আমরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের জীবনের সংঘর্ষে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছি। করোনা কালের পরে তা আরো তীব্রতর হয়েছে। দুচোখে স্বপ্ন থাকলেও পুঁজিবাদের চড়া বাজারে সে স্বপ্ন বড়ই সস্তা আর ঠুনকো। প্রতিদিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্য বৃদ্ধি আর ভোগবাদী বিজ্ঞাপনের হাতছানিতে মানুষের মান আর হুঁশ দুই দ্বিধাগ্রস্ত। বাড়ছে রিলস্ আর ইউটিউব ভ্লগিং এর নামে ডিজিটাল বেশ্যাবৃত্তি।
কর্মহীনতা,বেকারত্বের জ্বালায় আত্মহত্যার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। একাকিত্ব, অক্ষমতা, অর্থহীনতা সহ নানান সমস্যা কে মাথায় নিয়েও জীবন যুদ্ধে লড়ে যাবার এক দারুন উদাহরন বা দৃষ্টান্ত তৈরী করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের সরস্বতী দত্ত।
জীবনের শুরুটা ছিল রঙিন, স্বপ্নের মতো। সরস্বতী কে স্বপ্ন দেখিয়েছিল কোন এক স্বপ্নের ফেরিয়ালা। সারাটা জীবন পাশে থাকবে, আগলে রাখবে, ভালোবাসবে। বিয়েও হয়েছিল তার সাথেই কিন্তু তার মুখোশ খুলেগেছিল বিয়ের পরেই। শেষ হলো রঙিন স্বপ্নের জালবোনা, ভালোবাসা নিমেষেই রুপ বদলে অত্যাচারে পরিনত হল ক্ষনিকেই। এরপরেই যবনিকা পতন সংসারের। তাঁর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। কোলে তখন দুটি শিশু সন্তান। বাবা মা ভাই বোন কেউ ছিলনা সরস্বতীর, কেউছিল না পাশে দাঁড়াবার মতো। কিন্তু সরস্বতী হেরে যাননি। বাংলায় এম এ পাশ হয়েও সরকারি সহায়তা বা চাকরির আশা না করেই দুই শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শুরু করেন তার জীবন যুদ্ধ।
একটি সাইকেলে করে ঘুগনি, আলুরদম ও ডিম সিদ্ধ ফেরি করে বেড়ান। দিনের রোজগার নেহাত মন্দ না। দুটি শিশু সন্তানের মুখে অন্ন জোগাড় হয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়। অবাক হতে হয় যখন এই সরস্বতী সারাদিনের পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের পড়ান।
কি মনে হয়? পারবেন না আপনি? সরস্বতীর মতো আপনিও পারবেন ঠিক রাস্তা খুঁজে নিতে। চাই শুধুমাত্র লড়ে যাবার সাহস।
* তথ্যটি বিশিষ্ট সমাজকর্মী সুজাতা ভট্টাচার্যের ফেসবুক থেকে সংগৃহিত।