Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

প্রেমোরথে প্রাণের ঠাকুর

Table of Contents

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

বহতা নদী সরকার

‘রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি
মূর্তি ভাবে আমি দেব- হাসে অন্তর্যামী।’
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শ্রীজগন্নাথ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা। কৃষ্ণ বা বিষ্ণুর একটি বিশেষ রূপ। জগন্নাথ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো ‘জগতের নাথ বা প্রভু’। রথে থাকেন জগন্নাথ, সুভদ্রা বলরাম। জগন্নাথ বিগ্রহের চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, হস্ত, পদ প্রভৃতি অবয়বগুলোর আভাসমাত্র আছে। যিনি বামন, তিনি অঙ্গুষ্ঠামাত্র পুরুষরূপে অর্থাৎ অতি সূক্ষ্মরূপে সব জীবের অন্তরে অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন। তাঁর স্বরূপ অবগত হতে পারলে জীবের পুনর্জন্ম হবে না। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সেই দৃষ্টিকোণ থেকে জগন্নাথদেবের ভজনা করে থাকেন।

শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে। স্বয়ং ভগবানের এই যাত্রা অতিদুর্লভ ও মুক্তিপ্রদায়িনী। আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়াতে রথযাত্রা করে বিশেষত শুক্লা একাদশীর দিন পুনর্যাত্রা করেন। অয়নপথে সূর্যের দক্ষিণ দিকে যাত্রা ও উত্তরে প্রত্যাবর্তন জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিবৃত্ত। বলরাম ও সুভদ্রা জগন্নাথদেবের সঙ্গী। স্কন্দপুরাণ মতে, ‘জগন্নাথদেবের সঙ্গী বলরাম বিষ্ণুর অনন্ত শয্যার অংশীদার।’ এ দিন জপ ও হোমাদিমহোৎসব বিধেয়। এই মহোৎসবে অংশগ্রহণকারী ভক্তরা ভগবানের দর্শন পেয়ে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন।

পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মাধ্যমে ভারতবর্ষে রথযাত্রার সূচনা হয়। রথযাত্রার মাহাত্ম্য সম্পর্কে শাস্ত্রে আছে- ‘রথস্থ বামনং দৃষ্টা পূনর্জন্ম বিদ্যতে’। অর্থাৎ রথের ওপর অধিষ্ঠিত বামন জগন্নাথদেবকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। তাই রথযাত্রা দর্শনে ভক্তদের এই অসীম আগ্রহ। ব্রহ্মর্ষি সত্যদেব বলেছেন, রথস্থ বামনদেবকে দর্শন করলে পুনর্জন্ম হয় না; অর্থাৎ মোক্ষ হয়। রথ দেহেরই প্রতিরূপ। উপনিষদ দেহকেই রথরূপে কল্পনা করেছেন। ‘বামন’ শব্দের অর্থ পরমাত্মা। যাঁরা সেই পরমাত্মাকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করতে পারেনি, তাঁরা বছরে একদিনের জন্য সেই রূপ দর্শনের চেষ্টা করেন। আষাঢ়ী শুক্লা দ্বিতীয়া সেই নির্দিষ্ট দিন। এই তিথিতে শ্রীজগন্নাথ মূর্তিও আর্বিভাব হয়েছিল। এই তিথি পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের অনুকূল তিথি।

উৎকলখণ্ডের বর্ণনা অনুসারে জগন্নাথদেব শঙ্খচক্রধারী, সুতরাং দ্বিভুজ। কিন্তু প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে বিশ্বকর্মা জগন্নাথদেবের মূর্তি তৈরি করার সময় কারো প্রবেশ ছিল নিষেধ, এমনকি রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নেরও না। বিশ্বকর্মা মূর্তি তৈরি করার আগেই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন অধৈর্য হয়ে বন্ধ দরজা খোলার জন্য মূর্তি অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়।

