পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বাদ দিলে বাঙালি ছেলেমেয়রা ইংরেজি শিখেছে স্কুলে গ্রামার বই থেকে। শুধু স্কুলের গ্রামার বই কেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া বাংলা মাধ্যমের বাঙালি ছেলেমেয়েরা যে ইংরেজি বই পড়ে সবই একজনের কলমে সৃষ্টি। নামটা সকলেই জানেন পি কে দে সরকার। কিন্তু হঠাৎ ইংরেজি বই কেন? এই ইংরেজি বই রচনার পিছনে রয়েছে একটা গল্প। একজন বাঙালি গ্রন্থাগারিক একবার পি কে দে সরকার কে অপমান করেছিলেন, সেই গ্রন্থাগারিক সেদিন জানতেন না তিনি আপামর বাঙালির কত বড় উপকার করেছিলেন।
প্রফুল্ল কুমার দে সরকার রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ পাশ করে কলকাতা আসেন এমএ পড়তে। সাথে সাহেবি কোম্পানি মার্টিন বার্ণ সংস্থায় চাকরি করতেন। লেখাপড়া চাকরি ভালোই ছিল কিন্তু একদিন ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা, যেখান থেকেই শুরু হল বাঙালির ইংরেজি শেখা। একদিন এক বইএর জন্য ইংরেজদের গ্রন্থগারে ঢুকতে গেলে গ্রন্থাগারিক তাকে আটকে দেয়। ইংরেজদের গ্রন্থাগারে ভারতীয় হিসেবে তার প্রবেশ নিষেধ। রেগে গিয়ে চাকরিই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সেদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বাঙালিকে ইংরেজি তিনিই শেখাবেন। পড়া শেষ ফিরে আসেন গ্রামে। শুরু করেন শিক্ষকতা। ছাত্র পড়িয়ে মানুষের সাথে মিশে তিনি জেনে নিতে থাকেন মানুষের ইংরেজিতে কোথায় ভয়, কেন ইংরেজি পারে না। সেই সমস্ত দিক মাথায় রেখেই বই লেখা শুরু করলেন তিনি। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হল High English Grammar and Composition বইটি। লেখক পি কে দে সরকার। ধীরে ধীরে এই বই হয়ে উঠল বাঙালির ইংরেজি শিক্ষার বর্ণ পরিচয়।
পরবর্তী কালে কলকাতায় বসবাস শুরু করলেও কোন চাকরি করেননি তিনি, বইয়ের রয়্যালটি দিয়েই সংসার চলে যেত তার। ১৯৭৮ সালে মৃত্যু হয় তার। আজ এত বছর পরেও বইটি সমান প্রাসঙ্গিক। এখন গ্রামার বইয়ের চল কিছুটা কমেছে। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর প্রায় ২০০০০ কপি বিক্রি হয় বইটির। বাঙালি ইংরেজি শিক্ষার জন্য হয়তো এই বইটি সমান গুরুত্বের মর্যাদা পাবে আজীবন।