পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আমরা সকলেই জানি গাছের প্রাণ আছে। কিন্তু গাছ যে চলতে পারে এমন কথা কেউ কখনও শুনেছেন কি? মাংসাশী গাছের কথা আমরা সকলেই শুনেছি কিন্তু চলমান গাছ? না কোনও অলৌকিক বা ভূতুড়ে কাণ্ড নয়, সত্যি চলতে পারে একটি বিশেষ প্রজাতির গাছ। দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় অরন্যে দেখা পাওয়া যায় এই বিশেষ প্রজাতির গাছ। সময়ের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ। এই তাই এই গাছের নাম ‘ওয়াকিং পাম’।
‘ক্যাশাপোনা’ নামক এই বিশেষ প্রজাতির পাম গাছ মুলত ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে ১০০ কিমি দূরে অবস্থিত সুমাকো বায়োস্ফিয়ারে দেখা যায়। স্লোভাক ইন্সটিটিউট অব সাইন্সের গবেষক পিটার ভ্রানস্কি সত্তরের দশকে এই উদ্ভিদের সন্ধান পান। সেই সময় সেই কথা বিশ্বাস করেনি বিজ্ঞানী মহল। ৮০ দশকে সেখানে পুনরায় অভিযান চালান জীববিজ্ঞানী জন এইচ বোদলে। বোদলের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট অনুযায়ী এই তথ্য মেনে নেয় বিজ্ঞানী মহল।
সাধারনত ৬০-৭০ ফুট লম্বা এই গাছগুলি অনেকটা বাংলার সুন্দরী গাছের মত দেখতে হয়। সুন্দরী ম্যানগ্রোভ গাছ হওয়ার জন্য তাতে শ্বাসমূল ও ঠেস মূল দেখা যায়। ক্যাশাপোনা পাম গাছও দেখতে অনেকটা সেরকমই। এই অঞ্চলে মাটি আলগা এবং জল ধারণ ক্ষমতা কম হয় এবং অরন্যের গভীরে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না। তাই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই অবস্থান পরিবর্তন করে গাছগুলি। এই গাছ খুব দ্রুত নতুন ঠেসমূল তৈরি করতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে পুরনো ঠেস মূলগুলি খসে যায় গাছ থেকে। তাই নতুন ঠেস মূল গঠন করে এবং পুরনো ঠেস মূল বিচ্ছিন্ন করে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে গাছগুলি। মুলের পাশাপাশি কাছের মূল কাণ্ডও সরে আসে একটু একটু করে। এইভাবে প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করে ওয়াকিং পাম।
পরিসংখ্যান বলছে রোজ প্রায় দেড় থেকে দুই সেন্টিমিটার করে সরে যায় গাছগুলি। বছরে প্রায় ২০ মিটার পর্যন্ত নিজের অবস্থান থেকে সরে আসে গাছগুলি। এই পাম গাছে হলুদ হলুদ ফল হয়। ওই অঞ্চলের আদিবাসীরা সেই ফল খায়। ক্যাশাপোনা পাম গাছের শিকড় থেকে এফ্রোডিসিয়াক এবং হেপাটাইটিস রোগের ওষুধ তৈরি হয়।