এখন সব জায়গায় বাংলা চলচিত্র প্রেমী মানুষের মুখে একটাই কথা, বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান। অথচ পরিচালক থেকে অভিনেতা সকলেই প্রতক্ষ্যভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে বলিউড সিনেমার পাশেই দাড়ানোর ইশারা করছেন। কারন বর্তমান পরিচালকদের নিজ মস্তিষ্ক প্রসুত বিষয় ভাবনা বড়ই বিরল। পশ্চিমবঙ্গের সুতিয়া অঞ্চলের শিক্ষক তথা সমাজকর্মী সত্য খুনের গল্পের পটভূমিকায় পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর “প্রলয়” যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল মানুষের মনে। অভিনেতা দের অভিনয় মানুষের মনে দাগ কেটেছিল। প্রধান চরিত্র পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় , পরান বন্দোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল সহ প্রতিটি জুনিয়র আর্টিষ্টের অভিনয় ছিল ভীষন নিখুঁত। এরপর কেটে গেছে প্রায় দশ দশটা বছর। কিন্তু সত্যিই মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি বরুন বিশ্বাসের প্রলয়।
তাই পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আবার ফিরিয়ে আনছেন “আবার প্রলয়”, তবে এবার প্রলয়ের বিষয় বস্তু রাজনৈতিক নয়। এবারের বিষয় নারী পাচার। এই বিষয় নিয়ে বাংলা ওয়েব সিরিজ এই প্রথম তাই পরিচালক কে সাধুবাদ জানাতেই হয়।
সম্প্রতি ” আবার প্রলয়” এর টিজার রিলিজ হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি Zee5 OTT তে মুক্তি পেতে চলেছে। কিন্তু বড্ড চোখে লাগছে বেশ কয়েকটি বিষয়। বিশেষ করে দুটি চরিত্র।
প্রথমত : সেই কঠিন পুলিশ অফিসার অনিমেশ দত্তের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, কিন্তু এ শাশ্বত কে চেনা বড় দায়। মনোরঞ্জনে তাগিদে একটু বাড়াবাড়ি করতেই হয় কিন্তু টিজারে অনিমেশ দত্তের চরিত্রের শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় যেভাবে গুন্ডাদের হাওয়ায় উড়িয়ে ঠ্যাঙাচ্ছেন তা দেখে অভিনেতা শাশ্বতকে বাঙলার রাউডি রাঠোড় অক্ষয় কুমার মনে হচ্ছে। যদিও চলচিত্রে হাওয়ায় কে কতটা উড়বেন তা পরিচালকেরই শেষ সিদ্ধান্ত কিন্তু শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ওপর বাঙালী দর্শকের আবেগ আর আকাঙ্ক্ষা বেশী তাই কিছুটা হলেও অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের দায় থেকেই যায়। এছাড়া শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের হেয়ারস্টাইল টাও বেশ চোখে লাগছে।
অ্যাকশন ধর্মী সিনেমা করার আগে যে বিষয়গুলি নিয়ে বার বার গবেশনা করা উচিত তা দূর্বল থেকেই যাচ্ছে। পুলিশ বা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার ঠিক কেমন হয় তা পরিচালক ও অভিনেতা দুজনেরই অজানা বলেই মনে হল।
দ্বিতীয়ত : অনুপ্রানিত হয়ে কাজ করার মানে একরকম আর সরাসরি নকল করা বা চুরি করা আরএক জিনিষ। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী “আবার প্রলয়” বানাবার সাথে সাথে নেটফ্লিক্সের স্যাকরেড গেমসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ( পঙ্কজ ত্রিপাঠি ) অভিনীত “গুরুজী”- র চরিত্র কে হুবহু…. এমন কি পোষাক ও মেকাপের নকল করালেন অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী কে দিয়ে। এটা টিজার দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে। এই ভাবে নকল করার কি দরকার হল বুঝলাম না। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বর্তমানে একজন বিধায়কও, সুতরাং নারী পাচারের অন্তরায় কি ধরনের বা কোন এলাকার কি রকম মানুষ থাকতে পারেন তা গবেষনা করা খুব সহজ ছিল।
অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী এই মুহুর্তে বাংলার অন্যতম সেরা অভিনেতা দের মধ্য পড়লেও তার অভিনয় ভঙ্গীমা এখনো সেই একই থেকে গেছে। নিজেকে নতুন করে ভেঙ্গে তৈরী করতে পারেননি অন্যদিকে চরিত্র চয়নে গাফিলতি কি শুধুমাত্র অভিনয়ের তাগিদ না পেটের তাগিদ তা নিয়ে বেশ সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
যাই হোক সব মিলিয়ে “আবার প্রলয়” কি আবার মানুষের মনে জায়গা করেনিতে পারবে? সেটাই দেখার।