পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ লিঙ্গ পরিবর্তন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ভীষণ রকম উন্মুক্ত গোপনীয়তার মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই জানে কিছু মানুষ তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করছে কিন্তু সমাজ তাকে মেনে নিতে পারছে না। এখন বহু মানুষ নিজের জন্মগত লিঙ্গকে ছেড়ে মানসিক ভাবে যে লিঙ্গকে গ্রহণ করেছেন সেই লিঙ্গে রূপান্তরিত হচ্ছে। ছেলে থেকে মেয়ে হয়েছে এমন বহু মানুষ ঘুরে বেরাচ্ছে কাজ করছে, নিজের জায়গায় যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। মেয়ে থেকে ছেলে হওয়ার গল্পটা যদিও কিছুটা কম। এই সকল মানুষকে অন্যান্য ‘স্বাভাবিক’ মানুষ বরাবর বাকা চোখেই দেখে, তাদের খবর পায় কজন? সম্প্রতি সুচেতনা ভট্টাচার্য বলে একটি মেয়ে লিঙ্গ পরিবর্তন করে সুচেতন হয়েছেন, তাই নিয়ে লেখালেখিতে ভরে গেছে সমাজ। আসলে দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য জনক ভাবে তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কন্যা।
সংবাদ মাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যম হয়ে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে সুচেতনের নাম। শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বলেই এত আলোচনা? প্রতিটা সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কন্যা লিঙ্গ পরিবর্তন করছেন। কেন সুচেতনা ভট্টাচার্য তার নিজের পরিচয় নেই? কি হত যদি তার পিতা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষ হতেন? সুচেতনা বারবার বলছেন তার বাবা মাকে এর মধ্যে না টানার কথা, কিন্তু তিনি বললেই কি মানুষ শুনচ্ছে?
অধ্যাপিকা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আজকে বেশ পরিচিত। তিনি নিজে একজন রূপান্তরিত মহিলা। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে এই বিষয়ে বলেন, ‘আমার বাবা তো মুখ্যমন্ত্রী ছিলনা। নাহলে আমার বাবাকেও টানাটানি করা হত।‘ আজকে একুশ শতকে দাঁড়িয়েও মানুষ ছেলে মেয়ের মধ্যে একটি বিস্তর ফারাক রেখা টেনে রেখেছে। সমাজে পুরুষরা ওপরতলার মানুষ। অধ্যাপিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে সুচেতনা পুরুষ হয়ে পদোন্নতি হয়েছে, তাই তার লড়াইটা বাকি যারা পুরুষ থেকে মহিলা হয়েছে তাদের থেকে কম।
নারী থেকে পুরুষ হোক বা পুরুষ থেকে নারী তাদের উভয়েরই লড়াইটা খুব কঠিন। পরিবার পরিজন থেকে শুরু করে সমাজ সকলের সাথে লড়তে হয় তাদের। আর জন্মের পর থেকে নিজের সাথে নিজের লড়াই তো রয়েছেই। সেই সমস্ত লড়াই ভয় বাকা চোখের উপেক্ষা সবটা কাটিয়ে যে অল্প কিছু মানুষ নিজেদের জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছেন তাদের দেখে ভবিষ্যতে নিজের সাথে লড়াই করা এমন বহু মানসিক লিঙ্গের মানুষ সমাজের সাথে লড়াই করার সাহসটা পাবে প্রাইড মান্থে দাঁড়িয়ে এমনটাই আশা করা যাচ্ছে।