Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

কোন পথে বাংলা, ঠিক হবে পঞ্চায়েত ভোটে

Table of Contents

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

সমটা ২০০৮ সাল। তখন বাংলা শাসন করছে বামফ্রন্ট সরকার। প্রবল প্রতাবান্বিত বামেদের সরকার। দু’বছর আগেই ২০০৬ সালে রেকর্ড ২৩৫ আসন জিতে সপ্তমবারের জন্য বাংলার ক্ষমতা দখল করেছে তারা। কিন্তু তারপর‌ই যেন বাংলার রাজনীতির চাকাটা উল্টো দিকে ঘুরে গেল। আরও দাপট দেখানোর পরিবর্তে যেন পিছু হটা শুরু হয় সরকার ও শাসক দল সিপিএমের। আসলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছিল। ওই ২০০৮ সালে ছিল রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর সেই ভোটের ফল‌ই কার্যত বদলে দিল বাংলার রাজনীতির গতিপথকে।

কেমন ফল হয়েছিল ২০০৮ এর পঞ্চায়েত ভোটে? জেলা স্তরের ফলাফলে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টেরই মোটামুটি আধিপত্য বজায় ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই লখিন্দরের বাসর ঘরের ছিদ্রটি দিব্যি দেখা যাচ্ছিল। সকলকে চমকে দিয়ে ওই ভোটেই মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ দখল করে বিরোধীরা। মুর্শিদাবাদের ক্ষমতা যায় কংগ্রেসের হাতে, আর দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস।

এই ফলকে প্রকাশ্যে সিপিএম নেতৃত্ব খুব গুরুত্ব দিতে চায়নি। তবে দলের অভিজ্ঞ সংগঠকরা তখনই অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন। বিশেষ করে কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফল তাঁদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ওই জেলার নেতা। তা সত্ত্বেও জেলা পরিষদ হাতছাড়া হওয়ায় অভিজ্ঞ বাম নেতারা বুঝেছিলেন, ইয়ে ইশারা সমাজদার কো লিয়ে কাফি হ্যায়!

পঞ্চায়েত, পুরসভার ভোটে সাধারণত শাসকের অনুকূলেই রায় দেয় জনতা। কিন্তু সেখানে মাত্র দু’বছর আগে বিপুল জনাদেশ নিয়ে সপ্তমবারের জন্য রাজ্যের ক্ষমতায় আসা বামেদের বিরুদ্ধে মানুষের এইভাবে ক্ষোভ ভোট বাক্সে প্রতিফলিত হওয়াটা যে গড়পড়তা বিষয় নয় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে বামেদের জন্য সবচেয়ে আতঙ্কের ইঙ্গিত ছিল গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের ফলাফলে। নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই ২৪ পরগনা সহ বহু জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে একচেটিয়া ভালো ফল করে বিরোধীরা। দীর্ঘদিন দখলে থাকা বহু পঞ্চায়েত হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল বামেদের।

ওই পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের বছর‌ই ছিল ২০০৯ লোকসভা নির্বাচন। সেই ভোটে প্রথমবারের জন্য বাংলায় পরাজিত হয় বামফ্রন্ট। তাদের থেকে বেশি আসনে জয়ী হয় বিরোধীরা। সেই ধারাবাহিকতা মেনেই আরও দু’বছর পর ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের হাতছাড়া হয় বাংলার ক্ষমতা।

বামেদের বিপর্যয়ের এই ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পরবর্তীতে বহু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে যদি বামেরা ধাক্কা না খেত তবে ২০১১ সালে তারা নাও বাংলার ক্ষমতা হারাতে পারত! কারণ হিসেবে তাঁদের যুক্তি, দীর্ঘ বাম শাসনের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই সমাজের একটি শ্রেণির মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছিল। কিন্তু বামেদের‌ও যে পরাস্ত করা যায়, তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিলে ফলাফল পাওয়া যাবে সেটা রাজ্যের বাম বিরোধী ভোটকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল। সেই কারণেই উপর উপর বামেদের সঙ্গে থাকলেও ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অনেকেই সিপিএম সহ বাকি বাম দলগুলোর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দেয়। যে ধারাবাহিকতা চূড়ান্ত পরিণতি পায় ২০১১-র বিধানসভা ভোটে।

এই মুহূর্তে খুব বেশিদূর ভাবার দরকার নেই। কিন্তু রাজ্য-রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি যে জায়গায় তাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আর কয়েক মাস পরই আয়োজিত হতে চলা পঞ্চায়েত নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে বিরোধীরা যদি একবার ভালো ফল করতে পারে তবে উজ্জীবিত হয়ে উঠবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল বিরোধী সমগ্র জনমত।

