দিন বদলেছে কলকাতা তথা কলকাতাবাসির দৈনন্দিন জীবন যাপনের। দ্রুত গতিশীল জীবনে সাথে তাল মিলিয়ে আমরা অনেকেই এখন আমাদের হাতের মুঠো ফোনের অ্যাপের ওপরেই বিশেষ করে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। দোকান বাজার থেকে শুরু করে যাবতীয় সব কিছুই এখন আপনার আমার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েচে তথ্যপ্রযুক্তি। কিন্তু এই তথ্যপ্রযুক্তি মানুষ কে উন্নত পরিসেবা দেবার কথা বললেও আসলে রয়েগেছে সরষের মধ্যে ভুত।
বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই আমরা কলকাতার নিজস্ব পরিচিতি নোংরা, ভাঙাচোরা নন এসি অ্যাম্বাসাডার মডেল হলুদ ট্যাক্সি কে ছেড়ে সুবিধা ও স্বছন্দের হাল ফ্যাশনের ঠান্ডা এসির হাওয়ার লোভে বেছে নিয়েছি মুঠো ফোনের অ্যাপ নির্ভর ক্যাবগুলিকেই। প্রথম দিকে ধাঁচকচকে গাড়ির সুবিধা উপভোগ করলেও ক্রমেই এক এক করে ধরা পড়ছে ভিতরে লুকিয়ে থাকা দূর্গন্ধময় চরিত্র।
অ্যাপ ক্যাব গুলির বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ ছিল, অ্যাপে ক্যাব বুক করার সময় দেখানো ভাড়া ( যা সাধারণ ভাবেই অনেক বেশী বর্ধিত ) গন্তব্যস্থলে পৌছে যাবার পরেই আরো বেশী হয়ে যায়, এছাড়া দিনের নানান সময় চাহিদা অনুযায়ী ভাড়া বৃদ্ধি করা যার কোথাও নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করার জায়গা নেই বা গ্রাহক পরিসেবা কেন্দ্র নেই। এছাড়া লাক্সারী ক্যাবের মধ্যে চালক থেকে গেছেন সেই সাধারণ মানের গাড়ি চালক যারা প্রাথমিক শিক্ষা টুকুও অর্জন করেননি। ফলত অ্যাপের পরিচালনা, আদেশ বা গুগল ম্যাপের পরিচালনা তারা করতে অক্ষম। ফলত প্রায়শই ক্যাব ব্যাবহারকারী দের সাথে ক্যাব চালকের সংঘাত হয়ে উঠেছে বরাদ্দকৃত।
তবে এসব এখন অতীত। এখন এর থেকেও ভয়ঙ্কর অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে যার শিকার হচ্ছেন মহিলা ক্যাব ব্যাবহারকারীরাই এবং বেশীর ভাগটাই নেশাগ্রস্ত গাড়ি বা ক্যাবচালকের দ্বারা। যা আমরা মাঝে মধ্যেই খবরের শিরোনামে দেখতে পাই। আবারও সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হলেন দক্ষিণ কোলকাতা এক জনদরদী মহিলা আইনজীবী.
ঘটনার সুত্রপাত গত ১৪ই অক্টোবর, শনিবার মহালয়ার দিন সন্ধ্যায়। এদিন দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস অর্থাৎ আমাদের সংবাদ মাধ্যম আয়োজিত “শারদ সুন্দরী” অনুষ্ঠানের মূল পর্বে আক্রান্ত মহিলা আইনজীবী আমন্ত্রিত ছিলেন বিশেষ অথিতি ও বিচারক হিসাবে। সেই অনুযায়ী তিনি নাগের বাজারে অবস্থিত অজিতেশ মঞ্চে আসার জন্য তিনি একটি অ্যাপ ক্যাবের সাহায্য নেন। অ্যাপ ক্যাব টিতে ওঠার পর থেকেই ক্যাবের মধ্যে একটি বিশ্রি গন্ধ অনুভব করতে থাকেন আইনজীবী। ক্যাবের মধ্যে তখন এসি বন্ধ ছিল। দূর্বিষহ গরম ও বিশ্রি দূর্গন্ধ থেকে নিস্তার পেতে আইনজীবী ক্যাব চালক কে ক্যাবের এসি চালাতে অনুরোধ করেন এবং তখন থেকেই ক্যাবের চালক মহিলা আইনজীবী কে প্রথমে কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে শুরু করেন ( যা সংবাদ মাধ্যমে বলা সম্ভব নয় ) আইনজীবী নিরাপত্তাহীনতা বোধ করায় চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে ফেলেন। এর পরেই ক্যাব চালক গাড়ি থামিয়ে আইনজীবী মিতা ব্যানার্জী কে শারীরিক ভাবে হ্যানস্থা করতে শুরু করেন।
ইতিমধ্যে ঘটনাটি লক্ষ্যকরেন পথ চলতি মানুষ ও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। তারপরেই ক্যাব চালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এর পরেই চারু মার্কেট থানায় অভিযুক্ত ক্যাব চালকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্ত মহিলা আইনজীবী।
অভিযুক্ত ক্যাব চালককে গ্রেফতারের পর আজ আলিপুর আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করলে মহামান্য বিচারক, অভিযুক্ত ক্যাব ড্রাইভারের মুক্তির আবেদন খারিজ হয় এবং ওই অভিযুক্ত ক্যাব চালক কে ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আলিপুর কোর্টে আজ এ নিয়ে ছিল এক ঐতিহাসিক দিন। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে, ভারতীয় ন্যায় বিধির শাস্তিযোগ্য ধারা ৩৫৪ প্রয়োগের বিরুদ্ধে, অভিযুক্তের মুক্তির কারনে বা তার হয়ে মামলা বা সওয়াল জবাব করার জন্য কোন আইনজীবী রাজি হননি।
বারং বার এ জাতীয় ঘটনা ঘটলেও এর প্রতিকার স্বরুপ অ্যাপ ক্যাব সংস্থা গুলি নির্বিকার হয়েই থাকেন। তারা এর কোন রকম দায় নিতে নারাজ এবং তারা কোন ভাবেই শিক্ষিত ভদ্র ক্যাব চালক দের নিয়োগ করতে বা বাছাই করে নিয়োগ করতেও রাজিনন।