পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ বাংলায় প্রচলিত প্রবাদের মধ্যে ‘হরি ঘোষের গোয়াল’ বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। কোন বাড়িতে অনেক লোক থাকলে সেই বাড়িকে হরি ঘোষের গোয়ালের সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু কে এই হরি ঘোষ? কি আছে তার গোয়ালে? এ কথা কখনও জানতে চেয়েছেন? বেশ কিছু প্রবাদে এমন বহু লোকের নাম ব্যবহার করা হয়, যেমন- ‘হরি ঘোষের গোয়াল’, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’, ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’ প্রভৃতি। কিন্তু এই গৌরী সেন, নন্দ ঘোষ বা হরি ঘোষ আসলে কে? কেন তারা প্রবাদের কারণে সর্বকালের হয়ে উঠল? বাকিদের কথা অন্য কখনও হবে আজ শুধু হরি ঘোষের কথাই বলা যাক।
ফ্রেঞ্চ গভর্নর ডুপ্লের দেওয়ান ছিলেন বলরাম ঘোষ। এই বলরাম ঘোষের দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন হরি ঘোষ। তিনি নিজেও মুঙ্গেরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান নিযুক্ত ছিলেন কিছু বছর। দেওয়ানি করে হরি ঘোষ বিস্তর টাকা পয়সা উপার্জন করেছিলেন। তিনি খুব দয়ালু এবং পরোপকারী মানুষ ছিলেন। এহেন হরি ঘোষের কোন গোয়াল আদৌ ছিল না। ছিল এক রান্নাঘর যে রান্নাঘরে সারাদিন আগুন জ্বলত। সবসময় খাওয়ার প্রস্তুত থাকত সে বাড়িতে। শোনা যায় হরি ঘোষের বাড়িতে কোন অতিথি যেকোনো সময় উপস্থিত হলেই খাবার পেতেন। শহরের গরীব দুঃখী থেকে শুরু করে ধনী সকল মানুষই সেই খাবারের অধিকারী ছিলেন। তাই মানুষ ব্যঙ্গ করে বাগবাজারে তার এই বাড়িকে হরি ঘোষের গোয়াল বলত। যদিও এহেন দয়ালু মানুষটার শেষ জীবন সুখের ছিলনা। আত্মীয় দ্বারা প্রতারিত হয়ে নিজের সমস্ত সম্পত্তি খুইয়ে তিনি কাশি চলে যান। সেখানেই ১৮০৬ সালে তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে কলকাতায় তার বসত বাড়ীর সামনের রাস্তাটি তার নামে নামাঙ্কিত হয়ে হরি ঘোষ ষ্ট্রীট নামে পরিচিত।
বাংলায় রয়েছেন আরও এক হরি ঘোষ। তিনি নবদ্বীপ নিবাসী এক ধনী গোপ ছিলেন। সেই গ্রামের রঘুনাথ শিরোমণি নামে এক পণ্ডিত পয়সার অভাবে টোল খুলতে পারছিলেন না। তখন ধনী হরি ঘোষ তার একটি গোয়ালে টোল খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন সেই থেকে এই হরি ঘোষের গোয়াল কথাটি প্রচলিত হতে থাকে। হরি ঘোষের গোয়ালে বসেই অধ্যয়ন করে তৈরি হয়েছে অনেক পণ্ডিত।
বাংলার এই দুই হরি ঘোষ দুজনই বাংলার ইতিহাসে সমান দামী মানুষ। প্রবাদে তাদের নাম জানলেও তাদের পরিচয় জানা যায়নি। তাই পাঠকের স্বার্থে দুই হরি ঘোষের সাথেই তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টামাত্র।