এই ভালো ফলের জন্য বিরোধীদের যে একজোট হতেই হবে তার কোন‌ও মানে নেই। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে তৃণমূল কংগ্রেসের ফল ভালো হল না খারাপ। শত বিতর্ক, হাজার দুর্নীতির সত্ত্বেও তৃণমূল যদি নিজেদের ভোট মেশিনারি ব্যবহার করে ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করতে পারে তবে তাদের খুব আশঙ্কার কিছু নেই। কিন্তু সারা রাজ্যের মধ্যে যদি দু-তিনটেও জেলা পরিষদ তাদের হাতছাড়া হয় এবং প্রতিটি জেলায় যদি বেশ কিছু পঞ্চায়েত সমিতি এবং সংখ্যায় বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত বিরোধীরা তাদের মত করে দখল করে নিতে পারে তবে কিন্তু ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বিপুল চাপে পড়ে যাবে বাংলার শাসক দল।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের খারাপ ফল মানেই আর‌ও তেরেফুঁড়ে আসরে নামবে বিরোধীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের থেকেও শাসকদলের বেশি বিপদ ডেকে আনবে তৃণমূল বিরোধী জনমত। বিরোধীরা একজোট না হলেও সেই জনমত নিজের মত করে তৃণমূলকে হারাতে পারে এমন পক্ষকে ঠিক নিজের মত করে বেছে নিতে সক্ষম।

আর ঠিক এই কারণেই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন সংঘর্ষবহুল হতে পারে বলে আশঙ্কা। কারণ পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের গুরুত্ব তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে নিচুতলার নেতাকর্মীরা পর্যন্ত ভালই জানেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। উল্টোদিকে বিরোধী নেতাকর্মীরাও জানে, পঞ্চায়েত ভোটে যদি একবার তৃণমূলের গড়ে ফাটল ধরানো যায় তবে সোনায় সোহাগা! তাই তারাও মরিয়া হয়ে উঠবে। আর তাছাড়া বাংলার রাজনীতির কুৎসিত ঐতিহ্যই হল নির্বাচন মানেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ!

সবমিলিয়ে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন যেমন আরও অশান্তিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা, তেমনই বাংলার রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণেও তা মোড়ের কাজ করবে।

More Related Articles

সম্পাদকীয়
বারাসতে ৫ মাসে নিখোঁজ ৫০০ গৃহবধূ! পরকীয়ার জেরে দাম্পত্যে ভাঙন

বারাসতে পাঁচ মাসে নিখোঁজ ৫০০-র বেশি গৃহবধূ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উঠে এসেছে পরকীয়ার প্রসঙ্গ। সমাজতাত্ত্বিক ও পুলিশ—উভয়েরই আশঙ্কা, সময় থাকতেই যদি সচেতন না হওয়া যায়, তবে বড় সামাজিক সঙ্কট আসন্ন।

Read More »
বিশেষ খবর
যুদ্ধ নয়, শান্তির বার্তা! কলকাতার ইসকনের ৫৪তম রথযাত্রা এবার মিলনের রথ

যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবার শান্তির বার্তা নিয়ে হাজির কলকাতার ইসকনের ৫৪তম রথযাত্রা। বোয়িং যুদ্ধবিমানের আদলে তৈরি রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার আগমন, উদ্দেশ্য একটাই—বিশ্বশান্তি ও মানবতা।

Read More »
মতরঞ্জি
সম্পাদকীয়
সবং-এর উঠোন থেকে ইউরোপের ড্রয়িংরুমে—মাদুর শিল্পের গ্লোবাল যাত্রা শুরু হয়েছে নিঃশব্দ বিপ্লবের মাধ্যমে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং-এর ঘরোয়া উঠোনে গড়ে ওঠা মাদুর শিল্প আজ পৌঁছে গিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানের বাজারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ, শিল্পীদের উদ্ভাবনীতা ও গৌরীবালা দাস-এর মত শিল্পীদের অবদান মিলিয়ে এই ঐতিহ্য আজ বিশ্বে বাংলার পরিচয়।

Read More »
সম্পাদকীয়
পুরী রথযাত্রা ২০২৫: তিনটি অলৌকিক রহস্য যা আজও অমীমাংসিত

“পুরীর রথযাত্রা ২০২৫ শুধু এক ধর্মীয় উৎসব নয়—তাতে লুকিয়ে আছে এমন তিনটি রহস্য যা যুগের পর যুগ ধরে অব্যাখ্যাত। অসম্পূর্ণ মূর্তি, বাতাস-বিরুদ্ধ পতাকা ও যমশিলা ধাপের অমঙ্গল—এই তিনটি অলৌকিক ঘটনা এখনও বিশ্বাস আর বিজ্ঞানের মাঝে দোল খাচ্ছে।”

Read More »
বিশেষ খবর
ইরান–আমেরিকা উত্তেজনার মাঝেই ‘বাবা ভাঙ্গা’র ভবিষ্যদ্বাণী আবারও চর্চায়

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের আবহে আবারও উঠে এলো বাবা ভাঙ্গার ২০৬৬ সালের ভয়ংকর অস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণী। সত্যিই কি এমন কিছু তৈরি হতে চলেছে যা মানব সভ্যতাকে বিপদের মুখে ফেলবে?

Read More »
naser kanani
আন্তর্জাতিক খবর
ট্রাম্প ঘোষণা দিলেও ইরান স্পষ্ট বলল—‘যুদ্ধবিরতি এখনও হয়নি’!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করলেও ইরান জানাল, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়নি। যদি ইজরায়েল হামলা না করে, ইরানও সংঘাতে যাবে না—এই বার্তা দিল তেহরান।

Read More »
error: Content is protected !!