বাঙালির কাছে গোলবাড়ির কষা মাংস একটা আবেগ। কালচে বাদামী রঙের গ্রেভির সঙ্গে মাটনের মিশেল, যা মুখের মধ্যে তৈরি করে অনবদ্য স্বাদের মিশেল তৈরি করে। আজ রইল খাস গোলবাড়ির কষা মাংসের রেসিপি সঙ্গে সিক্রেট মশলার হদিশ-
গোলবাড়ি স্টাইলে কষা মাংস বানাতে লাগবে-
মাটন- ৫০০ গ্রাম
ম্যারিনেশনের জন্য-
কাঁচা পেঁপের রস – ২ টেবিল চামচ
আদা-রসুন-শুকনো লঙ্কা বাটা – ১ টেবিল চামচ
সর্ষের তেল- দেড় টেবিল চামচ
দইয়ের মিশ্রণ-
দই-২ টেবিল চামচ
ধনে গুঁড়ো- ১ চা-চামচ
হলুদ গুঁড়ো- আধ চা-চামচ
কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো- ১ চা-চামচ
ভাজা পেঁয়াজ (বেরেস্তা) – ২টি ছোট পেঁয়াজ
মশলার মিশ্রণ বানাতে লাগবে-
শুকনো লঙ্কা- ৩ বা ৪টি
দারচিনি- ২ মিডিয়াম স্টিক
বড় এলাচ- ১ টি
স্টার অ্যানিস- ২
ছোট এলাচ- ৪/৫টি
লবঙ্গ- ৮ থেকে ১০টি
গোলমরিচ- ৯-১০টি
জৈত্রী- ১টি পাপড়ি থেকে ১টি স্ট্রান্ড
জায়ফল- পুরোটার ১/৪ অংশ
তেজপাতা- ২-৩টি
রান্নার জন্য যা যা লাগবে-
পেঁয়াজ বাটা- ১ কাপ
আদা-রসুন-কাঁচা লঙ্কা বাটা- ১/২ টেবিল চামচ
দইয়ের মিশ্রণ
মশলার মিশ্রণ- ১ টেবিল চামচ
ভাজা পেঁয়াজ বাটা- ৩/৪ টেবিল চামচ
ম্যারিনেট করা খাসির মাংস
নুন- স্বাদমতো
চিনি – ১/২ চা-চামচ বা স্বাদ অনুসারে
ঘি/মাখন – ১/২ চা-চামচ
রান্নার জন্য সর্ষের তেল
চায়ের লিকার- ১ টেবিল চামচ (২ টেবিল চামচ জল এবং ১/২ টেবিল চামচ চা দিয়ে লিকারটা প্রস্তুত করে নিন)
প্রণালী-
প্রথমে মাটন ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এবার একটি বাটিতে মাংস মাংসের মধ্যে একে একে পেঁপের রস, আদা-রসুন-শুকনো লঙ্কার পেস্ট এবং সর্ষের তেল দিয়ে ভাল করে মাংসটাকে ম্যারিনেট করে নিন। এবার বোলের মুখটা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢেকে ৩-৪ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন।
এখন বেরেস্তা বানানোর জন্য একটা কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচিটা দিয়ে গোল্ডেন ব্রাউন করে ভেজে নিন। খেয়াল, রাখবেন পেঁয়াজ যেন পুড়ে না যায়। পেঁয়াজ ভাজার পর তা ঠান্ডা করে বেটে নিন। এই বেরেস্তার ব্যবহারটা আবশ্যিক, এর জন্যই কিন্তু কষা মাংসের মঙ গাঢ় বাদামী রঙের হবে।
অন্যদিকে মশলা তৈরির সমস্ত উপকরণগুলি একটি শুকনো তাওয়ায় ড্রাই রোস্ট করে গুঁড়ো করে নিন, অতিরিক্ত ভাজবেন না। হালকা গন্ধ বেরলেই নামিয়ে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। তবে গোলবাড়ির কষা মাংসের গ্রেভিটা একটু দানা দানা থাকে। এরকম টেক্সচার আনার জন্য আপনারা দারচিনি, ছোট এলাচ এবং তেজপাতাটাকে একটু আলাদা করে শিলে বা হামানদিস্তায় পিষে নিন। তবে আপনাদের হাতে সময় কম থাকলে আপনারা সব মশলা একসঙ্গেও গুঁড়ো করে নিতে পারেন। অন্য একটি পাত্রে দই নিয়ে তার মধ্যে একে একে ধনে গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে দইটা ফেটিয়ে নিন, যাতে কোনও লাম্প না থাকে।
এবার গ্যাসে কড়াই বসিয়ে তাতে তেল গরম করে তেলের মধ্যে দিয়ে দিন পেঁয়াজ বাটা। পেঁয়াজটা ৩-৪মিনিটের জন্য কষিয়ে নিন। এবার এর মধ্যে আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে আরও ২ মিনিট মতো কষিয়ে নিন, যাতে কাঁচা ভাবটা চলে যায়। এর মধ্যে দিয়ে দিন আগে থেকে বানিয়ে রাখা ফেটানো টক দইয়ের মিশ্রণটা এবং খানিকটা জল। এই সময় আঁচ কমিয়ে রান্না করুন এবং খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকুন, যাতে দইটা মশলার সঙ্গে মিশে যায়। মিশিয়ে নেওয়ার পর এর মধ্যে দিয়ে দিন আগে থেকে গুঁড়ো করে রাখা মশলাটা এবং বেটে রাখা বেরেস্তাটা। এবার গোটা মিশ্রণটি ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে, যা এই রান্নার জন্য বিশেষভাবে জরুরি। এর জন্য ধৈর্য ধরে কম আঁচে মশলাটা ভালোভাবে কষাতে থাকুন, যতক্ষণ না মশলা থেকে তেল বেরচ্ছে এবং একটা গাঢ় বাদামী রঙ আসছে।
যদি মনে হয় মশলাটা ড্রাই হয়ে যাচ্ছে তাহলে একটু করে জলের ছিটে দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার মশলা থেকে তেল বেরতে শুরু করলে এর মধ্যে ম্যারিনেট করা মাংসটা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এবার ফ্লেমটা বাড়িয়ে দিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না হতে দিন, তবে দেখবেন তা যেন পুড়ে না যায়। এরপর মাংসটা আরও একটু নাড়াচাড়া করে ১০-১৫ মিনিটের জন্য আবার কম আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করে নিন। এরপর মটন থেকে একটু জল বের হলে এর মধ্যে দিয়ে দিন স্বাদমতো নুন ও চিনি। এরপর ফের ঢাকা দিয়ে ৩০-৪০ মিনিট মতো দমে রান্না করে নিন। একেবারে কম আঁচে সময় নিয়ে রান্না করলে তবেই কিন্তু একদম গোলবাড়ির মতো টেক্সচার আসবে।
এরপর মটন যখন ৮০ শতাংশ সেদ্ধ হয়ে গেলে এর মধ্যে দিয়ে দিন চায়ের লিকার। এরপর একইভাবে কম আঁচে রেখে ১০ মিনিটের জন্য ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিন। এবার মাটন সেদ্ধ হয়ে আসার পর শেষবার গ্যাসের আঁচটা এক মিনিট মতো বাড়িয়ে দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে এর মধ্যে দিয়ে দিন ঘি। এরপর গ্যাসের ওপরেই ঢাকা দিয়ে রেখে একটু স্ট্যান্ডিং টাইম দিন। তৈরি হয়ে গেল গোল বাড়ি স্টাইলে কষা মাংস।