Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

বামেদের চিরকুটের চাকরি খোঁজাটা বুমেরাং হল! কুণাল-পার্থ যুগলবন্দিতে অস্বস্তি বাড়ল শাসকের

Table of Contents

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

কয়লা, গরু পাচার কেলেঙ্কারিতে দলের হেভিওয়েট নেতাদের জড়িয়ে পড়াটা বিরম্বনা বাড়ালেও তৃণমূলের সরাসরি রাজনৈতিক ক্ষতি ততটাও হয়নি। কিন্তু নিয়োগ কেলেঙ্কারি সম্ভবত বিপদে ফেলতে চলেছে রাজ্যের শাসক দলকে। লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে স্কুল শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার ঘটনায় উপর থেকে নিজ একের পর এক তৃণমূল নেতাকর্মীর জড়িয়ে যাওয়াটা মোটেও ভালো নজরে দেখছে না সাধারণ মানুষ।

আসলে গরু বা কয়লা পাচারের ক্ষেত্রে আমজনতার সরাসরি ক্ষতিটা অতটা সাদা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু স্কুল, শিক্ষা এগুলোর সঙ্গে মানুষের সেন্টিমেন্ট অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে থাকে। সমাজ অনেকটা বদলে গেলেও এ নিয়ে মানুষের মনে অদ্ভুত একটা আবেগ কাজ করে। যে অভিভাবক টাকা দিয়ে শিক্ষকের সময় কিনে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করেন তিনিও পড়াশোনা ব্যাপারটাকে মনে মনে একটা অন্যরকম মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পারেন কিনা সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু মনের মধ্যে আজও বাংলার মা-বাবারা আশা রাখেন, তাঁদের সন্তান স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নীতি শিক্ষা লাভ করবে। কিন্তু নিয়োগ কেলেঙ্কারির ফলে অভিভাবকরা বুঝতে পারছেন তাঁর সন্তান স্কুলে গিয়ে যার কাছে পড়ছে তিনি আদতে অযোগ্য। লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই হল, যে নিজে ঘুষ দিয়ে চাকরি পায় সে আমার ছেলে-মেয়েকে কী নীতি শিক্ষা দেবে!

তাছাড়া শিক্ষকের চাকরি ঘিরে যে ভয়াবহ দুর্নীতির আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে সেটাও মানুষের মনে প্রবল প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। গড়পড়তা মানুষ ভাবছে, যোগ্যতা থাকলেও এরা সৎ পথে চাকরি দেবে না! আদৌ সবাই বেআইনি পথে চাকরি পেয়েছেন কিনা তা প্রমাণ হয়নি। কিন্তু গোটা শিক্ষক সমাজকেই একটা সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রাজনীতির উপকরণগুলো। দিনের পর দিন কলকাতার রাজপথে বসে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের ধরনা মানুষের মনের ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে। মানুষ সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের নির্মম বলে ভাবতে শুরু করেছেন।

এরপরও ভোটে তৃণমূল পরাস্ত হবেই এমন সহজ সরল সমীকরণে ভাবাটা বোকামো হবে। কারণ ভোট আরও অনেক ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। কিন্তু এটা ঠিক, এই নিয়োগ কেলেঙ্কারি সারদা কাণ্ডের পর আবার বেকায়দায় ফেলেছে তৃণমূল সরকারকে। স্বাভাবিকভাবেই ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করতেই হত রাজ্যের শাসক দলকে। কিন্তু তা করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথমে কুণাল ঘোষ এবং তার ২৩ মিনিট পর আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে কার্যত পুলিশের ঘেরাটোপে সাংবাদিক সম্মেলন করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে সমস্ত মন্তব্য করলেন তাতে কমার বদলে তৃণমূলের অস্বস্তি বোধহয় আরও বেড়ে গেল!

