“মহারাজা তোমারে সেলাম” যে গানটির কন্ঠস্বর প্রতিটি বাঙালির মনে গেঁথে রয়েছে। বিশ্ব বরেন্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিত রায়ের গুপি গাইন বাঘা বাইনে এই গানের সাথে অন্য গানে যিনি কন্ঠদান করেছিলেন তিনি ছিলেন ডাঃ অনুপ ঘোষাল।
পরিচিতি ছিল বিশিষ্ট নজরুল গীতি শিল্পী হিসাবে। সাথে শ্যামা সঙ্গীতেও তার ছিল যথেষ্ট দক্ষতা। যদিও সমগ্র সঙ্গীত জগতে তার পরিচিতি ঘটেছিল বিখ্যাত সাগিনা মাহাতো চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করে।
জন্ম ১৯৬৮ সালে। বাবা ছিলেন লেফটেনেন্ট অমূল্য চন্দ্র ও মা ছিলেন লেফটেনেন্ট লাবন্য ঘোষাল। মা লাবন্য ঘোষাল ছোট থেকেই অনুপ কে বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণে দিয়ে ছিলেন। মাত্র ৪ বছর বয়সেই অল ইন্ডিয়া রেডিও তে শিশুদের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। তখন থেকেই তিনি ঠুমরি, খেয়াল, ভজন, রাগ, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল গীতি, দ্বিজেন্দ্রগীতি তে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন।
আশুতোষ কলেছে স্নাতকোত্তর পাশ করে তিনি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ ডি অর্জন করেন। তাঁর থিসিসের নাম ছিল “নজরুলগীতি – রুপ ও রাশানভাবাটি “। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি প্রথম সংগীত ভারতী ডিগ্রি পরিক্ষায় ক্লাসিকাল মিউজিক বিভাগে স্বর্ন পদক লাভ করেন এবং তার সাথে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে জাতীয় পন্ডিত হিসাবে নির্বাচিত হন।
প্লেব্যাক গায়ক হিসাবে প্রথম গান গাইলেন সত্যজিত রায়ের গুপি গাইন বাঘা বাইন ছবিতে, তখন বয়স মাত্র উনিশ। এরপর আবার ১৯৮১ সালে সত্যজিত রায়ের হীরক রাজার দেশে ছবিতে প্লেব্যাক করে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন।
অনুপ ঘোষাল সঙ্গীতের পাশাপাপাশি “গনেশ ভূবন” নামে একটি বই লিখেছিলেন যেখানে তিনি লিখেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে সঙ্গীত সার্বজনীন এবং শ্রেষ্ঠ একক শক্তি। গবেশকরা প্রমান করেছেন যে পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণে উপজাতীত সঙ্গীত মূলত একই, ভিন্ন নৃত্যের কারনে শুধু নোট সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
২০১১ সালে ডাঃ অনুপ ঘোষাল, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অল ইন্ডিয়া তৃনমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে জয় লাভ করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্য হয়েছিলেন।
দীর্ঘদিনের বার্ধক্য জনিত শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত থাকার পর আজ তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার প্রয়াত হবার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সমগ্র ভারতীয় সঙ্গীত জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া। মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, ডাঃ অনুপ ঘোষালের মৃত্যুর সংবাদে শোক জ্ঞাপন করেছেন।