রাজ্য সরকারের ও কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর জন্যই রয়েছে নানান সুযোগ সুবিধা সহ সরকারী স্বীকৃতি। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্গত রেল পরিষেবা তে দেশের প্রতিটি রেল স্টেশনে যাত্রীদের মাল পত্র বহন করার জন্য রয়েছেন লাল পোশাক পরা কুলি । যারা রেলের স্থায়ী কর্মী না হলেও তাদের হাতে থাকে একটি ধাতব পদক যেখানে তাদের একটি ক্রমিক সংখ্যা লেখা থাকে । সেই সংখ্যা রেকর্ড থাকে রেল দপ্তরের কাছে যাতে যাত্রীদের কোন মাল কোন কুলি দ্বারা চুরি বা হারিয়ে গেলে সেই কুলির ঠিকানা ছবি সব তদন্তের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে ।।। অন্যদিকে আমাদের রাজ্যে বেশ কিছু বছর হল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছেন সিভিক পুলিশ , স্থানীয় বেকার যুবক যুবতীরা স্থানীয় থানার পুলিশ ও প্রশাসন কে পরিবহণ পরিচালনা থেকে শুরু করে নানান কাজে সাহায্য করছেন । এই সিভিক পুলিশ দের জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট পোশাক , পরিচয় পত্র সহ মাসিক পরিশ্রমিকের ব্যবস্থা । অথচ যুগের পর যুগ ধরে রাজ্যের সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত অসংখ্য অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী যাদের কে আমরা সাধারণত আয়া মাসি বা ওয়ার্ডবয় বলে চিনি তারা যাবতীয় সুযোগ সুবিধা তো দূর , সামান্য পরিচয় পত্র থেকেও তারা আজও ব্রাত্য । হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে থাকে না এই সব অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীদের কোন নথিভুক্ত ।।
এই মুহূর্তে রাজ্যে ছোট বড় মিলিয়ার সরকারী হাসপাতাল বা চিকিৎসালয়ের সংখ্যা ( পশ্চিমবঙ্গ স্বরোজগার নিগম লিমিটেড এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ) 245 টি । এতো গুলি সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে সরকারী অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গুলির পাশাপাশি রাজ্যবাসী তাদের নানান আপদ বিপদে পাশে পান আয়া মাসি দের । সরকারী হাসপাতালে যারা চিকিৎসা করিয়ে অভ্যস্ত তাদের সাথে এই আয়া মাসিদের পরিচয় শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে। হ্যা ঠিক ই পড়েছেন । এই আয়া মাসিরাই প্রকৃত সেবা করেন সরকারী হাসপাতালের গর্ভবতি নারী থেকে বিভিন্ন অসুস্থ মানুষের । সরকারী নার্স …. তারা কোথায় ? তারা শুধু মাত্র ইনজেকশন দিয়েই তাদের কাজ শেষ করেন । তারপর থেকে রোগীর যাবতীয় দেখ ভালের দায়িত্ব সরকারী হাসপাল বা চিকিৎসালয়ে এই আয়া মাসি দেরই ।
এই আয়া মাসিরাই রোগীদের সঠিক সময়ে ওষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে , স্নান করানো , সময় মতো খাওয়ানো, পোশাক পরিবর্তন করা সবটাই করে থাকেন কিন্তু সরকারী নার্স বা সিস্টার রা এসব কাজ করেন না ।
যুগ যুগান্তর ধরে এই আয়া মাসিদের ওপরেই ভরসা করে আসছেন সাধারণ মানুষ । সিস্টার দের কোন রোগীদের বিষয়ে সামান্য প্রশ্ন করতেও ভয় পান সাধারণ মানুষ ।
এত কিছুর পরেও , এই আয়া মাসিদের কোন স্বীকৃতি নেই রাজ্যের কোন সরকারী চিকিৎসালয়ে । না আছে তাদের সঠিক পরিচয় পত্র বা আইডি কার্ড না আছে তাদের পরিশ্রম করার সম্মান । সরকারী কর্মী হিসাবে নার্স বা সিস্টার দের কাছে একাধিক বার এই আয়া মাসিরা অপমানিত হন, লাঞ্ছিত হন । এমন কি তাদের রোগীর পাশে বসতে পর্যন্ত দেওয়া হয়না ।
অন্যদিকে মাঝে মাঝেই সরকারী হাসপাতাল থেকে রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজন অভিযোগ তোলেন রোগীর মুল্যবান জিনিস পত্র চুরি গেছে। যার দায় গিয়ে পড়ে আয়া মাসিদের ওপর। তাহলে কি সব আয়া মাসিরাই অপরাধী ?
রাজ্যের এতো গুলি সরকারী হাসপাতালে অসংখ্য আয়া মাসি কাজ করে চলেছেন । তাদের বিষয়ে সরকারী হাসপাতাল কতৃপক্ষ ঠিক কতটা জানেন ? যুগ যুগ ধরে তাদের কাজ করতে দেওয়ার পর তাদের কে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছেনা কেন ?
বাম আমল থেকে বহু প্রতিশ্রুতি পেলেও আজ পর্যন্ত এই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্রাত্য থেকে গেছেন তাদের ন্যুনতম সুযোগ সুবিধা থেকে ।। তাদের কথা কোন অজ্ঞাত কারণে পৌঁছতে পারছে না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে ।। এ বিষয়ে আমরা টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলাম আর জি কর মেডিক্যাল হাসপাতালের এডিশনাল মেডিক্যাল সুপার ডা: দৈপায়ন বিশ্বাসের সাথে । প্রশ্ন করেছিলাম অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী দের দাবি নিয়ে কিন্তু ডা: দৈপায়ন বিশ্বাস সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে জানালেন “এসব অবান্তর প্রশ্ন তাকে করা যায় না” বলেই ফোন কেটে দেন ।