দাউদ ইব্রাহিম কাসকার বা দাউদ নামটির সাথে সমগ্র ভারতবাসী তথা বিশ্ববাসীর পরিচয় হয় ১৯৯৩ সালের মুম্বাই সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরনের পর থেকে। দাউদ মুম্বাই পুলিশের কনস্টেবল ইব্রাহিম কাসকর এর সন্তান হয়েও খুব অল্প বয়স থেকেই অপরাধ জগতের দিকে এগিয়ে যায়। প্রথমে প্রভুত অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে তৎকালীন সময় বৈদেশিক ঘড়ি, সুগন্ধি চোরা চালান শুরু করলেও পরবর্তীকালে অপরাধ জগতের বিভিন্ন দলের সাথে এলাকা দখল নিয়ে শুরু হয় রক্তপাতের প্রতিযোগিতা। দাউদ ক্রমেই মুম্বাইয়ের বেতাজ বাদশা হয়ে ওঠে।
বৈদেশিক ঘড়ি সুগন্ধি ছেড়ে সে সরাসরি নেমে পড়ে সোনা আর নিষিদ্ধ মাদক চোরাচালানে। সাথে সমগ্র মুম্বাই ও দেশের বড় ব্যাবসায়ীদের থেকে মোটা অঙ্কের তোলাবাজী ছিল তার মূল নেশা ও পেশা সাথে অন্য অপরাধী বা অন্য গ্যাং এর তথ্য পুলিশ কে সরবরাহ করে তার প্রতিযোগী গ্যাং গুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা । মুম্বাই পুলিশ অপরাধ জগতের তথ্য দাউদের থেকে জানতে পেরেই তাকে দিত বিশেষ সুবিধা। বিভিন্ন সুত্রে জানতে পারা যায় রাজনৈতিক ও পুলিশি প্রশয়েই তার এই উথ্থান। এমনকি একটা সময় মুম্বাইয়ের ফিল্ম জগতের বেশীর ভাগটাই চলে যায় তার দখলে। তোলাবাজীর মোটা টাকার বেশীর ভাগটাই মুম্বাইয়ের ফিল্মে বিনিয়োগ করতেন দাউদ।
মুম্বাই ফিল্ম জগতে তার অনুমতি ছাড়া গাছের পাতা দুলতেও ভয় পেত। বিভিন্ন তদন্তে তার সাথে একাধিক অভিনেতা অভিনেত্রী পরিচালক প্রযোজকের নাম তার সাথে জড়িয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সঞ্জয় দত্ত ও মন্দাকীনি। ১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে যে সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরন হয়েছিল সেই বিস্ফোরনের জন্য ব্যাবহার করা হয়েছিল আর ডি এক্স নামে একটি সাঙ্ঘাতিক বিস্ফোরক যা পাকিস্তান থেকে জলপথে চোরাচালানের মাধ্যমে দাউদ মুম্বাইতে আনিয়েছিল। মুম্বাইয়ে বিস্ফোরনের দু একদিন আগেই দাউদ ভারত ছেড়ে সপরিবারে প্রথমে দুবাই ও পরে পাকাপাকি ভাবে পাকিস্তানের করাচি শহরে বসবাস করতে শুরু করে। দেশের বাইরে থেকেও শুধুমাত্র ফোনের সাহায্যে গোটা বিশ্বে চালাতেন তার তোলাবাজী ও চোরাচালানের কারবার যার বাৎসরিক মূল্যায়ন ছিল দশ হাজার কোটি টাকার বেশী।
পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি রাজ্যেই ছিল বা আছে তার মাস মাইনে করা শার্প শুটার। শোনা যায় তার বাহিনীতে রয়েছে অন্তত পক্ষে সাত হাজার শার্প শুটার। মুম্বাইয়ের সঙ্গীত জগতের বেতাজ বাদশা গুলশন কুমার হত্যা কান্ডেও পাওয়া গেছে দাউদের নাম। দাউদের শার্প শুটাররাই গুলশন কুমার কে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছিল। এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা রকম অপরাধিক কাজে লিপ্ত থাকা বা ষড়যন্ত্রের কারনে পৃথিবীর মধ্যে “মোস্ট ওয়ান্টেড ” তালিকার শীর্ষে নাম উঠে যায় দাউদ ইব্রাহিমের। জারি হয় রেড কর্নার নোটিশ। ভারত সহ পৃথিবীর বহু দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামে দাউদের খোঁজে।
১৯৯৩ এর মুম্বাই সিরিয়াল বোমা বিস্ফোরনের সভয় থেকেই দাউদ ইব্রাহিম দুবাই হয়ে পাকিস্তান চলে যায় সপরিবারে। উগ্রবাদী দের প্রশয় দেবার কারনে বিশ্বের সব থেকে বদনামী দেশ পাকিস্তান সহজেই দাউদ কে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেয়। পাকিস্তানের রাজধানী করাচি শহরের ভি আই পি এলাকায় 10 নম্বর ক্লিফটন রোডের একটি বিলাস বহুল ভবনে দাউদ সপরিবারে বসবাস করছে সেই তথ্য ভারতের সুরক্ষা দফতর সহ বিশ্বের বহু দেশ প্রমান সহ দাবী করলেও পাকিস্তান সরকার তা কোনদিন স্বীকার করতে রাজী হননি।
পাকিস্তানের দ্বিচারিতা মনোভাবের কারনে উগ্রবাদ বিরোধী দেশগুলি কুটনৈতিক চালে পাকিস্তান কে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে চাপে ফেলে দেবার পরেই বিগত বেশ কিছুদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল কোন এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তি বা সংগঠন পাকিস্তানের মধ্যে বসবাস কারী বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বদের এক এক করে হত্যা করছিল। কে সেই অজ্ঞাত ব্যাক্তি বা সংগঠন তা পাকিস্তান সরকার বা তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই ও জানতে ব্যার্থ হয়েছেন এখনও।
গতকাল বিকেল থেকে পাকিস্তানে একটি খবর রটতে থাকে, দাউদ কে তার ঘর থেকেই অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপরেই তাকে করাচি শহরের একটি নামী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। দাউদের খবর যাতে বিশ্বের কাছে না পৌঁছে যায় সেই কারনে পাকিস্তানে তড়িঘড়ি ফেসবুক, গুগল, টুইটার এর মতো সামাজিক মাধ্যম গুলির সাথে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ দের মতে “পাকিস্তানে দাউদের মৃত্যু হলেও পাকিস্তান তা স্বীকারকরবে না কারন তারা বিগত দিনে দাউদের উপস্থিতি অস্বীকার করে এসেছে। এবং সম্প্রতি তারা গোটা পৃথিবীতে নিজেদের বদনাম ঘোচাতে নিজেরাই ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখা জঙ্গী ও উগ্রবাদীদের গুপ্ত হত্যা করে ভারতের নামে দোষারোপ করতে শুরু করেছে। “
এখনও অবধি সরকারি বা বেসরকারী ভাবে দাউদের মৃত্যুর খবর কে সমর্থন আসেনি। হয়তো আগামী দিনে দাউদের মৃত্যুর খবর সরকারি ভাবে কোনদিনও সামনে আসবে না বলেই আশাবাদী কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।