পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ বাংলা সাহিত্যানুরাগি মানুষ প্রকৃতি আর প্রেমকে একসঙ্গে উপভোগ করতে পারতেন না যদি না বুদ্ধদেব গুহ কলম ধরতেন। হ্যা তার কলমে প্রকৃতি উঠে এসেছে বহুবার। জঙ্গল, বনভূমি এই সবই ছিল তার লেখার মূল পটভূমি। প্রকৃতিকে ভালোবাসা এবং প্রকৃতির কোলে নিজের ভালোবাসাকে উপভোগ করতে বাঙালিকে তিনিই শিখিয়েছেন।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গলে ঘেরা পটভূমিতেই গড়ে উঠেছে তার প্রতিটি উপন্যাস। তিনি শিকার কাহিনী বা অরন্যপ্রেমিক লেখক হিসেবেই বেশি পরিচিত। কিন্তু অরণ্যপ্রেমের মধ্য দিয়ে এক প্রেমিক সত্ত্বা ধারণ করে তার প্রতিটি রচনা। ‘বাবলি’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘মাধুকরী’ ‘হলুদ বসন্ত’ প্রভৃতি লেখা অরণ্য পটভূমিতে দাঁড়িয়ে অরণ্য প্রেমকে ছাড়িয়ে প্রেমের উপন্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যাকলাক্সি গঞ্জের সেই বাংলো, বা ডিমাপুরের সেই রাতটা এগুলো পড়তে পড়তে কখন যে কোন কিশোর বা কিশোরী কৈশোর সত্ত্বা ছেড়ে যুবক বা যুবতী হয়ে ওঠে তারা সেটা নিজেও জানে না বোধহয়।
জঙ্গলমহল’ তার প্রথম প্রকাশিত বই। ছোটদের জন্য বিখ্যাত অভিযাত্রিক গোয়েন্দা ঋজুদা তার অমর সৃষ্টি। ঋজুদা কে নিয়ে অসংখ্য বই উপন্যাস তৈরি করেছেন তিনি। তার বিতর্কিত উপন্যাস মাধুকরী দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বেস্টসেলার। তার রচিত ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’ নামক দুটি উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ‘ডিকশনারি’ চলচ্চিত্রটি। ১৯৭৬ সালে ‘হলুদ বসন্ত’ বইটির জন্য আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বিশ্ব মহামারী করোনা পৃথিবী থেকে ছিনিয়ে গিয়ে গেছে অসংখ্য মানুষ। সেই দলে সাধারণের পাশাপাশি লাইন দিয়েছিল অসাধারণ কিছু মানুষ। এই দলে পা মিলিয়ে ২০২১ সালে মৃত্যু হয় তার। আজ তার ৮৭ তম জন্মদিন। করোনার ক্ষমতা নেই এই মানুষকে কেড়ে নেবেন। তিনি মানুষের বেঁচে থাকবেন সারাজীবন। তাই মৃত্যুদিন নয় জন্মদিনেই তাকে স্মরণ করবে বাংলা সাহিত্যানুরাগীরা।