পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আনন্দমঠ সাহিত্য সম্রাটের অমর সৃষ্টি। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক চরম প্রতিবাদ। ব্রিটিশ সরকারের চাকুরিরত কর্মচারী হয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে কলম ধরার অপরাধে ১৩ বার বদলি হয়েছেন তিনি। চাকুরি চলে যায়নি ঠিকই কিন্তু এই বার বার বদলি কি কম শাস্তির? কিন্তু এতকিছুতেও কি দমানো গেছে এই নির্ভীক মানুষটাকে? না তিনি সাহিত্যের রাজা কলম তার একমাত্র অস্ত্র, সেই কলমের আঘাতেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গেছেন তিনি নিরন্তর।
১৭৭০ সালের মন্বন্তরের সময়ের দেশে ঘটে যাওয়া অরাজকতা নিয়ে সরকারি কর্মচারী কথা বলতে পারেন না, তাই উপন্যাসের আড়াল নিয়েই প্রতিবাদ করে গেছেন আজীবন। ১৭৭৯ সালে চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে লেখা শুরু করেন আনন্দমঠ। ১৯৮১ সালে লেখা শেষ হয়। ১৯৮২ সালের ২৩ শে জানুয়ারি ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় আনন্দমঠ প্রকাশিত হওয়া শুরু হওয়ার দিনই মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে বদলির আদেশ আসে তার। সেই শুরু তারপর ১৩ বার বদলি হতে হয়েছে তাকে।
এ তো গেল আনন্দমঠের কথা, কিন্তু এটাই তো তার একমাত্র সৃষ্টি নয়, তার কলমের আঁচড়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য উপন্যাস। ঐতিহাসিক উপন্যাস থেকে শুরু করে প্রতিবাদী, নির্ভেজাল সামাজিক প্রেমের উপন্যাস সাহিত্যের এই সবকটি অঙ্গনেই তার অবাধ চলাফেরা। দুর্গেশনন্দিনী, দেবী চৌধুরানীর মত ঐতিহাসিক, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, কপালকুণ্ডলার মত সামাজিক উপন্যাস আজও বাংলা সাহিত্যে বিরল।
শুধুমাত্র লেখক নন, বঙ্গদর্শন-এর সম্পাদনার ভার সামলিয়েছেন অনেক দিন। সমাজ সংস্কারক দের ভিড়েও তার চলাফেরা ছিল বরাবর। এহেন মহান মানুষ মহান সাহিত্যিকের ১৮৫ তম জন্মদিন আজ। বাংলা সাহিত্য যতই এগিয়ে যাক না কেন রাজা একজনই। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও শতকোটি প্রণাম।