বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন উদযাপনের অভ্যাস নতুন নয়। তবে সব থেকে বেশী যে উৎসবের দিকে বাঙালি তথা আপামোর পৃথিবীবাসী অপেক্ষা করে থাকেন তা হল দুর্গা পুজো। সারাটা বছর যেমনই যাক না কেন এই কটাদিন সবাই একটু খুশীতে আনন্দের সাথেই কাটাতে চান। বছরের এই কটা দিনের জন্যই প্রত্যেকেই আশা করেন একটি নতুন পোষাক বা শাড়ির। সাধারণ মানুষ তাদের সাধ্যমত পুজোর কেনাকাটা করেন প্রায় মাস তিনেক ধরেই। সেখানে অবশ্য শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, তারা কেনাকাটা করেন নিজের পরিবার ও আত্মীয় তথা বন্ধু-বান্ধবদের উপহার দেবার জন্যও। কিন্তু একটি প্রবাদ আছে – চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়!
দৈনন্দিন জীবনের নানান ওঠাপড়ার সংঘর্ষে বেশ কিছু মানুষের জীবন পিছিয়ে থাকে সমাজের অন্য পাঁচজন মানুষের থেকে। আর্থিক ভাবে দূর্বল এই প্রান্তিক মানুষ গুলি সমাজের অংশ হয়েও ব্রাত্য থেকে যান বছরের এই আনন্দের দিন গুলি থেকে। যার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা কালের প্রভাব, দুরারোগ্য ব্যাধি, কুসংস্কার, দূর্ঘটনা, বেকারত্ব, পুঁথিগত ও কারিগরি শিক্ষার অভাব, বয়সের ভার ইত্যাদি অনেক কিছুই। কিন্তু জীবন অনেক বড়। এদের সমাজের মুল স্রোতে ফিরতে চাই একটু সুযোগ আর একটু ভালোবাসা। আর ঠিক এই দায়িত্ব টাই কাঁধে তুলে নিয়েছে “রুপ কন্যার সাঁঝ কথা”-র সদস্যারা। যার কৃতিত্বের দাবীদার সকল সদস্যা হলেও মূলত সংগঠন টিকে তৈরী করেছেন শ্রীমতী তন্দ্রা রায় ও তার দুই সুযোগ্যা কন্যা ক্যামেলিয়া রায় ভট্টাচার্য্য ও মেঘকস্তুরি কর্মকার।
রুপ কন্যার সাঁঝ কথা প্রাথমিক ভাবে একটি মহিলা সংগঠন যা সামাজিক মাধ্যমে অনলাইন মাধ্যমে বানিজ্য করেন। কেউ শাড়ি, কেউ হাতে তৈরী গহনা বা প্রসাধনী আবার কেউ অন্য কিছু। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে থেকে গৃহিনীদের ঘরে বসেই এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে একটু এক্সট্রা ইনকামের পথ দেখাতে শুরু করেছিলেন যার সদস্যা সংখ্যা আজ এক এক করে প্রায় বারো হাজার। শুধুমাত্র ব্যাবসা করাই নয়, বড় বহুজাতিক সংস্থার মতো তারাও সামাজিক দায় বদ্ধতার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা। এখানেই শেষ নয়, এই বারো হাজার সদস্যাদের সন্তানদের আবৃত্তি, নাচ গান, গল্প কথার আসর ইত্যাদি নিয়েও চর্চা করে বাঙলার সংস্কৃতি কে ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুপ কন্যার সাঁঝ কথার সদস্যারা। এছাড়াও বছরে বেশ কয়েক বার ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষাপেতে বস্তি অঞ্চলে মশারী বিতরন করেছেন।
শ্রীমতী তন্দ্রা রায় এ বিষয়ে জানান, কথায় আছে যদি হই সুজন তাহলে তেঁতুল পাতায় ন’জন। যদিও বার্ধক্য জনিত কারনে আমি সেই অর্থে কিছু করতে পারিনা তবে সবটাই আয়োজন করে মেঘকস্তুরী আর ক্যামেলিয়া, আর এদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবিরত পরিশ্রম করে রুপ কন্যার সাঁঝ কথা-র আরো তিন “মডারেটর” শাওলি ঠাকুর, শিল্পা সোম ও ঋতুপর্না ভট্টাচার্য্য। এদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল স্বরুপ ভাবা সম্ভব হয়, যখন আমরা এতো জন মিলে আনন্দ করছি তখন আমরা আমাদের পরিপারে সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষদের নিজেদের কাছের আত্মীয় মনে করে আনন্দে সামিল করতে দোষ কোথায়? আনন্দ ভাগ করে নিলেই তো আরো বেশী আনন্দ উপভোগ করা যায়। গতবছর পুজোয় সেই আনন্দ ভাগ করে নিয়েছিলাম উত্তর কলকাতার নিষিদ্ধ পল্লীর মহিলাদের সাথে। এ বছর আমরা আমাদের সাধ্যমত সকলে মিলে ছিলাম আড়িয়াদহ সর্বমঙ্গলা বালিকা বিদ্যালয়ে। এই স্কুলের অতি জনপ্রিয় জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা স্বর্গীয় অপর্না মুখার্জীর স্মরনে এই উপহার সামগ্রী বিতরন করা হয়। এদিন উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিক্ষিকা ফাল্গুনি দি ও দ্বিপান্বীতা দি সহ স্কুল সেক্রেটারি শ্রী শুভ্রাংশু ঘোষাল। স্কুল সেক্রেটারি শ্রী শুভ্রাংশু ঘোষাল রুপ কন্যার সাঁঝ কথার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।
দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস, রুপ কন্যার সাঁঝ কথার এই বিরলতম উদ্যোগ কে কুর্নিশ জানায় তার সাথে এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাত্রী শ্রীমতী তন্দ্রা রায় কে “অন্যনা সম্মান ২০২৪” এর জন্য মনোনীত করেছে।।