তৃণমূলের দলীয় মুখপাত্র হিসেবে কুণাল ঘোষ বাম আমলে চিরকুটের চাকরির অভিযোগকে হাতিয়ার করেন। তবে কুণালের আগে খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার এই চিরকুটে চাকরি নিয়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু এক বছর আগে এই সংক্রান্ত একটি চিরকুট তৃণমূলের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে একদিনের মধ্যে প্রমাণ হয়ে যায়, ওই চিরকুটের মাধ্যমে কারোর চাকরি হয়নি। তবে এবার রাজ্যের একেবারে শীর্ষস্থানীয় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীকে টার্গেট করতে গিয়ে তৃণমূলের শীর্ষস্থর থেকে যে ব্লান্ডার হল তা সত্যিই অবাক করার মত বিষয়।

প্রথম কথা, সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর চাকরির চিরকুট বলে যেটা বাজারে ছড়ানো হয়েছে তাতে দিব্যি দেখা যাচ্ছে সেটা একটা অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার বা নিয়োগপত্র। ১৯৮৭ সালে এইভাবেই প্রতিষ্ঠানের লেটারহেডের উপর হাতে লিখে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হত। কিন্তু এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারেও এক বড়সড় খামতি নজরে এসেছে। ১৯৮৭ সালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অধ্যক্ষ সই করছেন ২০২০ সালে! এই কাণ্ডকারখানা দেখে বাম শিবির থেকে বলা হচ্ছে, ‘ফটোশপটাও ভালো করে করতে পারে না শাসক’!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজেই ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের চাকরি করেন সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী। তাঁর চাকরি নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে কাগজ শাসক শিবিরের পক্ষ থেকে ছড়ানো হয়েছিল তার খামতিগুলি তুলে ধরে পাল্টা প্রচারে নেমে পড়ে বামেরা। তাদের এই পালটা প্রচার বরং জনমানসে বেশি প্রভাব ফেলেছে। এরপর সুজন চক্রবর্তী নিজে সাংবাদিক বৈঠক করে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ এ বাম সরকার বিদায় নেওয়া পর্যন্ত রাজ্যের শিক্ষক পদে যত চাকরি হয়েছে তার তালিকা বের করা হোক। তবে সুজনের এই চ্যালেঞ্জ তৃণমূল সরকার গ্রহণ করবে কিনা তা এখনও জানা যায়নি।

কুণালের গোলমাল এর আর‌ও অস্বস্তি বাড়িয়েছেন জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থবাবুর ভাবমূর্তি বলতে বাংলার মানুষের কাছে এই মুহূর্তে বোধহয় আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। দলও তাঁকে সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু কোন‌ও এক অজানা কারণে তিনি বারবার দলের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। যেন কিছুটা জোর করেই সেই চেষ্টা করছেন। বৃহস্পতিবারও তেমন করতে গিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষকে তিনি টার্গেট করেন।

কিন্তু পার্থর এই টার্গেট শুধু মিসফায়ার নয়, বরং নিজের শিবিরের দিকেই বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দিয়েছে। জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, ২০০৯ সালে তাঁর কাছে গিয়ে ডিওয়াইএফআই কর্মীদের চাকরি দেওয়ার জন্য তদবির করেছিলেন সুজন চক্রবর্তী। প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০৯ সালে রাজ্য সরকার পরিচালনা করছে বামফ্রন্ট। সেই সময় পার্থবাবু বিরোধী দলনেতা। নিজের দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সুজন চক্রবর্তী কেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলবেন তা সত্যিই কৌতুহল তৈরি করে। তাছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তখন চাকরি দেওয়ার বিন্দুমাত্র ক্ষমতাও ছিল না। ফলে তিনি কেন এমন অদ্ভুত অভিযোগ করলেন তা কেউ জানে না। কিন্তু এতে অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলের। বাম শিবিরের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তৃণমূলকে বাঁচাতে গিয়ে যাই হোক একটা মনগড়া কথা বলেছেন পার্থ, কিন্তু সময়টা তাঁর খেয়াল ছিল না।

