পুজোর বাকি আর মাত্র একটা মাস। সারা বছর বাঙালি তাকিয়ে থাকে এই বিশ্বজনীন উৎসবের দিকে। শহরের প্রতিটি নামী পুজো মন্ডপগুলোতে এখন চরম ব্যাস্ততা। ব্যাস্ততা চরমে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত পটুয়াপাড়া কুমোরটুলিতেও।
সুতানটীর গোড়াপত্তনের সাথে সাথেই শোভাবাজার থেকে বাগবাজার গঙ্গার ধারেই এই কুমোরটুলির গোরাপত্তন হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে মাটির তৈরী বাসনের ব্যাবহার ও চাহিদা থাকার কারনেই বেশকিছু মৃৎশিল্পী এই খানে বসবাস শুরু করেদেন। তারপর থেকেই অনান্য জিনিষের পাশাপাপাশি প্রতিমা তৈরীর কাজও এখানেই হয়।
দেশ স্বাধীন হবার আগে থেকেই, যখন ইংরেজ আমলাদের খুশি রাখতে শোভা বাজার রাজ বাড়িতে পুজো শুরু হয়েছিল। সেই আমল থেকে আজ পর্যন্ত বংশগত ভাবে পাল সম্প্রদায় এখানেই পড়ে আছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজ অবধি অনেক পরিবর্তন এসেছে। সার্বজনীন দুর্গোৎসব এখন সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে বিশ্বজনীন হয়েছে। এই কুমোরটুলি থেকেই মা দুর্গা পাড়িদেন দেশ বিদেশ। কারন কুমোরটুলির মৃৎ শিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের প্রশংসা বিশ্বজুড়ে। এতকিছুর পরেও একই রয়েগেছে উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি।
সেই সরু ঘিঞ্জি গলি। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় ভরে যায়। কোথাও কোথাও গলি এতটাই সংকীর্ন যে পাশাপাপাশি দুজন হাটা হয়ে যায় দুষ্কর। এমনকি বেশীর ভাগ গ্যালারি গুলি আজও বাশ টালি আর প্লাস্টিকের চাদরে তৈরী। এত সংকীর্ন গ্যালারীতেই চলছে বা চলে আসছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। তারই মধ্যে তাদের সংসার। কোথাও কোথাও দেখা যায় অসমাপ্ত প্রতিমাদের মাঝেই চলছে রান্নার কাজ বা চলছে কোন স্কুল ছাত্র বা ছাত্রীর পঠন পাঠন।
সব কিছু মিলিয়ে একটা জতুগৃহ হয়ে আছে কুমোরটুলি। আর তার সাথে রয়েছে অপরিচ্ছন্নতা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এ নতুন কিছুনা। এটাই কুমোরটুলির চেনা দৃশ্য। এখানেই আছে জন্ম এখানেই আছে মৃত্যু আর আছে নতুন থিম পুজোর শিল্পীদের তৈরী প্রতিমার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
এতকিছুর পরেও বর্তমান প্রজন্মের মৃৎশিল্পীরা উৎসাহী প্রতিমা তৈরীর পেশা তে। আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির এই যুগে, যেখানে নতুন বা বর্তমান প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির চাকরী নিয়ে দেশ বা রাজ্যের বাইরে গিয়ে নিজেদের কেরিয়ার তৈরী করছেন সেখানে যোগ্যতা থাকা সত্বেও কুমোরটুলির নতুন প্রজন্ম চাইছেন এই জৌলুসহীন মৃৎশিল্পীর পেশা কেই এগিয়ে নিয়ে যেতে।
যে পেশায় ক্রমাগত আসছে নতুন নতুন প্রতিকুলতা। মাটির পাশাপাশি এখন বাড়ছে ফাইবার ও অন্য নানান পদার্থ দিয়ে প্রতিমা তৈরীর চাহিদা। চেরাচরিত প্রতিমা শিল্পীদের পাশাপাশি নতুন করে প্রতিমা তৈরীর কাজে নামছেন আর্ট কলেজের ছাত্ররাও। তবে কুমোরটুলির শিল্পীরা বলেন ওনাদের সাথে আমাদের একটাই ফারাক ওনাদের কাগজের ডিগ্রী আছে যা আমাদের নেই। তবে ওনারা যা কাজ করবেন তার থেকে অনেক বেশী ভালো কাজ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা করে দেখাতে পারেন।
রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বছর বছর শোনা গেলেও কোন উন্নয়ন হয়না। ব্যাঙ্ক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেননা এই শিল্পীদের পাশে। তবুও বাপ ঠাকুরদার বয়ে আনা এই মৃৎশিল্পের ব্যাবসার ওপরেই অগাধ বিশ্বাস কুমোরটুলির নতুন প্রজন্মের। এটাই বোধহয় শিল্পের প্রতি শিল্পীর ভালোবাসা।