গতকাল ছিল বিশ্ব পরিবেশ দিবস, আর সেই উপলক্ষেই বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছিল এক বিশেষ সমাবেশের। আয়োজক – পশ্চিমবঙ্গ পরিবেশ দপ্তর।
এদিন এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য পরিবেশ মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূইঁয়া, রাজ্য পরিবেশ দফতরের মূখ্য সচিব রোশনী সেন ( আই এ এস ), রাজ্য দূষন পর্ষদের অধ্যক্ষ ডা. কল্যান রুদ্র ও ডা. রাজেশ কুমার ( আই পি এস ) রাজ্য সচিব।
এবার দূষন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পৃথিবী জুড়ে পদক্ষেপ ছিল প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাতীয় দূষন প্রতিরোধ করা যা ক্রমেই ভয়ঙ্করতম রুপ ধারন করতে চলেছে। সমুদ্রের নিচে পর্যন্ত পৌছে গিয়েছে এই প্লাস্টিক দূষন। জলজ প্রানী থেকে গবাদি পশুর খাদ্য হয়ে উঠেছে এই প্লাস্টিক। এখানেই শেষ নয়…. সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু খবরের শিরোনামে এসেছে মানুষের পেটে অস্ত্রপ্রচার করে পাওয়া গেছে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য। তাই প্লাস্টিকজাতীয় দূষন রোধে এবারের থিম ছিল Beat Plastic Polution.
সমগ্র অনুষ্ঠানে রাজ্য দূষন পর্ষদ কিভাবে রাজ্যের মানুষ কে প্রতিনিয়ত দূষন নিয়ন্ত্রণ ও দূষন থেকে মুক্ত থাকার উৎসাহ দিয়ে চলেছে সেই সব উঠে আসে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে সমান ভাবে নজর রেখে চলেছেন রাজ্য পরিবেশ দপ্তর। এমনকি ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১৭টি নদি যা দুষিত ছিল তার থেকে ৪টি নদিকে সম্পূর্ন দুষন মুক্ত করা হয়েছে বলেই জানানো হয়। তার মধ্যে গঙ্গাও রয়েছে যার বর্তমানে দূষনের হার আগের থেকে অনেক কম।
এছাড়াও দূষন রোধে এদিন পরিবেশ দপ্তর থেকে নতুন চারটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
- এবার থেকে দূষন প্রতিরোধে আকাশ থেকে নজরদারী চালাবে ড্রোন।
শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে পরিবেশ দপ্তর নিয়ত অভিযোগ পান যে, বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাক্টরী থেকে রাতের দিকে, বায়ু দুষন নিরোধক যন্ত্র বন্ধ করে বাতাসে সরাসরি বিশাক্ত ধোঁয়া বা গ্যাস নির্গত করেন যা সাধারন মানুষ দের বা স্থানীয় মানুষদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। এবার সেই সব ফ্যাক্ট্ররী গুলির ওপর রাতের অন্ধকারে আকাশ থেকে নজরদারী চালাবে বিশেষ “ড্রোন”। এই ড্রোনে থাকবে বিশেষ প্রকারের এক যন্ত্র যা সাথে সাথেই বায়ুর দূষনের পরিমাপ নির্ধারণ করে তার সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দেবে পরিবেশ দপ্তর কে। প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘন্টা আকাশ থেকে নজরদারী চালাবে এই ড্রোন।
২. বাসের মাথায় বিশেষ দূষন পরিমাপক যন্ত্র BRMAPS ( Suddha Vayu )
এটি রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের একটি পাইলট প্রজেক্ট। যা সাফল্য অর্জন করলে আগামীদিনে আরো বেশী পরিমান বাসে ব্যাবহার করা হবে। এদিন একটি বিশেষ বাসের উদ্বোধন করা হয় যে বাসটির ছাদে লাগানো আছে BRMAPS নামক একটি বিশেষ যন্ত্র যা বাসটি যে রুটে চলাচল করবে সেই এলাকার বায়ু শোধনের সাথে সাথে সেই সব এলাকার বায়ু দূষনের হার কত সে সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য প্রদান করবে পরিবেশ দপ্তর কে।
৩. বাসের ভীতর বায়ু পরিশোধক যন্ত্র – BIAPS
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারে তরফে বেশ কিছু শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালু হয়েছে কিন্তু নিত্যযাত্রীরা পরিবহন দপ্তর কে বারং বার অভিযোগ করেছেন বাসের ভীতর দুষিত বাতাসে ভরে যাচ্ছে যা তাদের জন্য অস্বাস্থ্যকর। এর পরেই রাজ্য পরিবহন দপ্তর, রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের কাছে বিষয়টি নজরে আনেন এবং সমাধান করার সাহায্য চান। রাজ্য পরিবেশ দপ্তর, নিত্য যাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বাসে একটি অভিনব যন্ত্র প্রতিস্থাপন করেন যার নাম BIAPS. এই যন্ত্রটি বাসের মধ্যে থাকা দুষিত বাতাস শুষে নিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করবে বলেই জানিয়েছেন রাজ্য পরিবেশ দপ্তর।
৪. ধোঁয়া বিহীন উনুন
গ্রামাঞ্চলে মাটির তৈরী উনুন এখনো প্রায় ৮০% বাড়িতে ব্যাবহার হয়। শহুরে মানুষরা এই তথ্যে অবাক হলেও এটাই চরম বাস্তব। ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী ২ কোটি পরিবারের মধ্যে মাত্র ৪৬ লক্ষ্য পরিবার এলপিজি গ্যাস, কেরোসিন ব্যাবহার করেন আর অবশিষ্ট বাকি পরিবার গুলি এখনো কাঠ খড় ঘুটে শুখনো পাতা, ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিষ জ্বালানি হিসাবে ব্যবাহার করেন যার থেকে ঘরের ভীতরেও দুষনের মাত্রা সাঙ্ঘাতিক ভাবে বেড়ে যায়। এবার রাজ্য পরিবেশ দপ্তর সেই কথা মাথায় রেখেই আনছে বিশেষ ধরনের ধোঁয়া বিহীন চুলা বা উনুন। সমগ্র ভারতে আই এস আই ছাপযুক্ত এই জাতীয় চুলা বা উনুন এই প্রথম। এই উনুনে কাঠের জ্বালানি তে রান্না করলে প্রায় ৬০% কম জ্বালানি ব্যবহার হবে। কার্বন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করবে প্রায় ৮০%।
অন্য মাটির উনুনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক সময়ে রান্না করা যাবে। খুব ছোট ও ওজনে হালকা হওয়ায় এই উনুন বহন করা খুব সহজ ও সাধারন উনুনের মত হাওয়া দেবার প্রয়োজন নেই।
সব মিলিয়ে রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের এই অভিনব উদ্যোগ গুলির জন্য বাহবা দিতেই হয়। যা আগামীতে রাজ্যের সাধারণ মানুষ কে দূষনের হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে। এদিন এই অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিরাই এই সকল উদ্যোগে ছিলেন বেশ খুশী। তবে নজর কাড়লো আরো একটি বিষয়ে। এদিন রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের এই অনুষ্ঠানের কোথাও মাননীয়ার কোন ছবি বা অনুপ্ররনার উল্লেখ ছিলনা। এটি কি দৃশ্য দূষনমুক্তির অন্যতম উদ্যোগ কিনা জানা যায়নি।
আপাতত আপনাদের জন্য রইলো সেই সমাবেশের ভিডিও।