“বেটে কো হাত লাগানে সে প্যাহেলে, বাপ সে বাত কার” – জাওয়ান সিনেমার এই বিখ্যাত ডায়লগটি শাহরূখ আসলে ভারতীয় আইন ও বিচার ব্যাবস্থা কেই এক হাত নিলেন। দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যম এসব বুঝলেও তারা বলিউড বাদশার বিষয়ে লিখতে নারাজ কারন তারা বানিজ্যিক সন্ধির বাইরে যেতে চাইবেন না। তাই আমরাই সংবাদ জগতে এই নিয়ে আলোকপাত করতে চলেছি প্রথম। অবশ্যই আপনাদের কিছু পুরোনো ঘটনা মনে করাতে চাইবো।
এই মুহুর্তে সবার মূখে একটাই নাম “জাওয়ান”। “বলিউডের কিং খানের নতুন ছবি যা নাকি সব হিট ভারতীয় ছবির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে রিলিজের দুদিনের মধ্যে। কিন্তু কয়েক বছর আগেই কোভিড কালে ও জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা বলিউড চলচ্চিত্র জগত কে দর্শকদের একটি বৃহত্তর অংশ ভীষন রকম ভাবে নিমজ্জিত করেছিল। অপবাদ উঠেছিল পরিচালক করন জোহার, শাহরুখ খান, আমির খান ও সালমান খানের বিরুদ্ধে স্বজন পোষনের। কারন ছিন জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্য জনক ভাবে আত্মহত্যার ঘটনা। যে ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বেরোয় আরো অজানা তথ্য। জানতে পারা যায় বলিউডের বেশীর ভাগ নায়ক নায়িকা থেকে শুরু করে ছোট খাটো কমেডিয়ান পর্যন্ত সবাই নিষিদ্ধ মাদকাশক্তের সাথে জড়িত এমনকি সেখানে কেউ কেউ সেই সব মাদক অন্যদের সরবরাহ পর্যন্ত করতেন। সেই মুহুর্তে সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্য জনক মৃত্যুর তদন্তের পাশাপাশি বলি তারকাদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ মাদক রাখা ও সেবন করার জন্য তদন্ত ও মামলা শুরু হয়। নিষিদ্ধ মাদক সেবন ও মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে রাখার কারনে একে একে তদন্তে ডেকে পাঠানো হয়েছিল অভিনেত্রী রাকুলপ্রীত, সারা আলি খান, দীপিকা পাদুকোন সহ বহু তারকা দের। এমনকি বলিউডের বিখ্যাত পরিচালক করন জোহারের প্রতিটি পার্টিতে সেই সময় তদন্ত এজেন্সির গুপ্ত নজরদারীও চালানো হত। পরবর্তীকালে সব বলি তারকারাই নিজেদের আর্থিক শক্তি ও প্রভাবশালী হওয়ায় তারা নিজেদের এই নিষিদ্ধ মাদক মামলা থেকে নিজেদের কে দুধের ওপর থেকে মাছি তুলে ফেলে দেবার মতো করেই সরিয়ে নেন। এই তদন্ত শুরু হবার সময় দেশের একটি প্রথম সারির টেলিভিশন সংবাদ চ্যানেলের মূখপাত্র চিৎকার করে হাত নেড়ে বলি তারকা দের শাস্তির দাবী করলেও পরবর্তীকালে নিশ্চুপ হয়েই থেকে যান। এমনকি বলি তারকারা যে পার্টিতে গিয়ে কিভাবে নেশাগ্রস্ত হয়ে থাকেন তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। এখান থেকেই প্রমান হয় যে বলিউড কতটা নিষিদ্ধ মাদক সেবন ও তার কারবারিদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। আর এবার আসি বলিউড কিং বা বাদশার কথায়।
