মরক্ষার কারনে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার একটি প্রচলন আছে যা খুব সাধারণ একটি রীতি বলা যেতেই পারে। কিন্তু এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যাক্তিগত বা সরকারি ভাবে ব্যাবহার করার পাশাপাশি ছিল একটি সমস্যা। অনেক সময়েই আগ্নেয়াস্ত্র থেকে অসাবধানতাবশত গুলি চলে বহু নিরাপরাধ ব্যাক্তির বা নিরীহ মানুষের প্রান গেছে। বাড়িতে সন্তর্পনে রাখা আগ্নেয়াস্ত্র বাড়ির বাচ্ছাদের হাতে পড়ে গুলি চলেছে। আবার অন্যের আগ্নেয়াস্ত্র লুঠ হয়ে সেই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে অপরাধ মূলক কাজ হয়েছে। এবং এই সমস্যা গুলি বরং বলা ভালো দূর্ঘটনা গুলি ঘটেছে প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই। এমনকি আমাদের কলকাতাতেও। এবার এই জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তিপেতেই এই স্মার্ট টেকনোলজি প্রযুক্তি কে আগ্নেয়াস্ত্রতে কাজে লাগানো।
ঠিক যে ভাবে অপনার ব্যাক্তিগত স্মার্টফোন টি আপনি “ফেস লক” বা “ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক” করে রাখেন, যা আপনার ফোন আপনার ফেস বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেক্ট না করলে খোলেনা বা ব্যাবহার অযোগ্য থেকে যায় ঠিক সেই ভাবেই এবার এই আগ্নেয়াস্ত্র তে থাকছে “ফেস লক” ও “ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক”। আগে সুরক্ষার স্বার্থে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র তে একটি সেফটি ক্লাচ এর ব্যাবস্থা থাকতো যা আগ্নেয়াস্ত্র চালনা করার আগে অন না করলে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চলবে না তবে এই ব্যাবস্থাছিল শুধুমাত্র বড় অটোমেটিক মেশিনগান জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র তেই উপলব্ধ ছিল কিন্তু ব্যাক্তিগত সুরক্ষায় কেউই এত বড় আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে স্বছন্দ বোধ করেননা। কিছু আধুনিক ছোট আগ্নেয়াস্ত্র তে এই সেফটিক্লাচ থাকলেও তা অনেক সময়ে কাজ করেনা। তাই এই সমস্যা এবার অনেকটাই সমাধান হবে বলে দাবী করছেন আমেরিকার আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞ কাই ক্লোয়েফার।
কাই ক্লোয়েফার আমেরিকার বায়োফায়ার নামক একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনিই এই জাতীয় বায়োমেট্রিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরী করার দাবীকরেন। এই ছোট আগ্নেয়াস্ত্র টি ৯এম এম অটোমেটিক পিস্তলের অত্যাধুনিক বায়োমেট্রিক প্রযুক্তিতে তৈরী যা আগ্নেয়াস্ত্রর প্রকৃত মালিক ব্যাতিত অন্যকোন ব্যাক্তির হাতে অচল থাকবে। এই পিস্তলের ট্রিগারে থাকা “ফিঙ্গারপ্রিন্ট” ডিটেকশনে প্রকৃত মালিক ব্যাতিত অন্য কারো ফিঙ্গারপ্রিন্ট এলেই পিস্তলটি অচল থাকবে। এছাড়াও পিস্তল টির হ্যামারের পিছনেই থাকছে একটি ছোট ফ্রন্ট ক্যামেরা যা পিস্তল ব্যাবহারকারীর ফেস ডিটেকশন করবে। ট্রিগারের সাথে একই সঙ্গে প্রকৃত মালিকের ফেস ডিটেকশন না হলে পিস্তলটি সচল হবেনা।
কায় ক্লোয়েফার এ বিষয়ে আরো জানান, এই পিস্তলটিতে রিচার্জেবল লিথিনিয়াম ব্যাটারী আছে যা একবার চার্জ করলে প্রায় মাস চারেক ব্যাবহার করা যাবে। তবে এই পিস্তলে ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা জিপিএস প্রযুক্তি থাকছেনা।
আমেরিকা নিবাসী অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও ব্যাবসায়ী কায় ক্লোয়েফার মাত্র পনেরো বছর বয়স থেকেই আধুনিক অস্ত্র তেরী নিয়ে গবেশনা শুরু করেন। তারমধ্য তার প্রধানলক্ষ্য ছিল আগ্নেয়াস্ত্র থেকে অসাবধান বশত ভাবে দূর্ঘটনার সংখ্যা কমানো বা প্রতিরোধ করা। এরপরেই তিনি এই বায়োমেট্রিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কথা ঘোষনা করেন। যদিও এই বায়োমেট্রিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এখনো রয়েছে বহু বিতর্ক তাই বাজারে বিক্রির অনুমতি মিললেও খুব বেশী সংখ্যায় এখুনি তৈরী হচ্ছেনা। বুকিং অনুযায়ী এই পিস্তল তৈরী করা হবে বলেই জানিয়েছেন কাই ক্লোয়েফার। বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি বা এই স্মার্ট পিস্তলে আমেরিকার বাজার মূল্য এক হাজার চারশো নিরানব্বই ডলার যা ভারতীয় মূল্যে প্রায় বারো লক্ষ্য টাকার বেশী।