Home » রথের রশিতে টান মানেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়া

রথের রশিতে টান মানেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়া

বহতা নদী সরকার

শুরু হল মাস, পক্ষ, সপ্তাহ, দিন, ক্ষণ গোনা। জগন্নাথ দেবের রথের রশিতে টান মানেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়া। ঢাকের বাদ্যি জানান দিচ্ছে ‘মা আসছেন..’। রথের দিন শুভ বলে এ দিনেই দুর্গা পুজোর কাঠামো পুজোর রীতি প্রচলিত। গঙ্গা মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজও শুরু হয় এই দিনে। বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা খুঁটি পুজোর শুরু করে দিয়েছেন। তবে আধুনিকতার খুঁটি পুজো নয়, কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হল দুর্গা পূজার প্রস্তুতি।

খুঁটি পুজোর ধারণাটি এসেছে প্রায় শত বছর পুরনো এক রীতি থেকে। পূর্বে এত ক্লাব, থিম, প্রতিযোগিতার পিছনে ছোটাছুটি ছিল না। পুজো মানেই ছিল বনেদি বাড়ির সাবেকি একচালা প্রতিমা। আর সেই সময় মূলত বাড়ির ঠাকুর দালানে গড়া হত প্রতিমা। তখন থেকেই অনেকে রথযাত্রার শুভ দিনে, মাটির প্রতিমার কাঠের ফ্রেমকে পুজো করা হত। যেটি ‘কাঠামো পুজো’ বলেই পরিচিত। এরপর একটু একটু করে গড়ে উঠত দুর্গা প্রতিমা। পুরাণ মতে, রথের দিন কাঠামোতে মাটি দিয়ে ‘মা’কে আহ্বান জানানো হয়। আর এই মাটির মধ্যে রয়েছে পতিতালয়ের মাটি।

পতিতালয়ে যে পুরুষরা যায় তারা কি খারাপ কাজ করছে না? যদি খারাপ কাজ করার পর তারা স্নান সেরে মন্দিরে গিয়ে পূজা দিতে পারে; মাকে প্রণাম করতে পারে; তাহলে পতিতালয়ের মেয়েরা কেন এখানে ঘৃণিত হবে? সেই যুক্তি থেকে ওই মেয়েরা নির্দ্বিধায় মাকে প্রণাম বা পূজামণ্ডপে এসে পূজা উদযাপন করতে পারে; সে জন্যই মায়ের প্রতিমা তৈরি করতে পতিতালয়ের মাটির প্রয়োজন হয়।

আবার একজন পুরুষ যখন পতিতালয়ে গিয়ে অবৈধ যৌনাচার করে তখন ওই পুরুষের জীবনের সমস্ত পূণ্য পতিতালয়ের মাটিতে পতিত হয় বা পূণ্য তাকে ত্যাগ করে। বিনিময়ে ওই পুরুষ পতিতার ঘর থেকে নিয়ে আসে সমস্ত পাপ। এমন অনেক পুরুষের অর্জিত সমস্ত পূণ্য ত্যাগে পতিতাদের ঘরের মাটি পূণ্যময় হয় বলে মনে করা হয়। তাই দুর্গা পূজায় পতিতার ঘরের মাটি লাগে।

পুরাণ কাহিনী মতে, ঋষিবর বিশ্বামিত্র ইন্দ্রের সমান ক্ষমতাধর হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন। ইন্দ্ৰ তাকে বিরত করতে স্বর্গের অপ্সরাকে পাঠালেন। কঠোর তপস্যারত বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হল। ইন্দ্রের ইচ্ছায় পূর্ণ কামাতুর বিশ্বামিত্র মেনকার লোভের শিকার হলেন। মেনকা যদিও অষ্টসতীর কেউ নন, তবুও তিনি নারীজাতির প্রতিনিধি। তিনি নিজে কলঙ্কের বিষ ধারণ করেন, তাকে সম্মান জানানোই সামাজিক রীতি। কাজেই, দুর্গা প্রতিমা গড়ার মধ্যে গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শীষ ও পতিতালয়ের মাটি -এই চারটি মূল উপাদান থাকে।

অকালে মহামায়া মোট ন’টি রূপে পূজিত হন। এই নবম কন্যাই হলেন পতিতালয়ের প্রতিনিধি। অষ্টকন্যার পর শেষ পুজোটি তাই পায় তারাই। সমাজ যাদের কোণঠাসা করে রাখে সারাবছর, দেবীবন্দনায় তারাই পূজিত হন মানুষের মনে মনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!