সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মাথায় পাগড়ি পরানোর জন্য শোভাবাজার থেকে বিশেষজ্ঞদের আনা হয়েছিল। এই ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যেমন আলোচনা চলছে, তেমনি উঠছে প্রশ্ন— বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে কি আদৌ পাগড়ির কোনো সম্পর্ক আছে? নাকি এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিংয়ের একটি অংশ ?

বাংলার পোশাক সংস্কৃতি ও পাগড়ি
বাংলার ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কথা বললে ধুতি, পাঞ্জাবি, উত্তরীয়ের নাম আসে, কিন্তু পাগড়ি তেমন প্রচলিত নয়। রাজশক্তির আমলে বা জমিদারদের মধ্যে মুকুট বা বিশেষ ধরনের টোপর ব্যবহারের নজির আছে, তবে পাগড়ি কখনওই মূলধারার বাঙালি সংস্কৃতির অংশ ছিল না। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে পাগড়ির চল দেখা যায়নি।
তাহলে শোভাবাজার থেকে পাগড়ি বাঁধানোর বিশেষজ্ঞ এলেন কেন?
শোভাবাজারের ঐতিহ্য মূলত পুরনো বনেদি পরিবারগুলোর সঙ্গে যুক্ত। তবে সেখানেও পাগড়ি বাঁধার কোনও স্বতন্ত্র সংস্কৃতি আগে দেখা যায়নি। এটা কি তাহলে শুধুই এক রাজনৈতিক প্রতীকী কৌশল?

রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে পাগড়ি
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে— রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাটে পাগড়ির বিশেষ গুরুত্ব আছে। রাজনৈতিক নেতারা সেখানে ক্ষমতা ও গৌরবের প্রতীক হিসেবে পাগড়ি পরেন। কিন্তু বাংলা বরাবরই রাজনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আলাদা পথ অনুসরণ করেছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ বা বাঘাযতীন— কারোরই মাথায় পাগড়ি দেখা যায়নি। তাহলে শুভেন্দু অধিকারীর মাথায় পাগড়ি কেন?
ব্র্যান্ডিং না কি বাংলার সংস্কৃতির বিকৃতি?
একটা বিষয় স্পষ্ট— শুভেন্দু অধিকারীর মাথায় পাগড়ি পরানোর ঘটনা বাঙালির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির অংশ নয়। বরং এটি রাজনৈতিক প্রতীকী কৌশলেরই অংশ, যেখানে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের রীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলার সংস্কৃতি ও রাজনীতির নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে, সেটাকে ধরে রাখাই শ্রেয়। অন্যথায় বাংলার আসল পরিচয় হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
শেষকথা
বাঙালি সংস্কৃতি সবসময়ই নিজের আত্মপরিচয় নিয়ে গর্বিত। বাহ্যিক অনুকরণ বা অন্য রাজ্যের সংস্কৃতির অনুসরণ না করেই বাংলা তার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি গড়ে তুলেছে। তাই শোভাবাজার থেকে পাগড়ি বাঁধানোর বিশেষজ্ঞ আনার বিষয়টি নিছকই এক রাজনৈতিক প্রদর্শনী এবং বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।