পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ তিলোত্তমার বহু নাম, শহরের অলিগলিরও নাম রয়েছে কলকাতা শহরে। কলকাতা শহরের প্রত্যেক অলিগলির নামের সাথে লুকিয়ে আছে এক এক ইতিহাস। বিশেষত বাঙালি ইতিহাস। বাঙালিদের নাম অনুসারে নামকরণ হয়েছে কলকাতার রাস্তাঘাটের। অঞ্চল বিশেষে সেই জায়গায় বসবাসকারী রাজা জমিদার বা বিখ্যাত মানুষদের নামেই পরবর্তীকালে নামকরণ করা হয় সেই রাস্তাঘাটগুলির। এছাড়া অনেক অঞ্চলের বিশেষত্বের ওপর ভিত্তি করেও নামকরণ করা হয়েছে অনেক রাস্তার। তবে কোনও লেখকের কলম দ্বারা সৃষ্টির নামে রাস্তার নামকরণ সেটা প্রায় সকলেরই অজানা।
কলম দ্বারা সৃষ্টি অর্থাৎ বইয়ের নামে রাস্তার নামকরণ হয়েছে কলকাতার দুটি জায়গায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি গীতাঞ্জলী এখন মেট্রো ষ্টেশনের নাম। সেটা তো কিছু বছরের কথা। কিন্তু তার বহু আগে থেকে কলকাতায় দুটি বইয়ের নামে দুটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল। হবে নাই বা কেন যে শহরের প্রাণকেন্দ্র বইপাড়া সেই শহরে বইয়ের নামে রাস্তার নাম হওয়া তো খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
‘স্বর্ণলতা স্ট্রিট’ এবং ‘বিশ্বকোষ লেন’ এই দুই রাস্তার নামকরণ হয়েছে দুটি বইয়ের নাম থেকেই। ১৮৭০ এর দশকে হাজরা রোডের পার্শ্ববর্তী রাস্তাটির নামকরণ করা হয় ‘স্বর্ণলতা স্ট্রিট’। তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘স্বর্ণলতা’। যদিও গ্রন্থ প্রকাশের সময় নিজের পরিচয় গোপন রাখেন লেখক। উপন্যাসটি সেই সময় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তাই অজানা লেখককে সম্মানিত করতেই এই নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল বলেই জানা যায়। পরবর্তীকালে বইটির চতুর্থ মুদ্রণ প্রকাশের সময় লেখকের নাম প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু রাস্তার নাম অপরিবর্তিত থেকে গিয়েছিল সেই সময়।
এর প্রায় ৪০ দশক পর আর একটি রাস্তার নামকরণ হয় বইয়ের নামে, ‘বিশ্বকোষ লেন’। এই নামকরণের নেপথ্যে রয়েছেন ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নগেন্দ্রনাথ বসুর নাম। বাংলার বিভিন্ন প্রাচীন পুথি এবং বাংলা ভাষা সংরক্ষণের জন্য ঐতিহাসিক নগেন্দ্রনাথ বসু বাংলায় বিশ্বকোষ রচনা করেছিলেন। ২২ টি খণ্ডে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ পায় এই বিশ্বকোষ। তাই বাংলা ভাষার স্বার্থে বাংলা ভাষার এই সংরক্ষণ এবং তার স্রষ্টাকে সম্মান জানাতে এই নামকরণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯১৫ সালে ক্যালকাটা কর্পোরেশন কাঁটাপুকুর বাইলেনের নামকরণ করে ‘বিশ্বকোষ লেন’। লেখকের নাম মনে রাখলেও তাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এইভাবেই তারা বেঁচে আছেন।