প্রচন্ড গরম আর তারমধ্যে ভোটের রাজনৈতিক গরম প্রচারে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন চলুন আপনাদের জন্য একটা আনন্দের, খুশির ও গর্বের খবর জানাই। কারণ এসব খবর প্রথম সারির সংবাদ মধ্যেমরা করেননা। তারা খুঁজে বেড়ান মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করা প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের যাদের আর পরবর্তীতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। তাঁদের ফলাফল দেখে কজনই বা অনুপ্রাণিত হয়? সে কথাও আমরা বলতে পারিনা। তবে হ্যা, মাঝখান থেকে কিছু প্রকাশকের বিজ্ঞাপন হয় বটে।
অর্টিজম আক্রান্ত শিশুদের আমরা দেখেছি। অনেকেই মনে করেন তারা পাগল বা abnormal. অনেকেই নিজের বাচ্ছা কে বলেন “ওদের সাথে মিশবি না “। সমাজের থেকে দুরে রাখা হয় কোন এক অজানা কারণে। স্কুল কলেজ বাসে ট্রামে অর্টিজম আক্রান্তদের সম্মুখীন হতেহয় মানসিক ও শারীরিক হয়রানির।
শুধুমাত্র মানসিক বা বলাভালো মস্তিষ্কের সামান্য অবিকশিত বা অপরিনত অবস্থার এই শিশুদের নিয়ে তাঁদের বাবা মায়েদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না।
কিন্তু আজ জানাবো এরকমই অর্টিজম আক্রান্ত অগ্নিপ্রভ-র কথা যে আজ গোটা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গর্বিত করেছে তার বাবা মা কে। যেখানে অনেকেই ভাবেন অর্টিজম আক্রান্ত শিশুরা ভবিষ্যতে কিছুই করতে পারবেনা বা স্বনির্ভর হতে পারবে না ঠিক সেখানেই শিলিগুড়ির বাসিন্দা অর্টিজম আক্রান্ত অগ্নিপ্রভ কলকাতার শিলদহ তে থেকে প্রেসিডেন্সি থেকে কলা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করলো। তবে এই যুদ্ধ টা খুব একটা সহজ ছিলো না।
২০০১ সালের ২২শে নভেম্বর, বিক্রম তালুকদার ও জয়শ্রী দেব জন্ম দেন ফুটফুটে অগ্নিপ্রভ-র। বছর দু তিনেক এর মধ্যেই কিছু অসামঞ্জস্য লক্ষণ ধরা পড়ায় তারা চিকিৎসকের কাছে যান এবং জানতে পারেন অগ্নিপ্রভ-র অর্টিজম আক্রান্ত। এর পরেই অগ্নিভ সহ তার পরিবার কে সম্মুখীন হতে হয় এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার। পরিবারের অন্য আত্মীয়রা দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাদেরকে ব্রাত্য রাখা হয়। এরপরে স্কুলে অগ্নিপ্রভ -র থেকে স্বপ্রতিভ ব্যবহার না পেয়ে সহপাঠী দের মারধর এমনকি শরীরে পেনের নিব ফুটিয়ে দেবার মতো গুরুতর আঘাত নিয়েও বাড়ী ফিরতে হয়েছে। ছোট্ট অগ্নিপ্রভ সেই অত্যাচারের প্রত্যউত্তর না দিতে পারলেও তার যাবতীয় প্রতিক্রিয়ার অভিব্যক্তি আছড়ে পড়তো জয়শ্রী দেবীর ওপর। কিন্তু জয়শ্রী দেবী হাল ছাড়েননি বরং প্রতিবার অগ্নিপ্রভ কে আরো শক্ত করে গড়ে তুলেছেন। অগ্নিপ্রভ কে শিখিয়েছেন কি ভাবে সমাজের এই সব মানুষ ও তাদেরকে অত্যাচার কে এড়িয়ে যেতে হয়, কারণ অগ্নিপ্রভ কে একদিন ওর জীবনের লড়াই টা একাই লড়তে হবে।
এরপর অগ্নিপ্রভ ২০১৯ সালে CBSC পাশ করে এবং ২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতার শিয়ালদহ তে থেকে কলেজস্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি তে এবছর স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেয়। এই দুবছর অগ্নিপ্রভ একা কলকাতায় থেকে কলেজ যাতায়াত ও পড়াশোনা চালিয়েগেছে। শুধু তাই নয়, অগ্নিপ্রভ একাই কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাতায়াত করতে সক্ষম।
আমরা জয়শ্রী দেবীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কলেজ জীবনে তো অনেকেরই জীবনে বান্ধবী আসে, প্রেম আসে। অগ্নিপ্রভ -র জীবনে এরকমই কিছু ঘটেছে কিনা? জয়শ্রী দেবী জানান অগ্নিপ্রভ এ বিষয়ে বলে – যারা পড়াশোনা করে বাবা মা কে দেখাশোনা করে, তারা এসব প্রেম ট্রেম করেনা “। তবে প্রেসিডেন্সি তেও যে দিনগুলো খুব ভালো কেটেছিল টা কিন্তু নয়। প্রথমদিকে প্রেসিডেন্সির বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী অগ্নিপ্রভ কে যথেষ্ট হ্যাণস্থা করেছিল যা পরবর্তীকালে কলেজ কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপে থেমে যায়।
ইতিমধ্যেই অগ্নিপ্রভ স্থাপত্য বিদ্যা নিয়ে উচ্চ শিক্ষা নেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জয়শ্রী দেবীর মতো আপনারাও যদি আপনাদের অর্টিজম আক্রান্ত সন্তানদের যদি আরো ধৈর্যের সাথে সাহস যোগান তাহলে ওরাও আগামী দিনে দেশের ও দশের এক হয়ে স্বনির্ভর হতে পারবে।