অম্বিকা কুন্ডু | ২১শে আগস্ট, ২০২৪
গতকাল ২০শে আগস্ট আর জি কর কাণ্ডের প্রথম রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের তীক্ষ্ণ তীরের মত তিনটি প্রশ্নের মুখে পড়লেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সি বি আই এর কাছে ২২শে আগস্ট আর জি কর এর তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণ ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন। রাজ্য সরকারের কাছেও ঐদিনই হাসপাতাল ভাঙচুর তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন । এবং ঐদিন পুনরায় শুনানি হবে।
প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের কাঠগড়ায় তুলে প্রশ্ন করেছেন সকালে মৃতদেহ উদ্ধারের পর এফ আই আর হতে কেন রাত পৌনে বারোটা বেজেছিল? মৃতা চিকিৎসকের দেহ কেন দীর্ঘক্ষণ তার পিতা-মাতাকে দেখানো হয়নি? কেনই বা সর্বপ্রথম অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছিল? সেই মামলায় কি খুনের কথা উল্লেখ ছিল? কেন রাত পর্যন্ত স্পষ্ট খুনের এফ আই আর দায়ের হয়নি?
বিচারপতি জে বি পারদি ওয়ালা জানতে চেয়েছিলেন কখন এবং কার অভিযোগে এফ আই আর দায়ের হয়েছিল? এর উত্তরে রাজ্য সরকার পক্ষের আইনজীবী কপিল জানিয়েছেন দুপুর দুটো ৪৫ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর রিপোর্ট জমা পড়েছিল এবং রাত এগারোটা বেজে ৪৫ মিনিটে মিতার বাবা এফ আই আর দা এর করেছিলেন। প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন পরিবার কখন দেহটিকে নিজেদের কাছে পেয়েছিল? এর উত্তরে প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন সৎকারের তিন ঘন্টা পর এফ আই আর করা হয়েছিল? কি করছিল হাসপাতাল কতৃপক্ষ এর আগে পর্যন্ত? এবং এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্তই বা কে?
সন্দীপ ঘোষের বিষয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। কেন আরজিকর কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করার সাথে সাথেই তাকে অন্য কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হয়? এবং তাকে নিয়ে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনাটাই বা কি? এর উত্তরে সিব্বল জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে বর্তমানে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় কেউ মেনে নেবে।
এরপর প্রশ্ন উঠে ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাতে হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ কেন ঘটনাস্থল ছেড়ে পলাতক হয়েছিল? যেখানে পুলিশের কাজ আইন এবং জনসাধারণকে সুরক্ষিত রাখা। অথচ পুলিশ পলাতক। পুলিশের পলাতকের কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
এর উত্তরে সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন ওই ঘটনার কারণে পুলিশ ৫০ টি এফ আই আর দায়ের করেন এবং তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এই উত্তরের পাল্টা প্রশ্ন আর জে করার সামনে সাত হাজার মানুষের ভিড়ের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ জন ভাঙচুর চালিয়েছিল। অথচ পুলিশ কি তা আগে থেকে আঁচ করতে পারিনি এত মানুষের ভিড়ে কিছু মানুষ ঝামেলা করার প্রবণতা নিয়ে থাকতে পারে? যদি আজ করেই থাকে তবে কি করছিল পুলিশ? কিভাবে বা আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্যাতিতা মৃতা তরুণী চিকিৎসকের ছবি,নাম, তার পরিবারের পরিচয় ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়?
এই ঘটনাকে সরকারি পক্ষের আইনজীবী মেনে নেন এবং এর উত্তরে জানান ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মৃতার ছবি তোলা হয় এবং তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এবং ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাতের ঘটনার উত্তরে জানানো হয় হাসপাতাল চত্বরে আগে থেকেই পুলিশ মোতায়েন ছিল। তা সত্ত্বেও বাইরের ভিড় ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী আসার আগেই ভাঙচুর হয়ে যায়।
৫০টি এফ আই আর এবং ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা নিয়ে কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন ৫০টি এফ আই আর এর অর্থ তদন্ত থেকে বিরত থাকা এর সাথে এও বলেছেন এই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে ২২ শে আগস্ট জমা করতে হবে। এবং ওই রিপোর্ট সিবিআইকেও দেওয়ার দাবি তোলেন তুষার মেহতা। কিন্তু আইনজীবী সিম্বল তাতে আপত্তি জানিয়ে বলেছেন রিপোর্ট তাদের কাছে গেলে তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়বে এবং তা নিয়ে পুনরায় উত্তেজনার সৃষ্টি হবে।