পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ জাপানের একটি বিখ্যাত খাবার ‘নাকামুরায়ার কারী’। জাপানে খুব বিখ্যাত এই পদটি তৈরি হয়েছিল এক বাঙালির চেষ্টায়। নাকামুরায়ার কারী আসলে বাঙালির প্রিয় আলু দেওয়া মুরগির ঝোল। বাংলার এই নিজস্ব খাবার জাপানের বিখ্যাত খাবার হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে এক বাঙালি বিপ্লবীর অবদান।
সাল ১৯১২ দিল্লীতে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জকে হত্যা করতে বোমা বিস্ফোরণ করা হল। গোয়েন্দাদের নিশানায় দোষী সাবস্ত হলেন বিপ্লবী রাস বিহারী বসু। তাকে ধরার জন্য ওয়ারেন্ট জারি হল। ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় সেজে জাপানে পালিয়ে গেলেন বিপ্লবী। এই পর্যন্ত ঘটনা ইতিহাসে সকলেরই জানা। জাপানের রাজনীতিবিদ মিতসুরু তোয়ামার সাহায্যে তিনি আত্মগোপন করলেন টোকিওর সিনজুকুর নাকামুরায়া বেকারির বেসমেন্টে।
সেখানে গিয়ে নিজের দেশকে দেশের খাবারকে মনে করতেন সবসময়। একদিন নাকামুরায়া বেকারিতে বানিয়ে ফেললেন বাংলার ঝাল ঝাল মুরগির ঝোল। সেই খাবার খেলেন বেকারির দুই কর্ণধার আইজো ও কোতসুকো সোমা এবং তার বোন তথা রাসবিহারী বসুর হবু স্ত্রী তোশিকো। টক দই, পেয়াজ, আদা, রসুন, আলু দিয়ে তৈরি সেই মুরগির ঝোল অচিরেই জাপানিদের পছন্দের একটি খাবার হয়ে ওঠে। নাকামুরায়া বেকারিতে তৈরি হয়েছিল বলেই তার নাম হয়ে দাঁড়ায় ‘নাকামুরায়া কারী’।
তারপর কেটে গেছে প্রায় ১০০ বছর। কিন্তু এই খাবারের জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি জাপানীদের কাছে। নাকামুরায়াতে এর বর্তমান নাম ‘অরিজিনাল বোস রেসিপি কারী’। শোনা যায় ২০০১ সাল থেকে এই খাবার ডেলিভারিও শুরু করেছে এই বেকারি। আরও শোনা যায় নাকামুরায়া প্রসেসড ফুড ডিভিশনের লাভের অর্ধেকের বেশি অংশ নাকি এই রেসিপি থেকেই আসে। এই অথেনটিক ইন্ডিয়ান কারী জাপানের বিখ্যাত খাবার হয়ে থেকে গেল এতগুলো বছর। ভারতের ইতিহাসে রাস বিহারী বসুকে লোকে প্রায় ভুলে গেলেও জাপানী রসনার ইতিহাসে তিনি চিরউজ্জ্বল।