বলিউড কিং বা বাদশা শাহরুখ খান ভারতের সব থেকে বেশী জনপ্রিয়। ভারত ছাড়াও তার অগনিত ভক্তের সংখ্যা পৃথিবী জুড়ে, সাথে চুড়ান্ত আর্থিক ক্ষমতা। এহেন মানুষের অহংকার তো থাকবেই। এবং সেই অহংকার থেকেই তিনি একবার এক সংবাদ মাধ্যম কে জানিয়ে ছিলেন, তিনি বলিউড কিং তার ছেলে আরিয়ান নেশা করবে, মহিলাদের দের নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এটাই খুব স্বাভাবিক। অর্থাৎ বলিউড কিং বাবা হয়ে আরিয়ানের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন অনেক আগে থেকেই। তাই আগে থেকেই সংবাদ মাধ্যমে নিজেই জানিয়ে রেখেছিলেন। অন্যদিকে বলিউডে নিষিদ্ধ মাদক সেবনের তদন্তের ফলে প্রায় সব রকমের পার্টি গুলিতে নজরদারী চলছিল। মুম্বাই টু গোয়া-র একটি ক্রুজ পার্টিতে নিষিদ্ধ মাদক সেবনের খবর পৌঁছে যায় তদন্তকারীদের কাছে। তদন্তকারীদের একটি বিশেষ দল ওই ক্রুজ পার্টিতে অন্যদের সাথে মিশে নজরদারী চালাতে থাকেন এবং নিষিদ্ধ মাদক সেবনের শুরুতেই তারা তল্লাশি অভিযান করতে গিয়ে নিষিদ্ধ মাদক উদ্ধার করেন বেশ কিছু যুবক যুবতীদের কাছে আর সেই যুবক যুবতীদের মধ্যেই ছিলেন কিং খানের পুত্র আরিয়ান খান। আরিয়ান খান কে নিষিদ্ধ মাদক সেবন ও রাখার কারনে গ্রেফতার করে নারকটিক্স ডিপার্টমেন্ট। মুহুর্তের মধ্য ভাইরাল হয় সেই খবর, গ্রেফতার শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খান।
মুম্বাই নারকটিক্স ডিপার্টমেন্টের অন্যতম আধিকারিক সামীর ওয়ান্খেড়ে প্রেস বিবৃতিতে জানিয়ে দেন, আরিয়ান খান কে নিষিদ্ধ মাদক কান্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সহজে ছাড়া পাবার কোন সুযোগ নেই।
ভেঙে পড়েন কিং পত্নী গৌরী খান। প্রতিজ্ঞা করেন আরিয়ান বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত অন্ন গ্রহন করবেন না। মাঠে নামেন কিং খান নিজে। দীর্ঘ তর্ক বিতর্কের পর আদালত শেষ পর্যন্ত আরিয়ান খান কে নিষিদ্ধ মাদক মামলা থেকে বেকসুর খালাস করেন। কিং খান এমন ভাবেই মামলায় ভারতের শ্রেষ্ঠ আইনজীবীদের নিয়োগ করেন যে অন্যদিকে নারকটিক্স ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক সামীর ওয়ান্খেড়ের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়ে যায়। যে সামীর ওয়ান্খেড়ের নামে কদিন আগেই জনগনের মধ্য ভারতের অন্যতম সৎ তদন্তকারী অফিসার হিসাবে ছিল তা এখন বদলে হল দেশের সব থেকে বেশী অসৎ তদন্তকারী অফিসার কারন তিনিই নাকি বলিউড বাদশার থেকে ২৯ কোটি টাকা উৎকোচ বা ঘুষ চেয়েছিলেন আরিয়ান কে মুক্তি দেবার জন্য। আইন আদালত চত্বরে একটা কথা ভীষন প্রচলিত। ভারতে টাকা যার আইন তার। অর্থাৎ বলিউড কিং খান তার পুত্র কে বাঁচাতে টাকার বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন।
আর আজ জাওয়ান চলচিত্রের মাধ্যমে মুম্বাই নারকটিক্স ডিপার্টমেন্টের আধিকারিক সহ ভারতীয় প্রশাসনের সকল কেই জানিয়ে রাখলেন – “বেটে কো হাত লাগানে সে প্যাহেলে, বাপ সে বাত কার”।