পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ গতকাল ১৪ই জুন সন্ধ্যায় মিনার্ভা থিয়েটারে উপস্থাপিত হল কাব্য কলা মনন ও দেবান্তরা আর্টস -এর নিবেদন ‘The Last Supper’। Roald Dhal এর লেখা ‘Lamb To The Slaughter’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। গল্পটির নাট্যরূপ রূপ দিয়েছেন অন্তরা চ্যাটার্জী। টান টান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ ৪০ মিনিটের ছোট পরিসরে একটি মার্ডার মিস্ট্রি উপস্থাপিত হয় এদিন মঞ্চে।

নাটকের সময় পরিবর্তন, মূল চরিত্র ম্যারি মেলনির বয়সের দুটো সময়কাল সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সকলেরই সংলাপ এবং উচ্চারণ খুব সাবলীল, হলিউডের আমেজ তৈরি করতে সাহায্য করেছে। ম্যারি মেলনির স্বামী প্যাট্রিক খুন হয়েছে সেই খুনের তদন্ত করতে আসে জ্যাক নামক এক পুলিশ অফিসার এবং তার দুই সঙ্গী। সেই খুনের খুনি এবং খুনের অস্ত্র খুঁজে বের করা ঘিরেই তৈরি হয়েছে নাটকের বিষয়বস্তু।

ম্যারি মেলনির যুবতী বয়সের চরিত্রে সুলগ্না চক্রবর্তী অভূতপূর্ব। তার প্রতিটি অভিব্যক্তি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, সংলাপের ধরণ, আবেগ সবটা মিলে চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছে। তার স্বামীর দুঃখে ভেঙ্গে পরা, অনাগত সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, পুলিশরা সারা রাত কাজ করবে বলে তাদের জন্য খাবার তৈরি করা সবটা অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী। পুরো নাটকটি যেন তিনি একা হাতেই ধরে রেখেছিলেন।

এছাড়া প্যাট্রিকের চরিত্রে সুমিত কুমার রায় এবং পুলিশ অফিসার জ্যাকের চরিত্রে ভাস্কর মুখার্জী যথেষ্ট সাবলীল। নাটকের খুব স্বল্প পরিসরে প্যাট্রিকের সমস্ত অঙ্গভঙ্গি অপরাধবোধ, রাগ, খারাপ লাগা সবটা সুদক্ষ হাতে করেছেন অভিনেতা। খুবই অল্প কিছুক্ষণের জন্য ম্যারি মেলনির বয়স্ক চরিত্রে দেখা গেছে অন্তরা চ্যাটার্জীকে। যদিও তাকে নাটকের অভিনেতা না বলে প্রেজেন্টার বলাই যায়।

নাট্য জগতে প্রসেনজিত বর্ধন এক খুবই উল্লেখযোগ্য নাম। যদিও এখন তিনি আমাদের মাঝে নেই। নাটকটির পরিচালনার দায়িত্বভার তিনিই সামলেছিলেন। যদিও এখন সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন সুমিত কুমার রায়। নাটকে সমস্ত চিত্রনাট্য ও সংলাপ উত্তেজনা পরিপূর্ণ হলেও নাটকের সব থেকে সুন্দর একটি দৃশ্য হচ্ছে রিওয়াইন্ডের একটি দৃশ্য।

যে দৃশ্যটি সব থেকে নজর কেড়েছে দর্শকদের। এত সুন্দর একটি না দেখলে দর্শক মিস করবেন। দৃশ্যটি দেখলেই বোঝা যায় নাটকটির পিছনে কতটা পরিশ্রম রয়েছে সকল কলাকুশলী এবং পরিচালকের। অভিনেতাদের নিজেদের মধ্যে এই বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা না থাকলে এমন একটি দৃশ্য মঞ্চে উপস্থাপন করা হয়তো অসম্ভব হত।

মঞ্চে অভিনেতা অভিনেত্রীদের বাদ দিলে তারপরের সব থেকে জরুরি বিষয়গুলি হচ্ছে মঞ্চসজ্জা, আলো এবং আবহ। মঞ্চসজ্জার দিক থেকে বলতে হয় একটি বিদেশী পরিবারের খাওয়ার ঘর যেমন হওয়া দরকার একদম তেমনই হয়েছে। আবহ এবং আলোর কোন অতিরিক্ত আতিশয্য ছিল না নাটকে।

সবই সময় ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী খুবই মানানসই হয়েছে। আলোক নিয়ন্ত্রনে প্রিয়া সাহা রায় এবং আবহ প্রক্ষেপণে স্নেহাশিস দে খুবই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যেহেতু নাটক একটি যৌথ প্রয়াস তাই সকলের যৌথ পরিশ্রম না হলে কোনও নাটকই যথাযথ রূপ পায় না। সেই দিক দিয়ে বিচার করলে নাটকটি সব দিক দিয়ে যথাযথ এবং উপযুক্ত। এত সুন্দর একটি নাটক সকল দর্শকেরই দেখতে যাওয়া উচিত। স্বল্প পরিসরে একটা ভালো লাগা উপহার দেবে দর্শকদের এই নাটকটি।