অম্বিকা কুন্ডু, কলকাতা
আজ ১৪ই সেপ্টেম্বর, দুপুর ১টা নাগাদ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্ণারত জুনিয়র ডাক্তারদের ক্যাম্পে এসে উপস্থিত হন। এবং সেখানে এসে উনি ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ করেন কর্ম বিরতি বন্ধ করে কাজে ফিরে আসার জন্য। জুনিয়র ডাক্তারদের ক্যাম্পে এসে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেন “আমি যখন এসেছি, আমি কাজ করব। স্লোগান দিন, আমার আপত্তি নেই। কিছু কথা বলব, ধৈর্য ধরে শুনুন। সেফটি, সিকিওরিটি বারণ থাকা সত্ত্বেও আমি ছুটে এসেছি কারণ আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। আমার পোস্টটা বড় কথা নয়, মানুষের পোস্টই বড় কথা। কাল সারারাত ঝড়জল হয়েছে। আপনারা কষ্ট পেয়েছেন যেমন, আমিও সারারাত ঘুমাতে পারিনি। আমারও কষ্ট হয়েছে। আপনারা যেভাবে বসে রয়েছেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। আজ ৩৩-৩৪ দিন, আমিও রাতের পর রাত ঘুমাইনি। আপনারা রাস্তায় থাকলে, আমাকেও পাহারাদার হিসেবে জেগে থাকতে হয়। এত ঝড়বৃষ্টি, দুর্যোগের মধ্যে আপনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আর কষ্ট না করে, আপনারা যদি কাজে ফিরতে চান, আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের দাবিদাওয়া, আমি কথা বলে, সহানুভূতির সঙ্গে দেখব। আমি একা সরকার চালাই না। মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, ডিজি রয়েছেন। আপনাদের দাবি নিয়ে আমি ভাবব। যদি কেউ দোষী হন, তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক। সিবিআই-কে অনুরোধ করব, তাড়াতাড়ি বিচার হোক। তিন মাসের মধ্যে ফাঁসি হোক, আপনাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে অনুরোধ করছি।
আপনাদের কাছে আবেদন, আমাকে একটু সময় দিন। আমি ব্যাপারগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করব। আমার উপর আস্থা থাকলে, আমি কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। যদি কাউকে দোষী পাই, সিদ্ধান্ত নেব। এত কষ্টের মধ্যে ভিজছেন আপনারা। আপনাদের পরিবার-পরিজন রয়েছেন। অনেক রোগীও মারা যাচ্ছেন। আপনারা আমাদেরই ঘরের ভাইবোন। আপনারা কাজে যোগ দিন। আপনাদের প্রতি আমি কোনও অবিচার করব না। হাসপাতালের উন্নতি, পরিকাঠামো, সব কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি এবং করব। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিতে, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, মাল্টি সুপার হাসপাতালে যত রোগী কল্যাণ সমিতি আছে, তাতে অধ্যক্ষদের চেয়ারম্যান করব, জুনিয়র ডাক্তাররাও সদস্য হবেন, সিনিয়র ডাক্তারও থাকবেন, নার্সও থাকবেন, একজন জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর জি কর মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলাম। বাকি সব মেডিক্যাল কলেজেরও ভেঙে দিলাম। নতুন করে তৈরি করব। আমার উপর ভরসা থাকলে, দোষীরা শাস্তি পাবেন। দোষীরা কেউ আমার শত্রু বা বন্ধু নন। আপনারা যাদের বন্ধু ভাবছেন আমার, আমি তাদের চিনি না। আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে আসেন তাঁরা। চূড়ান্ত হয়ে আসে আমার কাছে। মাত্র একমাস যারা এসেছে, তাদের কেউ যদি খুন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে, সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি, নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন। আপনারা কাজে ফিরুন। আপনারা আমার ভাইবোন। আমি কোনও পদক্ষেপ করব না। আমি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ নই, ওরা এসমা করে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন। কোনও ডাক্তার, কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা। আপনারা অনেক কাজ করেন। আপনাদের আমাদের প্রয়োজন। আপনারা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। আমি যখন সহযোদ্ধা হিসেবে আপনাদের ধর্নামঞ্চে এসেছি, ভরসা রাখলে, আস্তে আস্তে আমি সব করে দেব। একদিনে সব হয় না, আমাকে একটু সময় দিন। দুর্নীতির কিছু, কোনও টেন্ডার আজ পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি। রোগী কল্যাণ সমিতি কী কাজ করে, আমি জানি না। আমার আওতায় পড়ে না। আপনাদের অভিযোগ থাকলে অবশ্যই পদক্ষেপ করব। বিনা কারণে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না। তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই সাজা দেব। মনে রাখবেন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ১৭ তারিখেও শুনানি আছে। আমি চাই না, কোনও ক্ষতি হোক আপনাদের। আমি মুখ্যমন্ত্রী নই, আপনাদের দিদি হিসেবে বলতে এসেছি।
আপনাদের আন্দোলনের সমব্যথী এবং সমসাথী। আগেও সমস্যার সমাধান করেছি। আবারও চেষ্টা করব। আমাকে সময় দিন একটু।” ভিড় থেকে ‘বিচার চাই’ স্লোগান উঠলে মমতা বলেন, “নিশ্চয়ই বিচার হবে। সিবিআই-কে বলুন। আমি জোর করতে পারি না। আমি আবেদন করে গেলাম। আপনাদের ধর্নামঞ্চে আসার পর যদি মনে করেন, আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। আমার এটা শেষ চেষ্টা। করে গেলাম আপনাদের জন্য বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দিলে বিচার পাবেন। অবিচার হবে না।”