অনেকে মনে করেন যে, জগন্নাথদেবের মূর্তি বুদ্ধদেবেরই রূপান্তর। আবার অনেকে মনে করেন, জগন্নাথদেব কোনও অনার্য জাতির দেবতা। বিবর্তনের ধারায় হিন্দুদেবতা বিষ্ণু এবং সব শেষে জগন্নাথদেব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এর পেছনে যুক্তিও আছে- স্কন্দপুরাণে উৎকলখণ্ডে এবং পুরষোত্তমখণ্ডে শবরপতি বিশ্বাসুর ছিলেন নীলগিরি পর্বতে নীলমাধবের পূজারী এবং উপাসক। পরে নীলমাধব এখান থেকে অন্তর্হিত হয়ে কাঠদ্বারা নির্মিত জগন্নাথদেবের মূর্তিরূপে আর্বিভূত হয়েছিলেন। শবরপতি বিশ্বাসুর অনার্য জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলেই জগন্নাথদেবকে অনার্যদের দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ, বৌদ্ধ ত্রিরত্নের মধ্যে সংঘ নারীরূপে বুদ্ধের ও ধর্মের মাঝখানে অবস্থান করায় জগন্নাথদেবের মূর্তি ত্রিরত্নের রূপান্তর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

উড়িষ্যার অনেক বৈষ্ণব ভক্তকবি জগন্নাথদেবকে বুদ্ধের মূর্তি বা অবতার বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস- শ্রীকৃষ্ণই বুদ্ধরূপে জগন্নাথ নামে অধিষ্ঠিত। জগন্নাথ দাসের ‘দারুব্রহ্ম’ ও অচ্যুতানন্দ দাসের রূপান্তর ‘শূন্য সংহিতা’য় এই তত্ত্ব স্থান পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ঈশ্বর দাস ও অচ্যুতানন্দ জগন্নাথদেবকে বুদ্ধের এবং শ্রীচৈতন্যদেবকেও বুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।

স্বামী অভেদানন্দ তিব্বতের লাদাখ অঞ্চল ভ্রমণকালে ‘বৌধ্খুর্ব’ গ্রামে ত্রিরত্নের যে মূর্তি দেখেছিলেন, সেই মূর্তিগুলোকে তিনি জগন্নাথদেবের মূর্তির প্রতিরূপ বলে গণ্য করেছেন। স্বামীজীর বর্ণনা অনুসারে, ‘লামাদের একটি ত্রিরত্ন বা ‘পরমেশ্বরা’ রহিয়াছে। আমাদের দেশের ইট দিয়া গাঁথা তুলসী মন্দিরের মতো ইহারা তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিরেট মন্দির নির্মাণ করিয়া প্রথমটিতে কালো, দ্বিতীয়টিতে হলদে ও তৃতীয়টিতে সাদা রঙ লাগাইয়া বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের প্রতীক নির্মাণ করিয়া তাহাদের পূজারতি করেন। ইঁহারা এইগুলিকে ‘পরমেশ্বরা’ বলেন। ‘পরমেশ্বরা’ শব্দ পরমেশ্বর শব্দের অপভ্রংশ। এইগুলিতে চোখ আঁকিয়া দিলে প্রথম কালোটিকে হস্তপদহীন জগন্নাথ, দ্বিতীয় হলদেটিকে সুভদ্রা ও তৃতীয় সাদাটিকে বলরাম মনে হয়।’

ratha yatra

জগন্নাথদেব আদিম অবস্থায় বৌদ্ধ দেবতা ছিলেন অথবা অনার্য দেবতা ছিলেন অথবা শাক্ত দেবতা ভৈরব ছিলেন, সে তত্ত্ব নিছক অনুমানের ব্যাপার। জগন্নাথদেবের মূর্তি বৌদ্ধ দেবতা হলে তিনটি মূর্তির স্বরূপ কী? তিনটি মূর্তি ত্রিরত্ন হলে এদের মধ্যে নারীমূর্তি সুভদ্রা এলেন কীভাবে? বুদ্ধদেবের অস্থি বা অন্যকোনো স্মৃতিচিহ্ন জগন্নাথদেবের মূর্তির মধ্যে লুকায়িত আছে কিনা তাও নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে এ কথা সত্য যে, সূর্য, বিষ্ণুর প্রভাব জগন্নাথদেবের ওপর আছে।

