পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আজ থেকে দশ বছর আগে এক পরশপাথর পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। দশ বছর বোধহয় খুব কম সময়, কারণ এই সেদিনও তিনি ছিলেন, সেদিনও শুটিঙে সকলকে বকাবকি করতেন, সেদিনও নিজের পছন্দমত পোশাক পড়তেন। পৃথিবী থেকে ছয় ঋতু বিদায় নিয়েছে এখন ছজনকে দেখা যায় না কিন্তু বাঙালির ঋতু বিদায় নিয়েছে দশ বছর আগে।
বাংলা সিনেমার জগতে পরশপাথর ছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তার ছোঁয়ায় কত অভিনেতা পাল্টে গেছে, খাটি সোনা হয়ে উঠেছে। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিও তার ছোঁয়ায় ধন্য। বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না দেখা বাঙালি যে দহন, উৎসব, ১৯ শে এপ্রিল দেখতে পারে তা তুমি না বললে কেউ জানতো না। এখন আর্ট ফিল্ম বা প্যারালাল সিনেমার জনপ্রিয়তা বেড়েছে, কিন্তু তুমি যে সময়ে দাঁড়িয়ে সেই সমস্ত ছবি তৈরি করেছ তা আর কেউ পেরেছে কি? বাংলা আর্ট ফিল্মের জনক তোমাকেই বলা যায়। অবশ্য জনক কেন? বাবাই কি শুধু জন্ম দেয়, মাও তো দেয়। না বাবামায়ের লিঙ্গ বৈষম্যে তোমাকে বাঁধবো না, তুমি অগ্র পথিক।
তোমার হাত ধরে সিনেমা কেরিয়ার শুরু করেছে অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী। যিশু সেনগুপ্ত আজ বলিউডে কাজ করছে কিন্তু যিশু যে অভিনয় জানে তা তুমি না জানালে বাঙালি জানত? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায় এরা তখনকার মাস্টারপিস অভিনেতা কিন্তু তাদের এক ঘেয়ে কমার্শিয়াল ফিল্মের বাইরে এনে তাদের অভিনয় করার সুযোগ তো তুমি করে দিয়েছ। তোমার পরিচালিত মেগা ধারাবাহিক গানের ওপারে সেখানের সেই গোরা পুপে প্রদীপ্ত তারাও আজ টলিউডে বেশ পরিচিত নাম কিন্তু যাদের প্রথম সুযোগটাই তুমি করে দিয়েছিলে ঋতুদা। সৃজিত মুখার্জী শিবপ্রসাদ মুখার্জী এরা এখনকার তাবড় চিত্রপরিচালক। শুরুর দিকে তোমার সান্নিধ্য তারাও লাভ করেছে।
বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তে তোমার অবদান অনেক তাও তুমি কি পেয়েছ তাদের থেকে? বাঙালি আজ এত বছর পরেও কোন নরম স্বভাবের পুরুষ দেখলে তাকে ঋতুপর্ণ বলে হেয় করে। কেন তোমার এত অবদান এত গুনের মধ্যে শুধুমাত্র তোমার ওই কোমল সত্ত্বাটাকেই মনে রেখেছে মানুষ তাও ব্যাঙ্গের খাতিরে? মাঝে মাঝে মনে ভাগ্যিস তুমি চলে গেছ। এই বাঙালি সমাজ তোমায় পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তবে এমন কোন মানুষদের কাছে যেও যারা তোমায় তুমি হিসেবে আপন করবে। তোমার গুনের কদর করবে। তবে সব বাঙালিকে দোষ দেব না, আমিও তো বাঙালি, যে তোমাতে বাঁচে। আমার মত কিছু সংখ্যক বাঙালির মনে তুমি বেঁচে থেকো আজীবন।