পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ গতকাল ১৪ই জুন সন্ধ্যায় মিনার্ভা থিয়েটারে উপস্থাপিত হল খড়দহ দ্বিসাত্তিক নাট্য সংস্থার নিবেদন ‘ধূসর অতীত’। এদিন নাটকটি পঞ্চম বারের জন্য উপস্থাপিত হয়।
সত্তরের দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে নাটকটি। এশিয়ার মুক্তি সূর্য তখন সারাদেশে মুক্তি ঘটাচ্ছে, তার প্রভাব এসে পড়েছে বাংলাতেও। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা উড়তি মস্তানের জুলুম, মেয়েদের প্রতি অত্যাচার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন কীভাবে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল তা সাবলীল ভাবে ফুটে উঠেছে মঞ্চে। ৪৫ মিনিটের ছোট পরিসরে মঞ্চে একটি সময়কাল সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন কলাকুশলীরা।
গোটা নাটকে মাত্র ৪ জন মানুষ অভিনয় করেছেন। ৪ জনই নিজের চরিত্র সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। উড়তি মস্তান পল্টনের চরিত্রে সুমিত কুমার রায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তার কথাবার্তার ধরণ, অভিব্যক্তি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবটা দিয়েই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। উড়তি মস্তানদের জুলুম দেখে যেমন মানুষের রাগ হয় ঠিক তেমন অবস্থাই হয়েছে দর্শকদের। তার মুখে একটি সংলাপ ‘’আমরা সব জল, যখন যে পাত্রে থাকবো সে পাত্রের আকার নিয়ে নেবো’’ যেটা রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার মূল মন্ত্র। সেই সময় নাটকটি সমস্ত সময়কাল ভুলিয়ে দিয়ে সবকালের হয়ে ওঠে।
এছাড়া দরিদ্র অসহায় পিতার চরিত্রে প্রসূন ব্যানার্জী, মায়ের চরিত্রে অরুণা মুখার্জী অসাধারণ অভিনয় করেছেন। অসহায়তা, ক্ষমতার কাছে হেরে যাওয়া অথচ সাহসী আপোষহীন মানুষদুটো যেন বাস্তবেরই প্রতিমূর্তি। তার অসহায় কন্যা মিনুর চরিত্রে অভিনয় করেছে নিবেদিতা ভট্টাচার্য। সমাজের যেসব মেয়েরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রতিবাদ করতে করতে একসময় সবটা মেনে নিতে বাধ্য হয় সেই রকমই একটি চরিত্র মিনু। পরিশেষে মিনুর এক মনোলগ দর্শকদের চোখে সমাজেরই এক ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে ওঠে।
অভিনেতাদের পরিচয় বাদ দিলে নাটকটির সফলতার পিছনে পরিচালক প্রসূন ব্যানার্জীর অবদান সব থেকেই বেশি। সত্তরের দশকের মোড়কে মুড়িয়ে সব কালের এমনকি আজকের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপস্থাপন তারই মস্তিষ্ক প্রসুত। এছাড়া আলো, আবহ, সাজসজ্জা সব দিক দিয়েই মানানসই হয়েছে সময়ের সাথে। আবহ খুবই সময়োপযোগী হয়েছে পুরোটাই মনে হবে সেই সত্তরের দশকের প্রেক্ষাপটে বসে আছে সকলে।
মঞ্চে আলোর খেলাও ছিল বেশ অন্যরকম, কোনও রকম চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল আলো নেই, অথচ আলো যেন একদম ওই সময়েরই ওই ঘটনাটুকুর জন্যই তৈরি। আর বাকিটা জানতে হলে পরবর্তী কোনও শোতে আসতে হবে। সকলে থিয়েটারে গিয়ে দেখুন তবেই সকলের পরিশ্রম সার্থক হবে।