পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ নবারুণ ভট্টাচার্য্য মানেই বোধহয় বাঙালির বুকে বারুদ। বাঙালিকে প্রতিবাদের ভাষা শিখিয়েছেন তিনি। নরমসরম বাঙালিকে জ্বলে উঠতে শিখিয়েছেন। তিনি সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে সমাজের অন্ধকার দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনিই তো জোড় গলায় বলতে পারেন মানুষের লোভ স্বার্থপরতা হিংসার কথা।
সমাজের ভালোমানুষদের মুখে সপাটে একটা চড় কষাতে পেয়েছে একমাত্র তার কলম। সেই নির্ভীক মানুষটার ৭৫তম জন্মদিন আজ। শুধুমাত্র মুখে শ্রদ্ধা জানালেই এই মানুষটাকে শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব নয় তার মত হয়ে ওঠা, বা কঠিন সত্যকে স্বীকার করতে শিখলেই বোধহয় সেই মানুষটাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়ে যাবে। র যদি সত্যি কোনদিন বাঙালি সেই রকম হয়ে উঠতে পারে একমাত্র সেদিনই তার কলম স্বার্থক হবে।
‘ফ্যাত ফ্যাত সাই সাই…’ এই শব্দবন্ধ টার সাথে পরিচয় নেই এমন বাঙালি খুজে পাওয়া বিরল। আদপে শব্দটি ঘুড়ি ওড়ার শব্দ, কিন্তু এই শব্দটিকে মানুষের মনে গেথে দিয়েছেন এই একটি মানুষ। মানুষের একটি অন্যরকম দিকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি ‘ফ্যাতারু’র মাধ্যমে।
মানুষকে এক ব্যর্থাত্মক সম্মানে সম্মানিত করেছেন ফ্যাতারু আখ্যা দিয়ে। কিন্তু এই ‘ফ্যাত ফ্যাত সাই সাই…’ এক মন্ত্রের মত কাজ করে মানুষের জীবনে। মানুষ চাইলে নিজের লোভ লালসা নিকৃষ্ট দিক গুলো ভুলে আকাশে উড়তে তাই শিখিয়েছেন তিনি। উড়তে পারে মানে? মানুষের কি ডানা গজাবে তা নয় আকাশের মত মুক্ত আকাশের মত বিস্তৃত আর আকাশের মত উদার হতে পারাই বোধহয় উড়তে পারা।
না শুধু ফ্যাতারু তার একমাত্র সৃষ্টি নয়। ‘কাঙাল মালসাট’, ‘হারবার্ট’, ‘মহাজনের আয়না’, ‘রাতের সার্কাস’ সব কটি সৃষ্টিই তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল। মানুষটার মুক্ত কণ্ঠের ডাক ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’ শুনে গায়ে কাঁটা ওঠে না এমন বাঙালি পাওয়া যাবে কি? ২০১৪ সালে ক্যান্সার তাকে জীবন থেকে মুক্ত করে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু মুক্ত তিনি হননি। তিনি সমস্ত প্রতিবাদী নির্ভীক বাঙালির বুকে আবদ্ধ হয়ে আছেন এবং থাকবেন। যেদিন সব মানুষ তার মত ভাবতে পারবে সেদিন তিনি মুক্ত হবেন সেদিন তাকে কিছু বাঙালির বুকে আটকে থাকতে হবেনা। সেদিন তিনি মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে উড়ে বেরাবেন সাড়া আকাশ জুড়ে।