চেন্নাই: ভারতের বহুভাষিক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। সম্প্রতি, তামিলনাড়ুর মন্ত্রী ও ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিন প্রকাশ্যে হিন্দি ভাষার আধিপত্যের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, হিন্দির আগ্রাসনের কারণে বহু আঞ্চলিক ভাষা ধ্বংস হয়েছে, যার প্রমাণ স্বরূপ তিনি একটি ভাষার তালিকাও প্রকাশ করেছেন।

হিন্দি আগ্রাসন বনাম আঞ্চলিক ভাষার অস্তিত্বসংগ্রাম
ভারতে মোট ২২টি সাংবিধানিক ভাষা স্বীকৃত হলেও, দেশে ১৯,৫০০-র বেশি ভাষা ও উপভাষা প্রচলিত ছিল। কিন্তু, ভাষাগত আধিপত্য ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বহু ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। উদয়নিধি স্ট্যালিন তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন, কয়েক দশকের ব্যবধানে অন্তত ১৫০-র বেশি আঞ্চলিক ভাষা হারিয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে রয়েছে।

কোন কোন ভাষা হুমকির মুখে?
স্ট্যালিনের প্রকাশিত তালিকায় উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষার নাম—
টুলু (কর্নাটক ও কেরালা)
কোডাভা (কর্ণাটকের কোডাগু অঞ্চল)
কোঙ্কনি (গোয়া, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক)
বোজপুরী, মৈথিলী, মগধী (বিহার, উত্তরপ্রদেশ)
অঙ্গিকা (ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ)
গারো, খাসি, মণিপুরি, মিজো (উত্তর-পূর্ব ভারত)
তার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ও শিক্ষানীতির মাধ্যমে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার ফলে এই ভাষাগুলোর ব্যবহার কমে গেছে, যা একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দেয়।

‘এক দেশ, এক ভাষা’ নীতির বিরোধিতা
উদয়নিধি স্পষ্ট করেছেন যে “এক দেশ, এক ভাষা” ধারণাটি ভারতের বহুভাষিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী। তিনি বলেন, “ভারত কোনও একভাষিক দেশ নয়। এখানে প্রতিটি ভাষার সম্মান রক্ষা করা জরুরি। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার ফলে স্থানীয় ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, যা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর সরাসরি আঘাত।”

দক্ষিণ ভারতের প্রতিবাদ
তামিলনাড়ু বরাবরই হিন্দি আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে। ১৯৩৭ সালে রাজাজির হিন্দি বাধ্যতামূলক নীতির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল, তা ১৯৬৫ সালে নতুন রূপ নেয়। আজও ডিএমকে ও অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলি এই নীতির বিরোধিতায় সরব।

ভাষাগত ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন
উদয়নিধি কেবল ভাষাগত সমস্যা নয়, বরং এই বিষয়কে সাংস্কৃতিক ন্যায়বিচারের লড়াই হিসেবেও দেখছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরকারকে আঞ্চলিক ভাষাগুলির সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে এবং NEP 2020 (নতুন শিক্ষানীতি) সংশোধন করে প্রতিটি ভাষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার
ভারতের মতো ভাষাগত বৈচিত্র্যের দেশে হিন্দি আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাড়ছে। উদয়নিধির এই বক্তব্য আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণের পক্ষে একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে। তবে সরকার এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়া কীভাবে দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।