Home » সভ্যতার গায়ে আদিমতার কালি | কাঠগড়ায় তৃণমূল

সভ্যতার গায়ে আদিমতার কালি | কাঠগড়ায় তৃণমূল

chopra incident west bengal

বহতা নদী সরকার : অবিশ্বাস্য! অবর্ণনীয়! জঘন্য! উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার লক্ষীপুরের যুবক-যুবতীর পরকীয়া ইস্যুতে কুৎসিত এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো শুধু ভারত নয়; গোটা বিশ্ব। সোশাল মিডিয়াতে গোটা বিশ্ব দেখলো সভ্যতার বুকে দাঁড়িয়ে আদিমতার কালি। কীভাবে মানুষ মানুষকে প্রকাশ্যে এমন বর্বর নির্যাতন করতে পারে? আইন-আদালত, কোট-কাচারী থাকতে কীভাবে মানুষ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে আইন? মানুষের বিবেক আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

chopra incident , west bengal


মানবাধিকার নিয়ে আজ সারা বিশ্ব সোচ্চার। সেখানে প্রায়ই এমন বর্বর, নির্মম, নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটে চলছে ভারতে যা সভ্যতার গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা চোপড়া-কাণ্ডের দু’টি ভিডিয়োর ন্যক্কারজনক ঘটনা এখন মানুষের মুখে মুখে। এ যুগে দাঁড়িয়ে কীভাবে পরকীয়ার দায়ে যুবক-যুবতীকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হলো তা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।


রবিবার দুপুরেই তৃণমূলের চোপড়ার নেতা জেসিবির একটি ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়াতে আসে। সেই ভিডিয়োতে দেখা যায়, এক তরুণীকে রাস্তার মধ্যে ফেলে এক ছড়া কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারছেন জেসিবি। মার খেতে খেতে গুটিয়ে যাওয়া মেয়েটিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হচ্ছে। তার পরে আবার শুরু হচ্ছে মার। এক তরুণকেও একইভাবে মারতে দেখা যায় তাকে। সেই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরেই শোরগোল পড়ে যায়।


চোপড়ার কাণ্ডে দিল্লিতে সরব বিজেপি। লোকসভাও উত্তাল হয় এই ইস্যুতে। বুধবারই রাজ্যসভায় নাম না করে চোপড়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহিলাদের ওপর অত্যাচারের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা যে বেছে বেছে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন, সেটা খুব চিন্তাজনক। সভাপতি মহাশয়, আপনার মাধ্যমে দেশকে বলতে চাই, আমি কোনো রাজ্যের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। কোনো রাজনৈতিক স্কোর করার জন্যও বলছি না। কিন্তু কিছুদিন আগে আমি বাংলার কিছু ভিডিও সামাজ মাধ্যমে দেখেছি। এক মহিলাকে সেখানে রাস্তার ওপর সবার সামনে মারধর করা হচ্ছিল। বোন চিৎকার করছিল। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। সবাই ভিডিও রেকর্ড করতে ব্যস্ত।’


তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমান বলেছিলেন, ‘অন্য়ায় তো মেয়েটাও করেছে না, নিজের স্বামী, নিজের ছেলে-মেয়ে বাদ দিয়ে, ও দুশ্চরিত্রবান হয়েছে।’ তাঁর আরো দাবি ছিল, গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল বলে মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য ওই কাজ করেছিল অভিযুক্ত ‘জেসিবি’। কে এই জেসিবি? তৃণমূল কংগ্রেসের শক্তিশালী নেতা তাজেমুল ইসলাম, সংক্ষেপে জেসিবি , তার বিরুদ্ধে রয়েছে একটি হত্যা মামলার সহ ১২টি পুরনো ফৌজদারী মামলা। কার প্রশ্রয় আশ্রয়ে আজ ফুলে ফেঁপে কলা গাছ হয়ে উঠেছে?


কীভাবে একজন বিধায়ক একজন যুবতীর ওপর কালিমা লেপন করতে পারে সেটা একটা বড় জিজ্ঞাসা? কি প্রমাণ আছে তার হাতে? প্রমাণ থাকলে আইন কি বলে সেটা আমাদের জানাতে হবে। রাজনৈতিকভাবে এই ঘটনা এখন ইস্যু হয়ে উঠছে। আমারা ভুলে যাচ্ছি মানুষের জন্য রাজনীতি। রাজনীতির জন্য মানুষ নয়। কার প্রশ্রয়ে জেসিবির এমন দুঃসাহস হলো যুবক-যুবতীকে এমন নির্মমভাবে মারার?


ক্ষমতাশালীদের ছত্রছায়া থাকা অনেক দুস্কৃতিকারী রেহাই পেয়ে যায়। ফলে সমাজে নগ্ন ঘটনার পুনারাবৃত্তি হয়। এ ঘটনা যেন তেমনটা না হয় সেটা সকলের প্রত্যাশা।


দুস্কর্মকারীদের গ্রেফতার চলছে। তারপরও ভারতবাসীর প্রশ্ন, কারা তৈরি করে এই জেবিসিদের? যুবক-যুবতীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের সঠিক বিচার কি তারা পাবে? কোন স্পর্ধায় অঞ্চলের রাজনৈতিক সর্বোচ্চ পদে থাকা ব্যক্তি মেয়েটিকে দোষারোপ করে?

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Click to Go Up
    error: Content is protected !!