গ্রীষ্মকালে গরমের ভয়াবহ অত্যাচার প্রথমেই ছাপ ফেলে যায় আমাদের ত্বকে। নিত্যদিন বাইরে যাওয়া হচ্ছে, রোদের সাথে সামলাতে হচ্ছে আরো নানা রকম দূষণ। এতো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে গিয়ে ত্বক ক্লান্ত হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। এবং সেই ক্লান্তির সাথে কিছু দৃশ্যমান বড়সড় সমস্যা হোল র্যাশ, সানট্যান, আরো কতোকিছু ! ওদিকে চাকুরীজীবন তো শ্বাস নেয়ার অবসরটাও দিতে চায় না। সন্ধ্যা পার করে ঘরে ফিরে কয়জনেরই আর মন চায় ক্লান্ত শরীরে ত্বকের যত্ন নিতে বসতে !
এই রূপচর্চার আয়োজনের ঝক্কি পোহাতে চান না যারা, তাদের জন্য চটজলদি সমাধানও কিন্তু কম নেই। সবসময় যে বহু কেচ্ছা-কাহিনী করেই ত্বকের দেখভাল করতে হবে, তেমনটা তো বলা নেই কোথাও। নিজেকে ভালো রাখতে আপনি সামান্য যেটুকু করতে পারবেন, সেটা অন্তত বাদ দেবেন না। অল্প যা কিছু প্রাকৃতিক উপকরণ থাকা দরকার এই সময়ে ত্বকের যত্নে, তা যেন থাকে আপনার কাছাকাছি। আর লাগবে নিজের জন্য কয়েক মিনিট সময়। তবেই গরমের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে আপনার ত্বক হাসিখুশি থাকবে।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা
ঘৃতকুমারী, যাকে অ্যালোভেরা নামেই বেশি চেনে মানুষ, ত্বকের বিপদ-আপদে নিশ্চিন্তে ভরসা করুন তাকে। অ্যালোভেরা একটুখানি ভেঙ্গে নেবেন, দুই পাশ কেটে নিয়ে উপরের শক্ত আবরণটুকুও কেটে বাদ দেবেন। এবার সাবানের মতন পুরো মুখে লাগিয়ে নিন জেলটুকু। মিনিট পনেরো ত্বকে কাজ করার সময় দিন এই জাদুকরী নির্যাসকে। তারপর নিয়ম মতো বেশি করে জলের ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিনই সময় না হলে একদিন পরপর অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন ত্বকে। তাও না পারলে নাহয় দুদিন পরপর করবেন। আপনার ত্বক অনেকটাই সুস্থ, প্রাণবন্ত থাকবে তাতে।
গোলাপজল –
এক শিশি গোলাপজল আপনার কাছে এই গরমে থাকা চাই। ফেসপ্যাক ব্যবহারের ঝামেলায় যান বা না যান, কেবল গোলাপজলই মাঝেমাঝে মুখে লাগিয়ে রাখুন কয়েক ফোঁটা নিয়ে। গোলাপজল ফ্রীজে রাখবেন, আরো স্বস্তি মিলবে ঠান্ডা গোলাপজল মুখে লাগালে। কখনো আবার মুখ ধোয়ার জল একটা পাত্রে নিয়ে তাতে খানিকটা গোলাপজল ঢেলে দেবেন, মুখ ধোয়ার পর প্রশান্তির অনুভূতি পাবেন তাতে। ত্বকও সতেজ লাগবে।
সবজির আলু আর সালাদের শসা –
রান্না করার সময়, আগেভাগেই নিজের জন্যে দুই টুকরো আলু সরিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবেন। একইভাবে শসার সালাদ হলে একটুখানি শসা তুলে রাখুন ত্বককে খুশি করতে। থেঁতো করে রস বের করার সময় নেই, ইচ্ছা নেই, তাতে বড় কোন অসুবিধাও নেই। কাঁটা চামচ দিয়ে কেঁচে নিন আলুর টুকরো, শসাকেও এইভাবে কেঁচে নিয়ে রস বের করতে পারেন। আলুর টুকরো এবার ত্বকে আলতো করে চেপে রসটুকু লাগিয়ে নিন। পোড়া ত্বকের ভালো ওষুধ এই আলুর রস। শসার রসও এভাবে ব্যবহার করা যাবে পুরো মুখে। এবং চোখের উপরেও আলু আর শসা দুটিই ব্যবহারযোগ্য। ত্বকের পোড়াভাব, কালচে দাগ দূর করতে অল্প পরিশ্রমে এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই।
ডাবের জল –
বেশ ভালো প্রাকৃতিক ক্লিনজার হলো ডাবের জল। কিচ্ছুটি মেশানোর ঝামেলা নেই। সরাসরি ডাবের জল দিয়ে ত্বক ধুয়ে নেবেন, বা বাটিতে নিয়ে তুলো কিংবা নরম কাপড় ভিজিয়ে সেটা মুখে লাগাবেন। কিছুক্ষণ রেখে তারপর একবার জলের ঝাপটা দিয়ে নেবেন মুখে। যদি একটু বেশি সময় থাকে হাতে, ডাব কেটে ভেতরের নির্যাসটুকু বের করে নিন। ত্বকে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। শীতল চনমনে একটা ভাব আসবে ত্বকে। মলিনতা কাটিয়ে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে ডাবের জল ভীষণ কার্যকরী।
এই প্রতিটি পদ্ধতি করতেই আপনার মিনিট বিশেকের বেশি সময় লাগবে না। আর না আছে কিছু তৈরি করার বাড়তি কাজ। কেবল অলসতা কাটিয়ে নিজেকে এইটুক সময় দেয়া চাই, ব্যস। নিয়মিত যখন আপনি নিজেকে এই যত্নটা দেবেন, আপনার ত্বক গরমের কড়া শাসনেও দিব্যি ফুরফুরে আর প্রাণবন্ত থাকবে।