প্রতিবেদক – সন্দীপ চক্রবর্ত্তী
‘রবির ঘর’, যার বাংলা অর্থ করলে সূর্যের আবাস বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীতের বাড়িও বলা যায়, দমদমের বুকে একটি ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘রবির ঘর’ শুধু ছাত্রছাত্রীদের কণ্ঠস্বরের প্রশিক্ষণই দেয়নি, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সমৃদ্ধ দর্শনে নিজেদের মগ্ন করার যাত্রাও শুরু করেছে। স্বামী বিবেকানন্দের যে মতাদর্শ, তাও রবির ঘরের ছেলে-মেয়েদের সার্বিক বিকাশ ও শিক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের নীতি, চিন্তাভাবনা, মতাদর্শ এবং দর্শন হ’ল মূল উপাদান যার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানটি সঙ্গীত প্রশিক্ষন প্রদান করে চলেছে। সঙ্গীতের ঐশ্বরিক হাতের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, আস্থা ও আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলাই এর মূল লক্ষ্য। রবির ঘরের ছেলেমেয়েরা এতটাই সুসজ্জিত যে, তারা বিষয়ের মধ্যে পূর্ণতার শিখরে পৌঁছানোর জন্য কঠোর প্রচেষ্টা ও ধ্যানের মাধ্যমে সর্বশক্তিমানকে খুঁজে পেতে চায় সঙ্গীতের মাধ্যমে।
১৮৯৭ সালের ১ মে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতায় বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠা করেন, নিঃস্বার্থ কাজের প্রচারের উদ্দেশ্যে। এই প্রতিষ্ঠানের মূল পরিকল্পনাকারী প্রসিদ্ধ সঙ্গীতশিল্পী শ্রী শান্তনু রায়চৌধুরী এই দিনটিকে মানবজাতির ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচনা করেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী শ্রীমতী নবনীতা রায়চৌধুরী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে শিষ্টাচার ও সঙ্গীত, মানবতার প্রকৃত অর্থ বিকাশে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এই সব দিক বিবেচনা করে, রবির ঘর প্রতি বছর ১লা মে তারিখে বৈকালিক শোভাযাত্রার আয়োজন করে দিনটিকে সম্মান জানায়।
প্রতি বছরের মতো এবছরও ১লা মে তারিখে ‘রবির ঘর’ আয়োজন করে এই ‘রবিবাউলের নগর কীর্ত্তন’ শীর্ষক বৈকালিক শোভাযাত্রার। এটি ছিল নগর কীর্ত্তনের সপ্তদশ বর্ষ। ঠিক বিকেল পাঁচটায় দমদম ক্যাণ্টনমেণ্ট কুমোরপাড়া সংলগ্ন দেব গার্ডেন থেকে শুরু হয় প্রায় ১ ঘণ্টার এই পরিক্রমা। এই বর্ণময় শোভাযাত্রায় রবির ঘরের ছেলেমেয়েরা ছাড়াও দমদম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ পা মেলান। পা মেলালেন শ্রদ্ধেয় পন্ডিত সুবীর চক্রবর্ত্তী মহাশয়ও। শোভাযাত্রা এগিয়ে চলে পঞ্চকবির গান ও কালজয়ী বাংলা গানের পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ছিল রবির ঘরের ছোট্ট ছেলে মেয়েদের গান। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সভাপতি শ্রী দুলাল দেব মহাশয় ও শ্রী শান্তনু রায়চৌধুরী।
রবির ঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার শ্রী শান্তনু রায়চৌধুরী শ্রীমতী নবনীতা রায়চৌধুরী ‘রবিবাউলের নগর কীর্ত্তন’ সম্পর্কে বলেন –
ইন্ডিয়ান ক্রনিক্যাল্স রবির ঘরের এই মহৎ যাত্রা পথের শুভকামনা প্রার্থণা করে।