এদিকে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তাও কতটা সত্যি সেটা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। দিলীপ ঘোষ প্রতক্ষ্য রাজনীতিতেই এসেছেন ২০১৫ সালে। সেই তিনি কী করে ২০১১ সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে বিজেপি কর্মীদের চাকরি দেওয়ার কথা বলবেন তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। দিলীপ ঘোষ নিজেও এই অভিযোগের বিরোধিতা করেছেন।

সবমিলিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে নিজেদের উপর চাপ হালকা করতে গিয়ে বামেদের টার্গেট করার চেষ্টা করেছিল শাসক শিবির। কিন্তু মাত্র ২৩ মিনিটের ব্যবধানে কুণাল ও পার্থ যা করলেন তাতে শাসক-শিবিরের দিশাহীন অবস্থাই আরও প্রকট হয়ে উঠল!

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুল করেছিলেন তা এতদিনে প্রমাণিত। কোন‌ও কিছুই তিনি ঠিক করে গুছিয়ে করতে পারেননি। এবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিরোধীদের নিশানা করতে গিয়েও তিনি বোধহয় দলের সমস্যা বাড়ালেন।

More Related Articles

ABHISHEK BAERJEE
সংবাদ ও রাজনীতি
“২০২৬-এ বিজেপি ৫০-এর নিচে আটকে যাবে”, শান্তিপুরে দাঁড়িয়ে জোরালো বার্তা অভিষেকের

নিঃশব্দ বিপ্লব’ সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী: ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপি ৫০-এর নিচে নামবে, অপারেশন সিঁদুর ব্যর্থ হবে, আর মানুষ তৃণমূলের পাশেই থাকবে বলে বিশ্বাস ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের।

Read More »
DIGHA
বিশেষ খবর
দীঘার হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া? রথযাত্রার আগে রাজ্য সরকারের কড়া বার্তা, অভিযোগ জানাতে হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন চালু

রথযাত্রার সময়ে দীঘায় বেড়েছে হোটেল ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ। এবার পর্যটকদের স্বস্তি দিতে হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন চালু করল রাজ্য সরকার। অতিরিক্ত চার্জ নিলেই সরাসরি অভিযোগ করুন।

Read More »
CM MAMATA BANERJEE
সংবাদ ও রাজনীতি
মমতার হস্তক্ষেপেই রেহাই মিলল রাজস্থানে আটকে পড়া বাংলা শ্রমিকদের, ফের কাজে ফিরলেন সকলেই

রাজস্থানে আটকে পড়া বাংলা শ্রমিকদের উদ্ধার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁরা আবার কাজে ফিরলেন। এই পদক্ষেপে প্রশংসিত মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি।

Read More »
সম্পাদকীয়
“জয় জগন্নাথ!” এই রথযাত্রায় খুলে যাবে ভাগ্যের তালা! জেনে নিন ১০টি সহজ কিন্তু ফলদায়ী টোটকা

২৭ জুন রথযাত্রা—শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি আধ্যাত্মিক রূপান্তরেরও সময়। শাস্ত্র অনুসারে, এই দিনে পালনযোগ্য কিছু সহজ টোটকা আপনার জীবনে আনতে পারে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি ও মানসিক শান্তি। জেনে নিন ১০টি কার্যকর টোটকা, যা বদলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য।

Read More »
আন্তর্জাতিক খবর
চীনের ‘মশা ড্রোন’: যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন গুপ্তচর, সাধারণ মানুষের কাছে অদৃশ্য এক হুমকি!

চীনের তৈরি মশার আকৃতির মাইক্রো ড্রোন নজরদারি ও স্পাই মিশনে বিপ্লব আনতে চলেছে। মাত্র ১.৩ সেমি দৈর্ঘ্যের এই ড্রোন সামরিক ক্ষেত্রে যেমন কার্যকর, তেমনি এর অপব্যবহার হতে পারে ভয়ঙ্কর। জেনে নিন বিস্তারিত।

Read More »
error: Content is protected !!