এই যে বিশ্বরূপ পুরুষোত্তম ভগবানের রূপ প্রকাশ তা তো বিশ্বময়তায় একাকার। তাঁকে কোনো রূপের সীমায় আবদ্ধ করা যায় না। তাই জগন্নাথদেবের এই অদ্ভুত দারুব্রহ্মময় মূর্তি ভগবানের অনন্ত লীলাপ্রকটনের এক অসীম প্রকাশ। সেই পুরুষোত্তম সত্যসুন্দর নিরঞ্জন ভগবান জগন্নাথদেব নানা দিব্যালঙ্কারে বিভূষিত হয়ে তাঁর অসম্পূর্ণ হস্তপদ, বড় বড় দুটি গোলাকার উদ্গত চক্ষু নিয়ে যেন জগৎ কল্যাণে পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। এটিই তাঁর স্বরূপ-মাধুর্য। তাঁকে স্মরণ করেই ভক্তরা চায় পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরিত্রাণ। আর তার জন্য রথযাত্রা উৎসব।

More Related Articles

অপারেশন সিঁদুর' ট্রেডমার্কের দৌড়ে নামল একাধিক কোম্পানি, সেনা অভিযানের পর বাড়ছে বাণিজ্যিক লড়াই
Featured News

অপারেশন সিঁদুর’ ট্রেডমার্কের দৌড়ে নামল একাধিক কোম্পানি, সেনা অভিযানের পর বাড়ছে বাণিজ্যিক লড়াই

সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্যের পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম ঘিরে তৈরি হয়েছে জাতীয় আবেগ। সেই আবেগকে পুঁজি করে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের দৌড়ে নেমেছে একাধিক সংস্থা। শুরু হয়েছে আইনি ও বাণিজ্যিক লড়াই।

Read More »
অপারেশন সিঁদুর: মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত, ভারতীয় প্রত্যাঘাতে কেঁপে উঠল বহওয়ালপুর!
Breaking News

অপারেশন সিঁদুর: মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত, ভারতীয় প্রত্যাঘাতে কেঁপে উঠল বহওয়ালপুর!

ভারতের অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ২১টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস। জইশ প্রধান মাসুদ আজ়হারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত। বহওয়ালপুরে চালানো এই হামলায় আজ়হার বেঁচে আছেন কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা।

Read More »
‘অপারেশন সিঁদুর’: গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত, সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন দুই ‘অগ্নিকন্যা’
Breaking News

‘অপারেশন সিঁদুর’: গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাত, সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন দুই ‘অগ্নিকন্যা’

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত চালালো ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নিখুঁত স্ট্রাইক। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ ও কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।

Read More »
দেশ

ভারতজুড়ে ২৫৯টি স্থানে নিরাপত্তা মহড়া, পশ্চিমবঙ্গেও তৎপরতা চরমে—পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জোরদার প্রস্তুতি

পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার, সেনা-আসামরিক যৌথ মহড়া, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চূড়ান্ত সতর্কতা।

Read More »
দেশ

দেশপ্রেমের নতুন সংজ্ঞা: সোশ্যাল মিডিয়াতেই লড়াই, আপনি কি প্রস্তুত ‘ডিজিটাল যোদ্ধা’ হতে?

দেশের বিরুদ্ধে অনলাইনে চলতে থাকা বিদ্বেষমূলক প্রচার আর বরদাস্ত করবে না কেন্দ্র। এবার যে কেউ, যেকোনো জায়গা থেকে দেশের পাশে দাঁড়াতে পারেন—হোক সেটা বাড়ির সোফা, অফিসের ডেস্ক কিংবা মোবাইলের স্ক্রিন। কারণ, ‘ডিজিটাল যুদ্ধ’ এখন শুরু হয়েছে, এবং এই যুদ্ধে সেনা শুধুই সীমান্তে নয়—রাস্তায় নামবেন আপনি, আমিও।

Read More »
error: Content is protected !!