পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আজকে ভোঁর থেকেই বাজারে মাংসের দোকানে মিষ্টির দোকানে লাইন শুরু হয়ে গেছে। বাজারে গেলেই চোখে পড়বে রোজকার থেকে আলাদা এক দৃশ্য। মাংসের দোকানের লাইন আজ হার মানাবে পুজোর প্যান্ডেলের লাইনকে। আজ চারিদিকে উৎসবের আমেজ। কারোর বিয়ের পর প্রথম জামাইষষ্ঠী তো কারোর দুতিন জন জামাই একসাথে আজ আসবে। শ্বশুরমশাইরা আজ বাজারে ব্যস্ত আর শাশুড়িরা রান্নাঘরে। না যদিও এই চিত্ররা এখন একটু আলাদা। এখন তো নতুন চল শুরু হয়েছে জামাইদের নিয়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টে জামাইষষ্ঠী পালন। রেস্টুরেন্টে জামাই ষষ্ঠী পালনে অনেক সুবিধে শুধু টাকা দিয়ে দিলেই হল, বাজার বা রান্নার কোন কিছুরই ঝামেলা নেই। রেস্টুরেন্টগুলোও আজকের জন্য সব জামাইষষ্ঠী থালি র অফার দিচ্ছে। মাছ মাংস কোন কিছুই তাতে বাদ নেই অত পদ বাড়িতে রান্না করাও যায় না তার চেয়ে এই ঢের ভালো।
এতকিছুর পরেও আজকের দিনে ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মেয়ে জামাই ছুটিই পাচ্ছে না কত বাড়িতে। এই সব উৎসবে ভেসে না গিয়ে তারা কাজকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। জামাইষষ্ঠী বলে না এখনকার ছেলে মেয়েরা পরিবার পরিজন আত্মীয়দের কথা মাথায় রাখে না। তাই জামাইষষ্ঠীর মত ঠুনকো সেন্টিমেন্টের দাম তারা দেয়না। অনেক মেয়েই ক্যেরিয়ারের কথা ভেবে বিয়েই করতে চায় না।
অপরদিকে এখনকার ছেলেরা বিয়ে করতে ভয় পায়। এখন সবাই ‘lives for the moment’-এ বিশ্বাসী বিয়ের মত দীর্ঘ মেয়াদী সম্পর্ক চায় না আজকালকার ছেলে মেয়ে। বিয়ের পরিবর্তে সবাই এখন ‘living’ করছে। এতে দায়িত্বও নেই আবার সম্পর্কের চাপ নেই। তার ওপর তো এখন ডিভোর্সের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে মেয়েরা ডিভোর্সের সময় যে পরিমাণ খোরপোষ দাবী করছে তাতে তো ছেলেরা বিয়ে করতেই ভাবছে। তার পর বউ যদি বধূনির্যাতনের কেস দিল তাহলে তো কথাই নেই ক্যারিয়ার সম্মান সব শেষ। এখন বেশিরভাগ ছেলেদের বলতে শোনা যায় বিয়ে করে কি হবে সেই তো দুদিন পর ডিভোর্স? কিছু মেয়েদের সত্যি বিয়ে করে বরকে ফাঁসিয়ে টাকা নেওয়াটা পেশা এবং নেশার মত হয়ে গেছে।
এমনভাবে যদি যুবসমাজ পরিবার পরিজন থেকে দূরে সরে থাকে তাহলে অচিরেই অনেক আবেগঘন অনুষ্ঠান বিলুপ্ত হবেই। আর বিয়ে না করলে তো জামাইষষ্ঠী হবে না, সেটা তো আইনগত সম্পর্কের অনুষ্ঠান তার বিলুপ্তি বাকি সবের থেকে একধাপ এগিয়ে।